১০০ সেতু উদ্বোধনে জোর প্রস্তুতি সওজের

প্রকাশিতঃ 9:51 pm | October 25, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

সপ্তাহ দুয়েক আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন এক সঙ্গে দেশের ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি অর্থায়নে ছোট ও মাঝারি ধরনের ১০০টি সেতু উদ্বোধনের জোর প্রস্তুতি শুরু করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। আগামী ২৯ অক্টোবর উদ্বোধনের সম্ভাব্য দিন ধরেই এগোচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

ওইদিনই এসব উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে নির্মিত হয়েছে এই ১০০টি সেতু। এসব সেতুর মধ্য কোনো কালভার্ট নেই। সব সেতুর নিচ দিয়েই নৌযান চলাচল পথ রয়েছে। এসব সেতু চালু হলে ভ্রমণের সময় কমে আসবে। সড়ক যোগাযোগ হবে আরও সহজ ও গতিময়। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও রাখবে প্রভাবকের ভূমিকা।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ‘আগামী ২৯ অক্টোবর সেতুগুলোর উদ্বোধনের সম্ভাব্য দিন বিবেচনায় রেখে কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি।’

জানা যায়, উদ্বোধন হতে যাওয়া সেতুগুলোর মধ্যে ১০৩ মিটার এবং ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সওজের ঢাকা জোনের অধীনে দুটি সেতু রয়েছে। দুটি সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ময়মনসিংহ জোনে ছয়টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। চট্টগ্রাম জোনে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকায় নির্মিত হয়েছে ৪৫টি সেতু। কুমিল্লা জোনে একটি সেতু হয়েছে ১১ কোটি টাকায়। সিলেট জোনের অধীনে ২৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকায় নির্মিত হয়েছে ১৭টি সেতু। গোপালগঞ্জ জোনে পাঁচটি সেতু হয়েছে, যেগুলোর নির্মাণ ব্যয় ৩২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বরিশালে ১৪টি সেতু নির্মিত হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। রাজশাহী জোনের পাঁচটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর রংপুর জোনে পাঁচটি সেতু নির্মিত হয়েছে ৪৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে। এ রকম ১০০টি সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৮৭৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

সূত্র মতে, সওজের ঢাকা জোনের একটি সেতু নির্মিত হয়েছে মানিকগঞ্জের ঘিওরে, অপরটি গাজীখালি-২ নামে। ময়মনসিংহ জোনের সেতুগুলো হচ্ছে শেরপুরের শিমুলতলী সেতু, পোড়াদহ সেতু, ময়মনসিংহের মল্লিকবাড়ী সেতু, নেত্রকোনার চুংগিরপুল সেতু, কাটাপাহাড় সেতু ও লক্ষ্মীপুর সেতু। চট্টগ্রাম জোনে রয়েছে দোহাজারির কালারপুল সেতু, বরকল সেতু, খাগড়াছড়ির লোগাং সেতু, ধুরুং খাল সেতু, পুজগাং বাজার সেতু, গোমতী সেতু, জুর্গাছড়ি সেতু, সোনাইপুল সেতু, পাবলাখালী সেতু, বাঘাইছড়ি সেতু, বাবুরোপোড়া সেতু, পেরাছড়া সেতু, গাছবান সেতু, কুকিছড়া সেতু, কুরাদিয়াছড়া সেতু, লতিবানছড়া সেতু, খাগড়াপুর সেতু, ঠাকুরছড়া সেতু, হাতিছড়া সেতু, সিন্দুকছড়ি সেতু, পঙ্খিমূড়া সেতু, দেওয়ানছড়া সেতু, পতেঙ্গাছড়া সেতু, নাকাপা সেতু, জারুলছড়ি সেতু ও বান্দরবানের জামছড়ি সেতু, খাগড়াছড়ির চংড়াছড়ি সেতু, মুসলিমপাড়া সেতু, পাতাছড়া সেতু, ধুমনীঘাট সেতু, যৌথখামার সেতু, বড়পেড়া সেতু, ছোটনালা সেতু, মঘাইছড়ি সেতু, লোগাংবাজার সেতু, বুজ্যোনাল সেতু, মগমারাছড়া সেতু, পাকুজ্যেছড়ি সেতু, দুল্যাতলি সেতু, ভাইবোনছড়া সেতু, কলাবাগান সেতু, তবলছড়ি সেতু, কৃষি গবেষণা সেতু ও হাতিমারাছড়া সেতু। কুমিল্লা জোনের অধীনে নির্মিত সেতুটির নাম কালারপুর সেতু। এটির অবস্থান নোয়াখালীতে।

