রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের জোরালো সমর্থন পাচ্ছে বাংলাদেশ!
প্রকাশিতঃ 12:05 pm | October 29, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
কথা দিয়েও শেষ মুহুর্তে মিয়ানমার বেঁকে বসায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্বিতীয় দফাতেও হোঁচট খেলেও আশা ছাড়েনি বাংলাদেশ। জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন আদায়ে জোরালো আন্তর্জাতিক তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আশিয়ানভুক্ত দুই দেশ সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডকে পাশে পেতে ইতোমধ্যেই দু’টি দেশ সফরে রয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ ফারুক খান এ সফরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আগামী ২ নভেম্বর থেকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ টি দেশের আঞ্চলিক জোট আসিয়ান সম্মেলন শুরুর আগে সংসদীয় কমিটি টানা তিনদিন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে।
এ সম্মেলনের আগেই সোমবার (২৮ অক্টোবর) এ সংসদীয় কমিটি সাক্ষাত করেছে থাইল্যান্ডের সিনেটর ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সঙ্গে। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সিনেটর চেয়ারম্যান ও থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট স্পিকারের সঙ্গেও সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে সিঙ্গাপুরের পর থাইল্যান্ডেরও জোর সমর্থনের আশা জেগে উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দিনগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ ফারুক খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড সফরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি সূত্র জানায়, গত তিনদিন যাবত সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ ফারুক খান, দুই সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।
সিঙ্গাপুর সফরকালে তাঁরা সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এরপর সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সঙ্গেও সাক্ষাত করেন। উভয় সাক্ষাতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের এ সংসদীয় কমিটি আগামী ২ নভেম্বর থেকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শুরু হতে যাওয়া তিনদিনব্যাপী আশিয়ান সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পক্ষে সিঙ্গাপুরকে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করেন।
তাঁরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। এ সময় সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিকতা গোটা বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তাঁরা আশিয়ান সম্মেলনে এ বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও সমস্যা নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।

একই সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরের সফর শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। আশিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যানও সেখানে আছেন। এ সংসদীয় কমিটি থাইল্যান্ডে সিনেটের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় সিনেটের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। সকাল ১১ টায় দেখা করবেন থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট স্পিকারের সঙ্গে। এরপর নিন্মকক্ষের পার্লামেন্ট স্পিকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সঙ্গেও একইভাবে বৈঠক করবেন।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় সরকার। আর মিয়ানমারও আশিয়ানভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষে তাদের সুদৃঢ় অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ ফারুক খান কালের আলোকে বলেন, মিয়ানমার আশিয়ানের অংশ হওয়ায় আশিয়ানের চারটি দেশের সমর্থন আদায়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ তৎপরতার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের এ সংসদীয় কমিটি আশিয়ানের দেশগুলো সফর করছে। আগামী নভেম্বরে আমাদের ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে বাংলাদেশে এসেছিল নিউইয়র্কের সিনেটররা। সেখানেও একই রকম সভা হয়েছে। তাঁরাও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এভাবে সরকার ছাড়াও সংসদীয় কমিটি বিভিন্ন দেশের সংসদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, যোগ করেন সাবেক এ মন্ত্রী।

কালের আলো/এনএল/এমএএইচএ