মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে জাঙ্গাল গ্রামের ২০ পরিবার

প্রকাশিতঃ 10:46 am | June 20, 2021

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা, কালের আলো:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পেতে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২০ পরিবারের গৃহহীন ও দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দুই শতক জায়গাসহ একটি পাকা ঘর দেয়া হচ্ছে।

রোববার (২০ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরের চাবি বুঝে পাবেন এসব পরিবার। এদিন দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশের ৫৩ হাজার ৩৪০টি হতদরিদ্র ও গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এই পাকা ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের জাঙ্গাল গ্রামের ৯০ বছর বয়সী জিল্লুর মিয়া। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় নিজের ঘর জমি পেয়ে বেশ খুশি জিল্লুর। বললেন, তাইনর বাপে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) টিনের ঘর দিচিল, তাইনে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দিচে পাকা ঘর। তাইনর বাপ মানসেরে কইতো, ছনের ঘরে থাকবা ক্যান? টিনের ঘরে থাকবা তোমরা। আর তাইনে কয় আমার মানুষ থাকবো পাকা ঘরে।’

শুধু জিল্লুর-ই নন, নতুন ঘরের চাবি পেয়ে বেশ খুশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া আরও ২০ গৃহহীন পরিবার।

তারা জানালেন, এ প্রকল্পের ফলে জাঙ্গাল গ্রামের এই ২০ পরিবারের মাথা গোঁজার ঠিকানা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এরই মধ্যে ঘরগুলোর নির্মাণকাজও শেষ হয়েছে। যারা ঘর পাচ্ছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে বেশিরভাগকে দেখা গেলো নতুন ঘরে কিংবা আশপাশেই। আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর না হলেও এরইমধ্যে নিজের স্বপ্নের ঠাঁইটুকু ঘুরে-ফিরে দেখছেন। মনে মনে হয়তো নানান স্বপ্নের বুননে সাজিয়ে তুলছেন ঘরের প্রতিটি কোণা।

তাদের সঙ্গে আলাপকালে মিললো ঠিকানা পাওয়ার উচ্ছ্বাস আর প্রাপ্তির ভালো লাগা। জিল্লুর মিয়া স্থানীয় বাজারে একসময় ডিম বিক্রি করতেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ জিল্লুর এখন কায়িক শ্রম দিতে পারেন না। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজকে আমার এই আনন্দ আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কাউকে বোঝাতে পারবো না।

তিনি জানান, স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। সংসারের টানাপোড়েনে পাকা ঘর তৈরির স্বপ্ন দেখেননি কখনই। আর ভাড়া বাসাতেও থাকার সামর্থ্য হয়ে ওঠেনি। কখনও ছনের ঘর, কখনও পাটের হোগলা দিয়ে ঘর বানিয়ে ফুটপাতেই কেটেছে জীবনের বেশিরভাগ সময়।

জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে শেখ হাসিনার বদৌলতে পাকা ঘরে থাকতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উপকারের কথা কখনও ভুলবো না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের জন্য দোয়া করার নসিয়ত তার,

শেষ বয়সে এসে নিরাপদ, আরামদায়ক আবাস পাওয়ার আনন্দের ঝিলিক দেখা গেল জিল্লুরের স্ত্রী মোছা. আলমচার চোখে-মুখে।

পাশের আরেক ঘরে দেখা মিললো তিন কিশোরীর। এরইমধ্যে নতুন ঘরে বিছানাও পেতেছে তারা। বিছানার ওপরেই বসে তারা গল্প করছিল। তাদের মধ্যে সবার বড় জনের নাম অর্ণা রানী। সে স্থানীয় রামকানাই হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

তার ছোট বোন অন্বেষা একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। নতুন ঘর দেখতে এসেছে অন্বেষার বান্ধবীও। এর আগে ভাড়া বাসায় থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। তবে সেখানে বিদ্যুতের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এবার নিজেদের ঝকঝকে নতুন বাসায় বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে। এই আনন্দে আত্মহারা তারা।

অর্ণা বললো, আমাদের এখন নিজেদের পাকা ঘর আছে, বিদ্যুৎও আছে। ভাবতেই অন্য রকম লাগছে। আমরা এখন থেকে বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করতে পারবো, টেলিভিশন দেখতে পারবো। খুবই আনন্দ লাগছে।

তাদের মা বিথিকা রানী বলেন, ভাড়া বাসায় অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। একটি নিজের ঘর পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। সব সুযোগ-সুবিধা আছে এই ঘরে। মেয়েদের নিয়ে নিজেদের পাকা ঘরে নিরাপদে থাকবো। খুবই ভালো লাগছে।

জাঙ্গাল গ্রামে স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছেন শফিকুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালকও। তিনি জানালেন, স্ত্রী ঝর্ণাকে নিয়ে একসময়ে যেনতেন উপায়ে কেটেছে জীবন। কখনও ফুটপাতে, কখনও বস্তির ভাড়া ঘরে। নিজের ঘর বলতে ছিল না কিছুই। পাকা ঘর পেয়ে বেঁচে থাকার সাহস বেড়েছে। নিজের একটা ঠিকানা হয়েছে। এতে জীবনে নিরাপত্তা, সম্মানবোধ অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

শফিক বলেন, আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী। ঘর পেয়েছি, জায়গা পেয়েছি, পেয়েছি বিদ্যুৎও। শফিকের স্ত্রী ঝর্ণা বলেন, শেখ হাসিনার জন্য প্রাণভরে দোয়া করি।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় সারাদেশে প্রায় ৭০ হাজার হতদরিদ্র ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথম ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক হাজার ৯১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পায় এ উপহার। দ্বিতীয় ধাপে মোট ৬৮১ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর।

‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যাদের জমি নেই, ঘর নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি খাস জমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

সব ঘরই একই নকশায় করে দিচ্ছে সরকার। দুই শতাংশ জমির ওপর দুই কক্ষের প্রতিটি আধা পাকা ঘর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা।

কালের আলো/বিএস/এএম

Print Friendly, PDF & Email