সঠিক বিনিয়োগ করলে শিক্ষায় সুফল পাওয়া যাবে : শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 8:40 pm | June 16, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

শিক্ষার সুফল পেতে হলে সঠিক বিনিয়োগ দরকার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

তিনি বলেছেন, আগামী দিনে মানবসম্পদ উন্নয়নে “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড”-এর সর্বোচ্চ সুফল হিসেবে পাওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন খাতে বাজেটে যথাসম্ভব অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ডিভিডেন্ড কোনো গিফট নয়, এটা লভ্যাংশ, যা পেতে হলে আমাদের সঠিক বিনিয়োগ করতে হবে। তবেই আমরা শিক্ষায় সুফল পাব।

রোববার(১৬ জুন) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (এসটিইপি) চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শুধুমাত্র ভবন তৈরি করে দেয়াটা যথেষ্ট নয়। বরং প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষক ও শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে শ্রম বাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে উপযুক্ত কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিকভাবে কারিগরি শিক্ষার মূল্য ও চাকরির ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, দেশের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উন্নয়নের জন্য প্রতি উপজেলায় তরুণদের জন্য একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে আগামী পাঁচ বছরে ১ কোটি ২৮ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান করা, যার মধ্যে প্রতি উপজেলা থেকে ১ হাজার তরুণ-তরুণীর জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দান করার কাজে সরকারি কেন্দ্র ব্যবহার করতে পারবে, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এতে করে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী শ্রমবাজারের চাহিদার ভিত্তিতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, দেশের বা বিদেশের শ্রমবাজারের তথ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা এখনো করে উঠতে পারিনি, তবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন একটি তথ্যভান্ডার তৈরি হলে আমরা সে চাহিদা অনুযায়ী কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারব।

প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটির বিষয়ে দীপু মনি বলেন, আমরা ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কুফল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এটি আমাদের নতুন ও নিজস্ব চিন্তাভাবনাকে নিরুৎসাহিত করে। আমাদের আরও একটু উদ্ভাবনী, উদ্যোগী ও সাহসী হতে হবে।

এই ত্রুটি কাটাতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও উদ্যোগের কথাও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

বিশ্বব্যাংক ও কানাডা সরকারের অর্থায়নে ২০১৪ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। এ বছর দেশের ১৬৭টি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ৬ হাজার ২৬১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন, যার মধ্যে ৭৪১ জন নারী শিক্ষার্থী। প্রাথমিক পর্যায়ের ২ হাজার ৪২৮টি প্রকল্প থেকে সেরা ৫২টি প্রকল্প চূড়ান্তপর্বে আসে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদ, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোরাদ হোসেন মোল্ল্যা, বিশ্বব্যাংকের এডুকেশন গ্লোবাল প্র্যাকটিসের সিনিয়র অপারেশন অফিসার মোখলেসুর রহমান, স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রোজেক্টের প্রকল্প পরিচালক এ বি এম আজাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. আলমগীর।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদ বলেন, এসটিইপি প্রকল্পের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এই ক্ষেত্রের শ্রমবাজারের সঙ্গে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তা ও শিল্পকারখানার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ তৈরি হচ্ছে। এভাবে শ্রমবাজার বুঝে আমরা কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম তৈরি করতে পারছি।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. আলমগীর বলেন, আমাদের যদি দেশের উন্নয়ন করতে হয় এবং মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের ধরে রাখতে হয়, তবে প্রতিদিন আমাদের নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, অন্যথায় আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব না।

কালের আলো/এসআরডি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email