গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন কমেছে ৩৫ শতাংশ

প্রকাশিতঃ 5:38 pm | May 17, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৬৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে এই খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০ শতাংশ।

অবশ্য প্রবৃদ্ধির এমন পরিসংখ্যানেও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারছেন না রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। কারণ তীব্র জ্বালানি সংকটে ভুগছেন তারা। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে এই খাতে ৩৫ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

উদ্যোক্তারা জানান, শুল্কযুদ্ধের অস্থিরতায় ক্রয়াদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই ধীরে চল নীতিতে চলছেন মার্কিন ক্রেতারা। কারখানায় আসা ক্রয়াদেশও সময় মতো ক্রেতার ঘরে পৌঁছে দিতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কমছে উৎপাদন সক্ষমতা, বাড়ছে অপচয়। এই অবস্থায় বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিমুখী শিল্পে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকারকে পাশে চান উদ্যোক্তারা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকার একটি মাঝারি আকারের তৈরি পোশাক কারখানা গত ৬ মাসে গ্যাস সরবরাহের অনিয়মে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ উৎপাদনশক্তি হারিয়েছে। ফলে, মাসিক উৎপাদন ৫ লাখ ইউনিট থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৫ লাখ ইউনিটে এবং ক্রেতার জরুরি শিপমেন্টে জরিমানা দিতে হয়েছে।

ইভেন্স গ্রুপের পরিচালক শাহ রাইদ চৌধুরী বলেন, ‘যেখানে গ্যাসের চাপ ১০ থেকে ১৫ পিএসআই থাকা উচিত, সেখানে গত তিন সপ্তাহ ধরে গ্যাসের চাপ একেবারে নেই বললেই চলে। ১.৫ থেকে ২ পিএসআই গ্যাসের চাপে কিছুই করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ আর গ্যাস সমস্যার কারণে ৩৫ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ। আমাদের অপচয় বাড়ছে। এই খরচগুলো কে আমাদের রিকভার করে দেবে।’

অপর এক শিল্পকারখানার মালিক জানান, বিদ্যুৎ আর গ্যাস সমস্যার কারণে ৩৫ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ। আমাদের অপচয় বাড়ছে। এই খরচগুলোকে আমাদের রিকভার করে দেবে। কিন্তু কীভাবে করবো তা জানা নেই।

শিল্প খাতের সংকট মোকাবেলায় সম্প্রতি দৈনিক অতিরিক্ত ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা। বাস্তবে এমন ঘোষণা কাগুজে বাঘ। সরকারি ঘোষণার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রতিশ্রুত গ্যাসের সামান্য অংশই মিলছে, যার ফলে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই গ্যাস সংকটে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়েও তৈরি হয়েছে গভীর শঙ্কা।

শিল্পকারখানার চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানির দাবি জানিয়েছে শিল্পমালিকরা। কিংবা বিকল্প এলপিজির মাধ্যমেও তাদের চাহিদার জোগান দেওয়ার কথা বলছে তারা। সম্প্রতি শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস ও জ্বালানির সংকট নিরসনে এলএনজি আমদানি করে টেক্সটাইল শিল্পে সরবরাহের দাবি জানিয়েছে দি ইনস্টিটিউশন অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টস (আইটিইটি)।

সংগঠনটি জানায়, শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস ও জ্বালানির তীব্র সংকটের ফলে টেক্সটাইল শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পোশাক রপ্তানিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য পেট্রোবাংলাকে আসন্ন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়াসহ গ্যাসের মূল্য ২০২৩ সালের আগের মূল্যের অবস্থায় নিয়ে পুনঃমূল্য নির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

নিট গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি, ভোগান্তি আগের মতোই রয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ঘনফুটের বিপরীতে শিল্পখাত পাচ্ছে মাত্র চার থেকে পাঁচ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, গত মাসে রফতানি অনেক ভালো ছিল। কিন্তু চলতি মাসে কমতে শুরু করেছে। ফলে সময়মতো পণ্য হাতে পাওয়া নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকে গেছে।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘রিজার্ভের হিসাবে ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতিকে টেকসই করতে প্রয়োজনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়ে কারখানার চাকা সচল রাখতে হবে।’

কালের আলো/এমএএইচএন