দেশসেরা গলফারদের মিলনমেলায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের ক্রীড়াঙ্গণের অধ্যায় সেনাপ্রধানের জবানীতে

প্রকাশিতঃ 11:09 pm | April 09, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা থেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক। এই পরিচয়ের বাইরেও ফুটবলেও পারদর্শী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অধিনায়কত্ব করেছেন ঢাকার ফুটবলের বনেদী ক্লাব ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের। জিতিয়েছিলেন শিরোপাও। তাঁরই উত্তরসূরী বড় ছেলে শেখ কামালও ছিলেন অতুলনীয় এক ক্রীড়া সংগঠক। দেশের ক্রীড়াঙ্গণকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন।

বাংলাদেশের সেরা অপেশাদার বা অ্যামেচার গলফারদের মিলনমেলায় এভাবেই বঙ্গবন্ধু পরিবারের ক্রীড়াঙ্গণের অধ্যায় মোটাদাগেই উপস্থাপন করেন সেনাবাহিনী প্রধান ও বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ।

শুক্রবার (০৯ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসস্থ কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে চার দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস গলফ ইভেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক ও বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের ধ্রুপদী ছন্দে তুলে ধরেন জেনারেল আজিজ।

বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলে ঘুমন্ত বাঙালিকে বঙ্গবন্ধুই উদ্বুদ্ধ করেন স্বাধীনতাসংগ্রামে, এই সত্য-সুন্দর অনবদ্য উচ্চারণের পাশাপাশি দেশসেরা অপেশাদার বা অ্যামেচার গলফারদেরও সামনের দিনগুলোতে দেশের জন্য সুনাম-সুখ্যাতি বয়ে আনতেও উৎসাহিত-উজ্জীবিত করেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সূচিত হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম
সেনাবাহিনী প্রধান ও বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ নিজের বক্তব্যের শুরুতেই সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে, আজ আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সূচিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। যার বলিষ্ঠ আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দেশের আপামর জনসাধারণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছিল। তার জাদুকরী নেতৃত্ব ও কৃতিত্বের ফলে বাংলাদেশ তথা বাঙালি জাতি আজ বিশ্বের বুকে একটি আত্নমর্যাদাশীল দেশ ও জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

জেনারেল আজিজ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদ ও বীর মু্িক্তযোদ্ধাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বঙ্গবন্ধু নিজেও ছিলেন একজন ক্রীড়াবীদ
সেনাপ্রধান বলেন, ‘এবারের বাংলাদেশ গেমস পূর্ববর্তী সংস্করণগুলোর চেয়ে বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে এই অর্থে যে ২০২১ সালে আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি এবং একই সাথে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু নিজেও ছিলেন একজন ক্রীড়াবীদ। ১৯৪০ সালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবের ফুটবল দলের একজন কৃতি খেলোয়াড় ছিলেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ঐতিহ্য ও সম্পৃক্ততা ক্রীড়াঙ্গণের সকল মহলেই অত্যন্ত সুপরিচিত। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল স্বাধীনতা ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত (মরণোত্তর)। প্রতিভাধর ক্রীড়াবীদ ও সংগঠক ছিলেন। আবাহনী ক্রীড়া চক্র তার সাংগঠনিক প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর। শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) কৃতি অ্যাথলেট ছিলেন।

বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোয়িশেন আয়োজিত নবম বাংলাদেশ গেমস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০। এই গেমসে অলিম্পিক, নন অলিম্পিক এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন কর্তৃক অনুমোদিত ৩১ টি জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন এসোসিয়েশনের ৫ হাজার ৩০০ জন পুরুষ ও মহিলা ক্রীড়াবীদ ৩৭৮ টি ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন।’

