বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হবে সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার : ডিএমপি

প্রকাশিতঃ 9:32 pm | May 17, 2025

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন ও জড়িতদের হত্যাকাণ্ডে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী।

শনিবার (১৭ মে) বিকেলে সাম্য হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা দেখেছেন মাগুরার শিশু আছিয়ার ঘটনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। একইভাবে এ ঘটনায়ও আমরা চেষ্টা করব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাম্য হত্যার তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে। আমরা একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর বিচার ও অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।

মামলার তদন্ত ও বিচারকার্যের অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, আমরা এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে তিনজনকে ধরেছি তারা তিনজনই ক্রিটিক্যালি আহত। সাম্যের বন্ধুদের কাছ থেকে যখন আমরা শুনি আসামিরা আহত তখন আমরা ঢাকার হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালিয়ে শরমিতা হাসপাতাল ও বিআরবি হাসপাতাল থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করি।

তিনি আরও বলেন, তাদের তথ্যমতে ওইদিন ভোরের মধ্যেই আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মব হওয়ার আশঙ্কায় আসামিদের ডিবি অফিসে নিয়ে সেখানে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাদের কোর্টে নিয়ে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তবে তারা যেহেতু আহত ছিল এজন্য তাদের আগামীকাল (রোববার) থেকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর মামলার তদন্তের অগ্রগতি আগামী সাত দিনের মধ্যে ডিএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে বলে জানান ডিএমপির এ কর্মকর্তা।

সাম্য হত্যা পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা এ ঘটনায় টিএসসি সংলগ্ন সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে সরবরাহ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এরপর টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উদ্যানে নিয়মিত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে।

উপাচার্য বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রমনা পার্কের আদলে গড়ে তোলার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞ দিয়ে সহায়তা করা হবে। এছাড়াও আগামীকাল (রোববার) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিশেষ সভা করবেন বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু অংশীজন একে ব্যক্তি স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ বলে মনে করায় এটিকে জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন আবার বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের কাজটি জোরালোভাবে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্যাম্পাস পুলিশের ব্যাপারে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, অংশীজন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

কালের আলো/এসএকে