দায়িত্ববোধে অটুট বিশ্বাসে নতুন উচ্চতায় আমীরে জামায়াত

প্রকাশিতঃ 1:10 am | July 21, 2025

রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো:

জীবনের ৭০টি বসন্ত পার করেছেন। কিন্তু চোখে-মুখে অবিচল তারুণ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি এখন ভাসছেন প্রশংসায়। জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে বারবার অসুস্থ হয়েও বক্তব্য চালিয়ে গিয়ে নজর কেড়েছেন। চূড়ান্ত দায়বদ্ধতায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশের মানুষের চোখে-মুখে তিনি এখন এক বিমুগ্ধ বিস্ময়।

শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর আবেগ মিলিয়ে সেদিনের সমাবেশ মঞ্চে কী অকল্পনীয় এক মুহূর্ত। একাধিকবার মঞ্চে পড়লেও তিনি থেমে না থেকে বক্তব্য এগিয়ে নিয়েছেন। মঞ্চের ডায়াসের পাশে বসেই বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন, তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করবো ইনশাআল্লাহ। এ লড়াই বন্ধ হবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। বলছিলাম, জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর ইচ্ছা এবং জনগণের ভালোবাসায়, বাংলাদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে ইনশাআল্লাহ।’

ফ্যাসিবাদের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের কাছে আমীরে জামায়াত অনুপ্রেরণার বাতিঘর; যিনি ঈমানের দীপ্ত চেতনায় গর্জে ওঠেন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের ভাষ্যে তিনি রাজনীতির স্বপ্নপুরুষ। জাতির প্রতি নিজের অগাধ মমতা ও দায়িত্ববোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন এই রাজনীতিক। বক্তব্য শেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পাঠিয়েছিলেন হাসপাতালে তাকে দেখতে। এ যেন গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক সৌন্দর্য। জামায়াত আমিরের খোঁজ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসও। জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমানকে দেখতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইবনে সিনা হাসপাতালে সেদিনই গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শনিবার রাতে জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জামায়াত আমিরের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সামনে নির্বাচন, আমরা চাই বাংলাদেশের সব দলের রাজনৈতিক নেতারা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। দেশ গড়ার কাজে সবাই অবদান রাখুন।’ বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানও। রোববার (২০ জুলাই) বিকেলে ডা. শফিকুর রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

নীতি, আদর্শ, দূরদর্শিতা, দায়িত্ববোধ ও মানবতাবোধের জাগরণ ঘটিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব আর সঞ্জীবনী শক্তির পথনির্দেশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রাজনীতি, মতাদর্শ সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এমন আত্মত্যাগের নজির কমই দেখা যায়। অনেকেই বলছেন, জামায়াতের আমির দল ছাপিয়ে এই প্রজন্মের কাছে আত্মত্যাগ, দায়িত্ব ও অটুট বিশ্বাসের এক মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠেছেন। এই সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমানের এমন ভূমিকা দলটির নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলেছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

‘লক্ষ জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে, তাহলে কোনো এমপি, কোনো মন্ত্রী আগামীতে সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়ি চড়বে না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী তার নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না’- জাতীয় সমাবেশের বক্তব্যে বলেছেন ডা.শফিকুর রহমান। চাঁদার রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কথাও জানান দিয়েছেন। আমীরে জামায়াত বলেছেন, ‘চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করবো না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করবো না। আজীবন সবার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছি, জেল-জুলুমের পরোয়া করি নাই।’ তাঁর এসব বক্তব্য দেশের সাধারণ মানুষকেও করেছে আশান্বিত।

কালের আলো/এমএএইচএন