মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড : র‌্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে ৪ আসামি

প্রকাশিতঃ 8:08 pm | August 10, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ হত্যা মামলার চার আসামিকে কক্সবাজার জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (১০ আগস্ট) দুপুরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, চার আসামিকে আমরা বিগত দু’দিনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যের আলোকে তাদের সোমবার ১০দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া বাকি তিন আসামিকে পর্যায়ক্রমে আমরা রিমান্ডে নিবো। তবে, আজকেই তাদের রিমান্ডে আনছি না। আরো একটু যাচাই-বাছাই করছি।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজার জেলা কারাগারে থাকা চার আসামিকে আদালতের নির্দেশনা মতে দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছে র‌্যাব-১৫।

দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা কারাগারের ফটকে চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন র‌্যাবের তদন্ত দল।

গত বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ওসি প্রদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে তাকে বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজার আদালতে পৌঁছায় পুলিশ। তাকে আনার আগেই বিকেল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার ছয় আসামিকে আদালতে নেয়া হয়। আসামিদের আদালতে হাজির করার আগে পুরো এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের পাশাপাশি আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক উৎসুক জনতা।

জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব-১৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডার (টুআইসি) মেজর মেহেদী হাসান আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত আলী, দ্বিতীয় আসামি ওসি প্রদীপ ও তৃতীয় আসামি এসআই নন্দলাল রক্ষিতের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর, কামাল, মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বিচারক। রাত সাড়ে ৮টায় আসামিদের কারাগারে নেয়া হয়।

পরে শুক্রবার (৭ আগস্ট) মামলার আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের সদ্য সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এর আগের দিন বুধবার রাত ১০টায় টেকনাফ থানায় আদালতের নির্দেশে মেজর সিনহার বড় বোনের করা হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত হয়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ টেকনাফের বিচারক তামান্না ফারহার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন। পরে আদালত ৩০২/২০১ ও ৩৪ ধারায় করা ফৌজদারি আবেদন টেকনাফ থানাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এছাড়া বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তভার কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ককে দিতে সুপারিশ করা হয়। মামলায় পরিদর্শক লিয়াকত, ওসি প্রদীপসহ নয় পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।

প্রসঙ্গত, দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা মো. রাশেদ খান ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। আরো তিন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি উঠেছিলেন নীলিমা রিসোর্টে। গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।

কালের আলো/এসআর/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email