পদক বিজয়ীদের অভিনন্দন-শুভেচ্ছা
‘আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক বাংলাদেশের সেরা অপেশাদার বা অ্যামেচার গলফারদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের অধিভুক্ত ক্লাবসমূহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল এবং বাংলাদেশ গলফ একাডেমি দল দলীয় ইভেন্টে ও কতিপয় গলফার ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ জাতীয় প্রতিযোগিতারয় অংশগ্রহণপূর্বক গত ৩ দিন ধরে তাদের সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন’ বলছিলেন বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের এই প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, ‘এই আসরটি বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের নবম আসর হলেও বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশন জাতীয় পর্যায়ের এই গলফ ইভেন্টটি তৃতীয় বারের মতো অত্যন্ত সুন্দরভাবে আয়োজন করেছে। পরিশেষে, প্রতিযোগিতায় পদক বিজয়ীদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের অনুশীলন অব্যাহত থাকবে এবং দেশী-বিদেশী সকল প্রতিযোগিতায় আপনারা আরও ভালো ফলাফল অর্জন করবেন এবং দেশের জন্য সুনাম-সুখ্যাতি বয়ে আনবেন। আমি আশাবাদী আপনাদের শ্রম ও সাংগঠনিক মেধা দিয়ে গলফ ফেডারেশনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

এক নজরে ইভেন্টের সারসংক্ষেপ
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর(আইএসপিআর) জানায়, এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ গলফ্ ফেডারেশনের অধিভুক্ত ১২টি গলফ্ ক্লাব ছাড়াও সেনা, নৌ, বিমান, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং রাওয়া গলফ্ দলের প্রায় ১৬০ জন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।

টুর্নামেন্টে ৮টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য এবং ৮টি ব্রোঞ্জ পদকের জন্য ৪টি ক্যাটাগরীতে খেলোয়ারেরা প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুরুষ দলগত বিভাগে এ্যামেচার গলফার মোঃ সাইফুল এবং মোঃ মুন্নার সমন্বয়ে গঠিত সাভার গলফ ক্লাব দল শিরোপা জয় করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। মোঃ সম্রাট শিকদার ও মোঃ শফিক বাখার সমন্বয়ে গঠিত কুর্মিটোল গলফ ক্লাব দল রানার-আপ হয়ে রৌপ্য পদক এবং সৈনিক মোঃ সাহাব উদ্দিন ও সৈনিক মোঃ আবু বকর সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দল ২য় রানার-আপ হয়ে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।

এছাড়া মহিলা দলগত বিভাগে সৈনিক জাকিয়া সুলতানা এবং সৈনিক লিমা আখতারের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মহিলা গলফ দল শিরোপা জয় করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। সৈনিক সোনিয়া আখতার ও সৈনিক নাসিমা আখতার এর সমন্বয়ে গঠিত বাংরাদেশ সেনাবাহিনীর অপর মহিলা গলফ দল রানার আপ হয়ে রৌপ্য পদক এবং মিসেস তাহমিনা রহমান ও মিসেস তাসলিমা শিরিনের সমন্বয়ে গঠিত কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব মহিলা গলফ দল ২য় রানার-আপ হয়ে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, পুরুষ একক (গ্রস) এ কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের মোঃ সম্রাট শিকদার প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের অপর গলফার মোহাম্মাদ ফরহাদ ২য় স্থান অধিকার করে রৌপ্য পদক এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক মোঃ সাহাব উদ্দিন ৩য় স্থান অধিকার করে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।

অপরদিকে পুরুষ একক (নেট) এ কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের মোঃ লিটন ম-ল প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক মেহেদী হাসান ২য় এবং কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের মোঃ সম্রাট শিকদার ৩য় স্থান অধিকার করে যথাক্রমে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মহিলা একক (গ্রস) এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক নাসিমা আক্তার প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অপর মহিলা গলফার সৈনিক জাকিয়া সুলতানা ২য় স্থান অধিকার করে রৌপ্য এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অপর মহিলা গলফার সৈনিক লিমা আক্তার ৩য় স্থান অধিকার করে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।

এছাড়া মহিলা একক (নেট) এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক জাকিয়া সুলতানা প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অপর গলফার সৈনিক নাসিমা আক্তার ২য় এবং কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের মিসেস তাসলিমা শিরিন ৩য় স্থান অধিকার করে যথাক্রমে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।

কালের আলো/আরআইএ/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email