করোনা দুর্যোগে অসহায়দের পাশে জনপ্রতিনিধিরা, দায়িত্বশীল ভূমিকায় সন্তোষ

প্রকাশিতঃ 5:58 pm | July 19, 2021

রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো :

গত দেড় বছর যাবত মৃত্যুর মোহর হাতে নিয়ে চলছে জীবন। ভয় আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা। করোনার বিষে নীল চারপাশ। হাফ ছেড়ে বাঁচার জো নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পরিস্থিতি আরও ভীতিকর পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ত্রাহি অবস্থা হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, দিনমজুর ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের।

করোনা দুর্যোগে এসব অসহায় মানুষের পাশে অনেকেই মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সারা দেশের মতো ময়মনসিংহেও সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ উদ্যোগে অসহায়দের সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে সেই শুরু থেকেই।

অসহায় ও কর্মহীন হয়ে মানুষের পাশে খাদ্যসামগ্রী, সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই মাঠে কাজ করছেন মানবতার কল্যাণে। আবার কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। কোন কোন জনপ্রতিনিধি চরম বিপদের এ সময়ে রীতিমতো নিজেকে অন্তর্ধাণ করেছেন।

ময়মনসিংহ-১
সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১ আসন। এ আসনের সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে ছিলেন। হালুয়াঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম ও ধোবাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিমও একইভাবে মাঠে সক্রিয় ছিলেন।

ময়মনসিংহ-২
ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-২ আসন। এ আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এখন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন ভাষা সৈনিক প্রয়াত শামসুল হকের জ্যেষ্ঠ পুত্র শরীফ আহমেদ। কারোনায় কর্মহীন ও দুস্থদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে সরব অবস্থানে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও সামগ্রিক বিষয়াদি সমন্বয় করেছেন। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেলও সঙ্কটে তৎপর রয়েছেন।

ময়মনসিংহ-৩
প্রবীণ সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন করোনায় দুস্থ মানুষের জন্য সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেগুলো নিজ নিজ এলাকায় বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খানও সাধ্যমতো কাজ করেছেন।

ময়মনসিংহ-৪
জেলার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ আসনটিতে সংসদ সদস্য বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। ময়মনসিংহের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই রাজনীতিক শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে দু:স্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মোবাইল ফোনে অনেক বিষয়াদি মনিটরিং করছেন।

এখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মুখ উজ্জ্বল করেছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো.ইকরামুল হক টিটু। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগেই সবার আগে অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন মেয়র। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে রেকর্ডসংখ্যক দরিদ্র, দিনমজুর ও কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলমান করোনা যুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে অবস্থান করে মাননীয় মেয়র ইকরামুল হক টিটু বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। বিপদে পাশে থাকার মধ্যে দিয়ে নিজের মানবিকবোধের পরিচয় দিয়েছেন। মহানুভবতার মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে অনুকরণীয় এক উদাহরণও তৈরি করেছেন।’

ময়মনসিংহ-৫
এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজী খালিদ বাবু সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। তিনিও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুস্থদের পাশে ছিলেন সংক্রমণের প্রথম থেকেই। মন্ত্রণালয় পরিচালনার পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদের দু:খ-সুখেও মানবিক মনের পরিচয় দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

ময়মনসিংহ-৬
টানা ৬ বারের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন অ্যাডভোকেট। বয়সের কারণে করোনা সঙ্কটে মাঠে সরব না থাকলেও তাঁর পক্ষে সার্বক্ষণিক সাধারণ মানুষের দোরে দোরে ছুটেছেন তাঁর সন্তান, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ইমদাদুল হক সেলিম অ্যাডভোকেট। অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্য ও সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করতে আগে থেকেই তাঁর পদক্ষেপ ছিলো ইতিবাচক।

ময়মনসিংহ-৭
স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার দু’জনই করোনা দুর্যোগে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষকে খাবার ও অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জুয়েল সরকারও মাঠে সক্রিয় ভূমিকাই পালন করেছেন।

ময়মনসিংহ
করোনা দুর্যোগে সরকার দল আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় দু:স্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেও ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম একেবারেই লাপাত্তা। মাঠে একেবারেই তাকে দেখা যাচ্ছে না।

সব মাধ্যম থেকেই হারিয়ে গেছেন। একজন সংসদ সদস্য হয়ে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও চলমান সঙ্কটে যেভাবে ভূমিকা রাখার কথা ছিল সেটি না থাকায় উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে তাকে নিয়ে চরম ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

ফখরুলের এমন অন্তর্ধানকে অনেকেই তাঁর চিরায়ত ‘রাজনৈতিক স্টাইল’ হিসেবেই মনে করছেন। যদিও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদী দাবি করেন, ‘গত রমজান থেকেই তিনি (সংসদ সদস্য) পারিবারিক কাজে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই ভার্র্চুয়ালি যুক্ত থেকেই বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশেই স্থানীয় জাতীয় পার্টি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’

জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুমন বলেন, ‘আমি সাধ্যমতো দু:স্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু গত দুই বছরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম মাত্র দুইবার এলাকায় এসেছেন। গত ৪ থেকে ৫ মাস যাবত তিনি আমেরিকায়। তিনি মাঠে থাকলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতেন।’

ময়মনসিংহ-৯, ময়মনসিংহ-১০ ও ময়মনসিংহ-১১
নান্দাইল আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন তুহিন, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল ও ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন ধনু, ভালুকা উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ কর্মহীন, গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে নানাভাবেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা সরকারি সহায়তার পাশাপাশি নিজস্ব উদ্যোগে দু:স্থ ও অসহায় মানুষের আহারের জোগান দিয়েছেন। তাদের দায়িত্বশীল আচরণে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিজ নিজ এলাকার ভোটাররা।

কালের আলো/আরআই/এসআর