শাওনের নিস্তব্ধ রাতে রাসেলের কান্না…

প্রকাশিতঃ 2:12 pm | August 15, 2020

অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ :

শাওন মাসের নিশুতি রাত। আর পাঁচটা দিনের মতই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমুতে গিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। খাবার টেবিলে হয়তো সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা কিংবা পুত্রদের সঙ্গে দেশ নিয়ে ভাবনার কথা বলেছিলেন তিনি। হয়তো পরিকল্পনাও ছিল পরদিন কী করবেন সে বিষয়ে!

মানুষের জীবনে একেকটা সকাল মানে আরেকটা নতুন স্বপ্ন, সম্ভাবনার গল্প। প্রকৃতির নিয়মে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ওই সকালে বাংলাদেশ কোনো স্বপ্ন দেখেনি। কোনো সম্ভাবনা নিয়ে কিরণ দেয়নি ভোরের পুবাকাশে উদয় হওয়া লাল-সবুজের সূর্য। দিনটি শুরু হয়েছিল হাহাকার আর ইতিহাসে কালিমা লেপনের মধ্যদিয়ে।

১৫ আগস্ট যে কৃষ্ণ অধ্যায় শুরু হলো, বাঙলার ইতিহাসে এর চেয়ে গ্লানিকর, বেদনাদায়ক আর কিছু নেই। এ কালরাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিহত হলেন বাঙালি জাতির জনক।

যে মানুষটির আহ্বানে এ দেশের দামাল ছেলেরা জীবনকে তুচ্ছ করে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা নামক শব্দটি। সেই দেশের গুটিকয়েক মানুষই রাতের অন্ধকারে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে।

আমরা হারাই ত্যাগ ও সাহসের প্রতীক, বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্নসারথী মহিয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে; বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আন্দোলন-সংগ্রামে যার অবদান অপরিসীম।

শিশু রাসেলের কান্নার শব্দ শাওন রাতের নিস্তব্দতা ও অন্ধকার ভেদ করে হয়তো তা পৌঁছে গিয়েছিল মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে! তবুও মন গলেনি পাষণ্ড নরপিচাশদের। তাদের হাত থেকে রক্ষা হয়নি নিষ্পাপ শিশুটিরও।

ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুরোজাতি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে। অভাব, অনটন আর নিত্য সমস্যায় জর্জরিত একটি পরিবারের কর্তা মারা গেলে স্ত্রী, সন্তানেরা যেমন অতল সাগরে উপনীত হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে পড়ে বাঙলার মানুষ।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নরপিশাচরূপী খুনিরা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত দেয়নি, তারা তাঁর আদর্শকেও চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, এর মধ্য দিয়ে মৃত্যু ঘটেছিল ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশ নামক দেশটির আপামর মানুষের স্বপ্ন দেখাও। তবে যার রক্ত মিশে রয়েছে এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে, যার ডাকে আপামর বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জন্মভূমিকে রাহুমুক্ত করতে সেই জাতির মন থেকে কী মহানায়কের নাম মুছে দেওয়া সম্ভব?

না, সম্ভব নয়। হয়েছেও তাই। তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের মানুষ মুজিব হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে চলেছে দেশ। ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

হত্যাকারীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন এদেশের মানুষের আশা-ভরসাস্থল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
অনেক দেরিতে ও পাহাড়সম বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডিত ১২ খুনির মধ্যে পাঁচজন বিদেশে এখনও পলাতক। আর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। সম্প্রতি ঢাকার মিরপুরে গ্রেফতার হন ভারতে পলাতক ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ। এরপর তার রায়ও কার্যকর করা হয়।

