ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পরিবর্তন ও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে : তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 10:31 pm | May 03, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনোভাবেই মতামত দমনের আইন নয়। তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিশৃঙ্খলার হাত থেকে রক্ষা করতেই বর্তমান সরকার এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

‘চূড়ান্ত করার আগে এ আইনটিকে আরও পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার সাংবাদিকসমাজের মতামতকে গুরুত্ব দেবে’ বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (০৩ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: শঙ্কা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে সব যায়গায় উদ্বেগ রয়েছে সেগুলো ধরে ধরে দেখিয়ে দিলে সরকারের পক্ষে আইনটি প্রণয়ন করতে সুবিধা হবে। ইতোপূর্বে আইনের নির্দিষ্ট ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের পরামর্শ পেয়েছি। আগামীতেও তাদের পরামর্শ বা সুপারিশ আশা করছি। একটি বিষয় খুব স্পস্ট করে বলতে চাই, শেখ হাসিনার সরকার সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ নয় বরং পরিপূরক। গণতন্ত্রের বিকাশে মুক্ত গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। আমরা সেটিই নিশ্চিত করতে চাই।’

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে কয়েকটি বিদেশি সংস্থার প্রতিবেদনকে একপেশে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের নির্যাতনকারীদের কোনো দায়মুক্তি আমাদের আইনে নেই। কিন্তু কোনো কোনো সময় আইনি দীর্ঘসূত্রিতায় বিচার বিলম্বিত হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা বিষয়ে সাংবাদিক সমাজে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মুক্তগণমাধ্যমের ওপর সরকার কিংবা অন্য কোনো পক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে এটি হতে পারে না। তবে এটিও ঠিক ‘স্বাধীনতার সঙ্গে ‘দায়িত্ববোধের সম্পর্ক রয়েছে। এটা একীভূত না হলে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। তাই গণমাধ্যমেরও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার থাকতে হবে। আর সেটা করবে মিডিয়ার নেতারা।’

বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যাবহারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বাড়ছে। কোনো কোনো সময় সেটি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ জন্য দেশে একটি শক্ত আইনের প্রয়োজন রয়েছে- এমন উল্লেখ করে গাজী টেলিভিশন ও সারাবাংলা ডটনেটের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, তবে সে আইন কোনো ভাবেই সাংবাদিক কিংবা গণমাধ্যমের জন্য হুমকি হবে না, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’

‘তথ্যের মালিকানা এখন আর সাংবাদিকের হাতে নেই’ এমন মন্তব্য করে ইশতিয়াক রেজা বলেন, তথ্য এখন মালিক, মৌলবাদী আর বলশালীদের হাতে চলে গেছে। অথচ আমরা যারা এ দেশকে ধারণ করি তারা দিন দিন আইনি জালে বন্দি হতে চলেছি। তাই সময় থাকতেই এ আইনের মধ্যে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে।

দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘ডিজিটাল ক্রাইম’ এখন কেবল আমাদের জন্যই নয় সারা বিশ্বের জন্যই চ্যালেঞ্জ। এটি একটি নতুন সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি শক্ত আইনের অবশ্যই প্রয়োজন। তবে সে আইন যেন কোনোভাবেই মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য প্রতিবন্ধক না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

এ ছাড়া সেমিনারে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: শঙ্কা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।

অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম স্ট্যাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া, আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক প্রভাস আমীনসহ অনেকে।

 

কালের আলো/এমএস

Print Friendly, PDF & Email