আমরা মানুষ ছিলাম, এখন নির্বোধ স্বার্থান্ধ দর্শক

প্রকাশিতঃ 12:14 pm | June 27, 2019

পীর হাবিবুর রহমান ::

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাতকে দুই সন্ত্রাসী বেপরোয়া ভাবে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দিনদুপুরে! রিফাতের নববিবাহিতা স্ত্রী মিন্নি আপ্রাণ চেষ্টা করেও ২৫ বছর বয়সের স্বামীকে বাঁচাতে পারেনি!

ভিডিও ছবি ভাইরাল হয়েছে। এই জঘন্য বর্বরোচিত আক্রমন যখন নিরপরাধ নিরস্ত্র রিফাতের উপর চলছিলো,তখন পাশেই অনেক পুরুষ দাড়িয়েছিলো! তারা নপুংসুক কিনা জানিনা। তবে নির্বোধ আবেগ অনুভূতিহীন সমাজের চরম সার্থপর বাসিন্দা তারা।

মোবাইলে ছবি তুলে, ভিডিও করে, যেনো এক আদিম মধ্যযুগীয় হত্যাকান্ডকে উপভোগ করছে, নয়তো ভাবছে যার খুশি মরুক, আমার কি?

একদিন এই জাতি নিরস্ত্র অবস্হায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমনের মুখে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছিলো! একদিন এই সমাজ সহজ সরল মানবিক ছিলো।সামাজিক নৈতিক দায়িত্ববোধ সবার মাঝে ছিলো। সাহস ছিলো।আবেগ অনুভূতি ছিলো।মায়া মমতা ছিলো। এখন সব হারিয়ে নিজের ষোল আনা স্বার্থে অন্ধ বিবেকহীন হয়ে পড়েছে।

একদিন যেখানে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের ঝাপটে ধরেছে নারী। ছিনতাইকারীকে দৌড়ে পাকড়াও করেছে কলাবাগানের সাহসী মহিলা। প্রতিরোধ করে তাড়িয়ে দিয়েছে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের সংঘবদ্ধ তরুনরা। হাক ছেড়েছে একজন, এগিয়ে এসেছে ১০জন। সেখানে আজ মাত্র দুটি দা, দুজন সন্ত্রাসীর হাত থেকে একজন তরুনের জীবন বাঁচাতে কেউ হাঁক দেয়না, কেউ দৌড়ে এসে প্রতিরোধ করেনা!

কী আবেগ অনুভূতিহীন এক নষ্ট সমাজে অন্তহীন দহন নিয়ে বেঁচে আছি আমরা, নির্লজ্জ কাপুরুষের মতোন! কতোটা বেহায়া মূল্যবোধহীন দায় দায়িত্ববহীন সমাজ! শিশুরা ধর্ষিতা হয়,বালকেরা পাশবিকতার শিকার হয়! নারী অপমানিত, যৌন হেনস্হার শিকার হয়! নিরিহ তরুন নব বধুর সামনে এলোপাতাড়ি দায়ের কূপে খুন হয়! আমরা সিনেমার শ্যুটিং দৃশ্যের মতোন উপভোগ করি!সমাজ নষ্ট হতে হতে শেষ।

আজকাল ধর্ষক খুনীর উন্মত্ততা দেখি প্রতিবাদ প্রতিরোধ দেখিনা!আমরা মানুষ নই, তাই মানুষ দেখিনা! কেউ ভাবিনা যাকে কুপিয়ে হত্যা করছে সে আমার সন্তান,আমার ভাই হতে পারতো! কেউ ভাবিনা যে শিশু ধর্ষিতা হচ্ছে সে আমার মেয়ে, যে নারী যৌনবিকারগস্হ পুরুষের হয়রানির শিকার হচ্ছে, সে আমার বোন হতে পারতো।

একদিন আমরা প্রতিবাদী, প্রতিরোধকারি ছিলাম। আমরা মানুষ ছিলাম। এখন আমরা খুনী ধর্ষক যৌননিপীড়ক নয় বিকৃত স্বার্থান্ধ দর্শক। নিজের হিসেবের, লাভ ও লোভের বাইরে কিছুই ভাবিনা। রিফাতের রক্তে তাই ভেসে যায় দেশ। তার নববধুর হাতের মেহেদীর রঙ না শুকাতেই আর্তনাদ আসে স্বামীহারা অকাল বিধবার। সন্তান হারা মায়ের কান্নার আওয়াজ আজ দেশে। আমরা নির্বোধ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি, স্মার্টফোনে ছবি তুলি, ভিডিও করি প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে ভুলে গেছি। কেউ হাক দেয়না,ধর ধর শালাকে ধর। বরং কী নির্মম ভাবে উপভোগ করি!

এখন আমরা আর মানুষ নই, একেকজন স্বার্থান্ধ হিসেবি নপুংসুক দাঁড়িয়ে আছি। রিফাত হত্যার ছবি যতো দেখি, বুকটা ততো খাকখাক করে আগুনে পুড়ে, ছটফট করি, ঘুম আসেনা!

আমরা জল্লাদখানায় বাস করছি, আমরা একদম নিজ স্বার্থে ডুবতে ডুবতে মনুষত্ব হারিয়ে ফেলেছি! উটের মতোন বালিতে মুখ ডুবিয়ে আছি!কোনদিন আমরা মানুষ হলে স্বার্থের অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হলে,বোধ এলে আবার প্রতিবাদ প্রতিরোধে মানুষের পাশে দাঁড়াবো!

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন