বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা ব্যাংকিং খাতে

প্রকাশিতঃ 4:28 am | March 06, 2018

কালের আলো রিপোর্ট:

নিয়ন্ত্রণহীন খেলাপি ঋণ, হ্যাকিং, নতুন প্রযুক্তির আগমন, তারল্য সংকট, অদক্ষ মানব সম্পদ, পরিচালনা পর্ষদের অদক্ষতা, বাছ-বিচারহীন ঋণ দেওয়া, প্রশিক্ষণের অভাব এবং ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যাংকের প্রসারের কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।

এ ধরনের ঝুঁকি তৈরি হলে দেশের আর্থ-সামাজিকসহ সবক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই এখনই এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এজন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে রোড ম্যাপ তৈরি করে ঝুঁকি উত্তরণের ছক তৈরি করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আগামীতে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। এমন সব আশঙ্কা করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা।

সোমবার (০৫ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে দু’দিনব্যাপী আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনের (আরবিসি-২০১৮) সমাপনী দিনে বক্তারা এসব আশঙ্কার কথা বলেন।

অধিবেশনের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মাদ এ (রুমী) আলী।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের চেয়েও আগামীতে ব্যাংকাররা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। তবে এ চ্যালেঞ্জ শুধু বাংলাদেশেই নয়। সারাবিশ্বের ব্যাংকারদের জন্যই আগামীতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তাই এখনই ব্যাংকারদের সচেতন হতে হবে। নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবসায় নতুন নতুন মডেল তৈরি করতে হবে।

ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক মঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। ভারতে সাধারণ খেলাপি থেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের পৃথক করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের ইচ্ছাকৃত খেলাপিদেরও পৃথক করা উচিত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রেসিডেন্ট আরফান আলী বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিংসহ নতুন নতুন সেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার বাইরের মানুষকে ব্যাংক সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

বিআইবিএমর সুপারনিউমারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, আগামীতে ব্যাংকের ঝুঁকি সংক্রান্ত যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবেলায় পরিচালনা পর্ষষদকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব বিধি-বিধান রয়েছে তা সঠিকভাবে মেনে চললে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু অধিকাংশ পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের এ সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান নেই। তিনি বলেন, ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকি কর্মকর্তাদের (সিআরও) কার্যক্রম সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এ কারণে সঠিকভাবে ঝুঁকির বিষয়টি উঠে আসে না।

তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে যে ঝুঁকি তৈরি হবে সে ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকে যোগ্যতাসম্পন্ন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিচালকদের একটি ফিট লিস্ট তৈরি করতে হবে। এ ধরনের ফিট লিস্ট থাকলে অযোগ্য ব্যক্তিরা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বসতে পারবে না। একইসঙ্গে বোর্ডকে নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্মেলনে অন্য বক্তারা বলেন, নেপালে ঋণ খেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হয় না। তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয় এবং তাদের পাসপোর্ট জব্দকরা হয়। এর ফলে দেশটিতে খেলাপি ঋণের হার একেবারেই শূন্যের কোঠায়। আমাদের স্বপ্নটা তারা বাস্তবায়ন করেছে।

 

কালের আলো/এসএইচ