মানুষের আস্থা, প্রত্যাশা এবং ভালোবাসার জায়গা ধরে রাখতে নির্দেশনা আইজিপির

প্রকাশিতঃ 6:35 pm | October 16, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

মানুষের আস্থা, প্রত্যাশা এবং ভালোবাসার জায়গা ধরে রাখতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম।

তিনি বলেছেন, নিজেদের দায়িত্বশীলতা দিয়ে থানাকে সবার আশ্রয়স্থল বানাতে হবে। সবাই ৯টা-৫টা কাজ করলেও থানার দরজা কখনও বন্ধ হয় না। প্রত্যাশা তৈরির পেছনে আপনারা যেভাবে অবদান রেখেছেন, ভবিষ্যতেও মানুষের আস্থা, প্রত্যাশা এবং ভালোবাসার জায়গা ধরে রাখতে হবে।

রবিবার (১৬ অক্টোবর) রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আইজিপি এসব কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

পুলিশপ্রধান বলেন, থানাকে জনগণের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। থানার দরজা কখনো বন্ধ হয় না, ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। থানায় আগত মানুষের কথা সহানুভূতির সাথে শোনতে হবে। পুলিশের প্রতি জনগণের যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি আরও বাড়াতে হবে।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পুলিশের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। আমরা কাজ করছি বলেই আমাদের কাছে জনগণের আশার মাত্রা আকাশচুম্বী হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমাদেরকে সচেষ্টা থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্য স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন বলেই আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদসহ অন্যান্য অপরাধ দৃঢ় হস্তে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আত্মপুষ্টিতে ভুগলে হবে না, এজন্য আরো কাজ করতে হবে। আমরা জনগণের যে আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি তা ধরে রাখতে হবে।

আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে সারা বিশ্ব যেভাবে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ পুলিশ যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, প্রতিবাদসহ গার্মেন্টস সেক্টর তথা সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। যার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। এ কারণে দেশ ঈর্ষণীয় উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

করোনাকালে মানবিকতার চরম বিপর্যয়ের সময় পুলিশের অনন্য সাধারণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, করোনায় কেউ মারা গেলে আত্মীয়-স্বজন এমনকি মা-বাবাও সন্তানের লাশ ফেলে চলে গিয়েছিলেন, তখন পুলিশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে । পুলিশ নিজের জীবনকে তুচ্ছ গণ্য করে, নিজের জীবন উৎসর্গ করে মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য পুলিশ মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করেছে, ভালবাসা পেয়েছে। মানুষের এ শ্রদ্ধা-ভালবাসা ধরে রাখতে হবে, মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হবে।

পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক সময় পুলিশের মামলা তদন্তের সফলতা ছিল সোর্স নির্ভর। এখন বৈজ্ঞানিক কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশ অপরাধ উদঘাটন করছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মামলার রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে। ফলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থাও বেড়েছে।

আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ৯৯৯ এ প্রতিদিন প্রচুর কল আসে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ আমাদের সেবা পেয়ে থাকেন। ৯৯৯ জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের একটি সার্ভিস পুলিশকে দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে বলেই বর্তমানে দেশে স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এ কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা পার্শ্ববর্তী অনেক দেশকে পেছনে ফেলে বহু সামাজিক সূচকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছি।

আইজিপি আরও বলেন, ট্রাফিক পুলিশ অবিরাম কষ্ট করে। মানুষ ট্রাফিক পুলিশের সমালোচনা করে। ৯৯৯ নম্বরের কারণে মানুষ এখন বিশ্বাস করে—পুলিশের কাছে গেলেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে।

এর আগে আইজিপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাঁর প্রতি আস্থা রেখে তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশের মত একটি পেশাদার বাহিনীর প্রধান করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

আইজিপি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগের বাঙালি পুলিশ সদস্যরা সামান্য ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল দিয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বাধীন করতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ভালো কাজ করলে সারা দেশ ভালো চলে। ঢাকা মহানগরে কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে ডিএমপির অফিসাররা তা উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হন না। যেকোনও পরিস্থিতিতে ইস্পাত কঠিন প্রত্যয় নিয়ে ডিএমপি কাজ করবে।

আইজিপির বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইজিপি মহোদয় স্বচ্ছ ইমেজের একজন মানুষ। এমন একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি করায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপির প্রতিটি সদস্য ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।

অনুষ্ঠানে আইজিপিকে চৌকস, পেশাদার ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পুলিশ অফিসার আখ্যা দিয়ে ডিএমপির কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য প্রদান করেন।

এর আগে মোটরকেড ও সুসজ্জিত অশ্বারোহী পরিবেষ্টিত হয়ে আইজিপি সংবর্ধনাস্থলে এসে পৌঁছান। একটি চৌকস পুলিশ দল তাঁকে গর্ড অব আনার প্রদান করেন। ডিএমপি কমিশনার ফুল দিয়ে আইজিপিকে অভ্যর্থনা জানান।

এর আগে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম