শেষ পর্যন্ত মাহমুদুর রহমানের কথাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: মঞ্জু

প্রকাশিতঃ 4:48 pm | July 01, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ‘গণঅভ্যুত্থান ছাড়া বাংলাদেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে না। তরুণরা সেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেবে, এটি মাহমুদুর রহমান বারবার বলতেন। শেষ পর্যন্ত তার কথাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি একা ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।’

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এবি পার্টির ৩৬ দিনব্যাপী জুলাই উদযাপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মঞ্জু।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ প্রশ্নে আমরা সবাই এক হয়েছিলাম। আজ কেন সংস্কার নিয়ে এত দ্বিধা। মতাদর্শ কিংবা ক্ষমতাকেন্দ্রিক জোট নয়, বৈষম‍্যবিরোধী ও সংস্কারের পক্ষের সকল গণতান্ত্রিক শক্তির জোট গঠনে এবি পার্টির আগ্রহ রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে না পারা অন্তর্র্বতী সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন, সেসব শহীদদের মনে রাখার প্রধান ধাপ হলো এমন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে নতুন করে হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদ চেপে বসতে না পারে।’

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আব্দুল লতিফ মাসুম।

তিনি বলেন, ‘হাজারো শহীদের রক্ত, পঙ্গুত্ব, অঙ্গহানির পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ চাই। আবারও বিভেদ বিভাজনের রাজনীতি আমরা চাই না। কিন্তু কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে আবারও আমরা সে লক্ষণ দেখছি।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

এর আগে এবি পার্টির ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা রাখি ও সন্তান আরিয়ানা কাজী নুজাইরাহ।

শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার স্বামী হারিয়েছি। হাজার হাজার মানুষ তাদের স্বজন হরিয়েছে। আমার স্বামীকে খুঁজতে আমি যখন হাসপাতালে গিয়েছি, লাশের সারি দেখেছি। এতো মানুষ জীবন দিল, তার বিনিময়ে আমরা আর নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ এই বাংলায় দেখতে চাই না।’

এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জীবন ছিল অনেক কঠিন। আমি ঢাকা মেডিকেলে ওই সময় যখন গিয়েছি আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের খোঁজখবর নিতে, সে সময়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কিছু চিকিৎসক আমাকে ঢুকতে দেয়নি। চিকিৎসা করতে দেয়নি। মর্গে লাশ ভরা ছিল, আত্মীয়-স্বজনদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এখন আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নতুন বাংলাদেশ গড়ার বদলে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আজ জুলাইয়ের প্রথম দিনে আমি মনে করছিলাম, গত বছর এই সময়গুলোতে আমরা কী করছিলাম। মনে করছিলাম কীভাবে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছিলেন, আমরা এই ছাত্র-আন্দোলনের সঙ্গে নেই, এটা নিছক ছাত্রদের আন্দোলন। আজকে আবার সেই দলগুলোই এখন সংস্কারের বিষয়ে বক্তব্য রাখছে, তাদের বাদ দিয়ে কোনো সংস্কার হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু সেই দিনগুলো ভুলি নাই। আমরা শেখ হাসিনার সময় যেসমস্ত দাবি করেছিলাম নতুন বাংলাদেশ গঠনের, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার, নতুন বাজেটের, নতুন দায় ও দরদের রাজনীতির, এখনো আমরা সেই দাবি বাস্তবায়নের জন্যই কাজ করছি। কিন্তু দুই-একটি রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থে আগের সেই আওয়ামী পথকেই বেছে নিয়েছে। আমরা তাদের বলছি, জনগণের অধিকার আর নতুন বাংলাদেশ গঠনে আপনারা যারা বাধা দিচ্ছেন আপনাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগ ও হাসিনার মতোই হবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) দিদারুল আলম, বিএম নাজমুল হক, লে. কর্ণেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, যুবপার্টির সদস্যসচিব হাদিউজ্জামান খোকন, নারী বিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার।

কালের আলো/এএএন