মসিক মেয়র টিটু’র পথ ধরেই চসিকের ‘প্রশাসক’ সুজন

প্রকাশিতঃ 7:11 pm | August 05, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

প্রয়াত কিংবদন্তি রাজনীতিক, চট্টল বীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘ছায়াসঙ্গী’ ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। ৫০ বছর রাজনীতির মাঠে সক্রিয় এ নেতাকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

কোন যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার কোন কর্মকর্তা চসিকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাবেন এমনটিই ধারণা করছিলেন সবাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জন করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

সোমবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেন।

অবশ্য প্রশাসক পদে কোন আমলার পরিবর্তে একজন জনপ্রিয় রাজনীতিককে দায়িত্ব দেওয়ার নজির এবারই প্রথম নয়। সেই হিসেবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রথম প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু’র পথ ধরেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া রাজনীতিক খোরশেদ আলম সুজন।

সূত্র জানায়, এক বছর ৯ মাস ১৮ দিন আগে দেশের দ্বাদশ সিটি করপোরেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার শেষ মেয়র ও স্থানীয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো.ইকরামুল হক টিটু।

২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর তাকে স্থানীয় সরকার বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘প্রশাসক’ হিসেবে নিয়োগের আদেশ জারি করেছিল। পরবর্তীতে প্রথম মসিক নির্বাচনেও ‘নৌকা’ প্রতীকে মনোনয়ন পান ইকরামুল হক টিটু এবং ‘মেয়র’ হিসেবে বিজয় অর্জন করেন।

সূত্র জানায়, পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটুর সার্বিক পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হন প্রধানমন্ত্রী। আস্থার ফল স্বরুপ দলীয় মনোনয়নে মসিকের প্রথম প্রশাসকের চেয়ারে বসেন।  আবার, সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েই ইকরামুল হক টিটু দিন-রাত একাকার করে কাজ করছেন। বরাবরই বঙ্গবন্ধু কন্যার আপত্য স্নেহও পেয়েছেন।

‘মেয়র টিটু’র সঙ্গে আমার প্রায় সময়েই ফোনে কথা হয়’, করোনাকালীন একটি ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য যেন মেয়র টিটু’র প্রতি তাঁর প্রগাঢ় স্নেহেরই বহি:প্রকাশ। 

মেয়র টিটু’র প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আপত্য স্নেহ
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইকরামুল হক টিটু ভোটে নির্বাচিত হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় পালন করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব।

ভোট রাজনীতিতে ‘অপরাজেয়’ টিটু ভারপ্রাপ্ত মেয়র থাকাকালেই সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ নগরীকে বদলে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের উপকন্ঠের এ শহরে বিস্তৃত পরিসরে উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু করেন।

অঙ্গীকার করেন তিলোত্তমা ময়মনসিংহের ভিশনের। গ্রিন অ্যান্ড ক্লিনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন সবুজ শহর গড়তে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শহরটি দেশের মডেল শহরে পরিণত হয়।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আধুনিক ও শৈল্পিক স্থাপনায় স্থাপন করেন বিভিন্ন ম্যুরাল বা ভাস্কর্য। এর পাশাপাশি নগরীর জয়নুল উদ্যান ও বিপিন পার্কও সৌন্দর্য্য বর্ধনের দৃষ্টান্ত।

এক সময় যে নগরীতে মাত্র ২০ মিনিটের বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হতো এখন সেখানে আধা ঘন্টাতেই ড্রেন দিয়ে পানি নেমে যায়। এজন্য তিনি ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে নগরীর প্রধান সড়কের দুই পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ১২৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করেন।

সূত্র জানায়, পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটুর সার্বিক পারফরম্যান্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করেন। পরবর্তীতে দলীয় মনোনয়নে মসিকের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েই ইকরামুল হক টিটু দিন-রাত একাকার করে কাজ করছেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর আপত্য স্নেহও পেয়েছেন।

করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী একটি ভিডিও কনফারেন্সে মেয়র টিটু’র প্রতি নিজের প্রগাঢ় স্নেহের কথা জানিয়ে বলেন, ‘মেয়র টিটু’র সঙ্গে আমার প্রায় সময়েই ফোনে কথা হয়।’

জনদুর্ভোগেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চান সুজন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে মহসীন কলেজ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি সায়েন্সে ভর্তি হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মরহুম আবদুল মান্নানসহ ছাত্রনেতারা মিলে গঠন করেন সংগ্রাম কমিটি। তিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন সুজন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী জালালাবাদ পাহাড় আক্রমণ করার পর আহত বাঙালি সৈন্যদের সেবা দেন সুজন সহ সহকর্মীরা। বিহারীরা তাকে দুইবার হত্যার চেষ্টা করলেও এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রাণে রক্ষা পান।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সোচ্চার ছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। ১৯৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী সংগঠনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন সুজন।

১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সুজন।

৬২’র ঘরে পৌঁছানো এই রাজনীতিক এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত বঞ্চিত হন। করোনাকালেও বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার খোরশেদ আলম সুজন।

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো, বেসরকারি হাসপাতালে অস্বাভাবিক বিল আদায় বন্ধ করা, সরকারি ত্রাণের চাল চুরিতে জড়িতদের ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার দাবি জানিয়েও জনমানুষের কাছে প্রশংসিত হন সুজন।

সব সময় দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা খোরশেদ আলম সুজন সর্বশেষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ওপর আস্থা রেখেই সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের গুরু দায়িত্ব তাঁর কাঁধে তুলে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বুধবার (০৫ আগস্ট) বিকেলে কালের আলো’র সঙ্গে কথা বলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন, তার মর্যাদা আমি রক্ষা করবো’ বলেন সুজন।

কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়তে কাজ করবো। এখানকার প্রধান সমস্যা যানজট ও ভাঙ্গা সড়ক। আমি এসব জনদুর্ভোগ নিরসনেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাই।’

কালের আলো/এআই/এসআর

Print Friendly, PDF & Email