বরিশাল জোনের অধীনে ঝালকাঠিতে তালগাছিয়া সেতু, সাতানী সেতু, কাঠালিয়া সেতু, কচুয়া সেতু, বরিশালের কলাতলা সেতু, তালুকদারহাট সেতু, সুন্দরকাঠী সেতু, চন্দ্রমোহন সেতু, পিরোজপুরে কাটাপোল সেতু, শিয়ালকাঠি সেতু, মাহমুদকাঠি সেতু ও সঙ্গীতকাঠি সেতু, পটুয়াখালীর দশমিনা কলেজ সেতু ও চন্দ্রপাড়া সেতু। রাজশাহী জোনের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছে ভবানীগঞ্জ সেতু ও ত্রিমোহনী সেতু, নওগাঁর আহসানগঞ্জ সেতু, পাবনার মহিষাখোলা সেতু ও নাটোরের বাজে হালভী সেতু। রংপুর সড়ক জোনের অধীনে দিনাজপুরে নির্মাণ করা হয়েছে কাহারোল সেতু, কুড়িগ্রামে রায়গঞ্জ সেতু, বগুড়ায় বোয়ালকান্দি সেতু ও হোসেনপুর সেতু, গাইবান্ধায় সরাই সেতু।

সিলেট জোনের অধীনে রয়েছে সুনামগঞ্জের রাণীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু, দাঁড়াখাই সেতু, কাটাখাল সেতু, আক্তাপাড়া সেতু, নাদামপুর সেতু, রহমতবাগ সেতু, কলকলিয়া সেতু, পেপারমিল সেতু, ঘরগাঁও সেতু, কোন্দানালা সেতু, কুশিলা সেতু, তকিপুর সেতু, হাসনাবাদ সেতু, টেংগারগাঁও সেতু, মাধবপুর সেতু, লক্ষ্মীবাউর সেতু ও নৈনগাঁও সেতু। গোপালগঞ্জ সড়ক জোনের অধীনে রাজবাড়ীতে গাইজারগাড়া সেতু, হরাই সেতু, হুলাইল সেতু, মাদারীপুরে সেনেরবাড়ী পিসি গার্ডার সেতু ও শরীয়তপুরে বুড়িরহাট সেতু। এখন এসব সেতু যান চলাচলের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সেতুগুলো উদ্বোধন করতে পারেন।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা সেতুগুলো পরিদর্শনে আটটি পরিদর্শক টিম তৈরি করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। প্রতিটি দল অঞ্চলভিত্তিক সেতুগুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এখন প্রধানমন্ত্রী তারিখ দিলেই একসঙ্গে সব সেতুর উদ্বোধন করা হবে।

প্রায় দু’সপ্তাহ আগে নড়াইলের মধুমতী সেতু উদ্বোধনের সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চলতি মাসে আরো ১০০ সেতু উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। তিনি ওই সময় বলেন, ‘নেত্রী, আমরা অপেক্ষা করছি, এখন টুকটাক কিছু কাজ বাকি আছে; ১০০টি সেতু একসঙ্গে আপনি উপহার দেবেন। বাংলাদেশের জনগণ অলমোস্ট রেডি। চলতি মাসে ১০০টি সেতু প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে উপহার দেবেন। সেই শুভদিনের অপেক্ষায় আমরা আছি।’

কালের আলো/এসবি/এমএম