তবে দণ্ডিত বাকি খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনজনের অবস্থান সরকার জানলেও বাকি দুইজনের অবস্থানই অজানা। দণ্ডিত অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে পলাতক আবদুল আজিজ পাশার মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা যায়। আর বাকিদের অবস্থান জানা ও দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়। শুরু হয় নতুন অগ্রযাত্রার পথে লাল-সবুজের বাংলার যাত্রা। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার বাস্তবায়ন তিনি করে যেতে পারেননি। ‘সোনার বাংলা’ তথা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করতে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিনবছর সময় পেয়েছিলেন। এর মাঝেই পাল্টে যায় দেশের চিত্র। তাঁর সঙ্গে সমানতালে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা। মহিয়সী এই নারীর ত্যাগ ও সাহস আজ বাঙালি নারীর প্রতীক।

তবে থেমে নেই ষড়যন্ত্র। এ পর্যন্ত ২১বার বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এই অপচেষ্টার একটি। এরপরও তাকে দমানো যায়নি।

মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি হাল ধরেছেন বাংলাদেশের। তার দূরদর্শী চিন্তায় বাংলাদেশ এখন অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অগ্রভাগে। উন্নয়নের সব সূচকেই এগিয়ে রয়েছে দেশটি।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে তা ভেস্তে যায়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

এই সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুত্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন দেশের ভেতর-বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত।

কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে। তাঁর দায়িত্বকালে জ্বালাও-পোড়াও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকারকে এগোতে হয়েছে।

বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি।

দেশ আর্থ-সামাজিক সূচকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যাশাজনক সাফল্য অর্জন করেছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ এখন মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রবৃদ্ধি ৮.১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

মাথাপিছু আয় ৮৪৩ থেকে বিদায়ী অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার, বিনিয়োগ ২৬.২৫ শতাংশ থেকে ৩০.২৭ শতাংশ, রফতানি ১৬.২৩ থেকে ৩৪.৮৫ বিলিয়ন ডলার, মহামারি করোনা পরিস্থিতিতেও রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এটি রেকর্ড। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের কারণে নিজস্ব অর্থে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু।
বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর বিশাল এ প্রকল্প হাতে নেওয়ার ঘটনা অনেক দেশ ও সংস্থার সন্দেহ ও বিস্ময় প্রকাশ করলেও সে স্বপ্ন এখন দৃশ্যমান। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হ হন শেখ হাসিনা।

উন্নত দেশে উপনীত হওয়ার বিষয়ে তিনি আমাদের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে-ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৩০ এবং ২০৪১। রয়েছে শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান। চলমান রয়েছে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগও। ২০১৮ সালের ১২ মে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়। এর ফলে বছরে দেশের সাশ্রয় হচ্ছে ১৪ মিলিয়ন ডলার।

মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর কন্যার প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকার প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া স্বাধীনতার পরপর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল সম্প্রতি তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের বড় অর্জন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ উপাধি।

মিয়ানমারে বাস্তুচ্যূত বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্বও পালন করছে। সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় বৈশ্বিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

’৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিকে সপরিবারে হত্যা করে যারা নবীন রাষ্ট্রটির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর অপরিমেয় ক্ষতি ও গভীর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।

ইতিহাসের নৃশংসতম সেই হত্যাকাণ্ডের ফলে জাতির অস্তিত্ব ও মননে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তার পূর্ণ উপশম ঘটেনি। বেঁচে থাকলে তিনি আজ শতাবর্ষী হতেন। বটবৃক্ষের মতো আগলে রেখে দিক-নির্দেশনা দিতেন দিয়ে যেতেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা তাকে ধরে রাখতে পারিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন-সংগ্রাম করেছেন একটি সুখী-সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। শোকের এই আগস্টে আমাদের অঙ্গীকার হোক গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা; যার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন।

যে বাংলাদেশে স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়িত হবে এবং ধর্মগোত্র-নির্বিশেষে সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। গণতন্ত্র ও সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অনন্যসাধারণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে হবে সব সংকীর্ণতা ও দলীয় গণ্ডি অতিক্রম করে। তাঁকে দেখতে হবে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে, যে ঐক্য তিনি একাত্তরে সৃষ্টি করেছিলেন।

সেই ঐক্যের বলে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্রটি। মুজিব শতবর্ষে এটাই আমাদের পরম প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।

Print Friendly, PDF & Email