নিরাপদ উড্ডয়ন ঘণ্টার অনন্য মাইলফলক, মাতৃভূমি রক্ষায় প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার বিমান বাহিনী প্রধানের

প্রকাশিতঃ 7:12 pm | May 05, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

উড়োজাহাজকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণ-বাহন এবং দ্রুত ছুটতে থাকা আধুনিক জীবনব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি। ‘সম্মিলিত প্রয়াস’ নিরাপদ উড্ডয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত। ফলত উড্ডয়ন নিরাপত্তার স্বার্থে অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্ব এবং সহযোগিতার সংমিশ্রণের নিজ বাহিনীর সদস্যদের জন্য অনন্য এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কমান্ড সেফটি সেমিনার পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে উড্ডয়ন নিরাপত্তা বজায় রাখা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এবং উড্ডয়ন দুর্ঘটনা ঝুঁকি হ্রাস করে উন্নত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রেখে চলেছে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

নিরাপদ উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বরাবরই বিশেষ যত্নবান বিমান বাহিনী। প্রতি বছরের মতো এবারও তেজগাঁওস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার’র ফ্যালকন হলে সোমবার (০৫ মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কমান্ড সেফটি সেমিনার। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেনা প্রদান করেন। সেমিনারটিতে উড্ডয়ন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আপোসহীন মান অর্জনের লক্ষ্যে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হয়। উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হয় ২০২৪ সালের বিমান উড্ডয়নের কার্যক্রম এবং উড্ডয়ন সংক্রান্ত সকল ঘটনা প্রবাহ।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিরাপদ উড্ডয়নে ছাপিয়ে গেছে গত বছরকে। ২০২৩ সালে যেখানে নিরাপদ উড্ডয়ন ঘণ্টা ছিল ২২ হাজার ৯২৯ সেখানে ২০২৪ সালে ২৩ হাজার ১৬ ঘণ্টা নিরাপদ উড্ডয়নের মাধ্যমে চমক তৈরি করেছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নিজ বাহিনীর সদস্যদের কঠোর পরিশ্রম ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেছেন। তিনি বাহিনীর ২৩ হাজার ১৬ ঘণ্টা নিরাপদ উড্ডয়নকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কার্যক্রমের সাফল্য এবং নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখছেন। একই সঙ্গে মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সর্বদা প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

জানা যায়, আরও আগেই বিমান বাহিনী বিমান পরিচালনায় অ্যানালগ ব্যবস্থা থেকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় উত্তরণ করছে। উড্ডয়ন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান অর্জনেও তাঁরা আপোসহীন। সংশ্লিষ্টদের জন্য মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন বিমান বাহিনী প্রধান। এই কমাণ্ড সেফটি সেমিনার নিরাপত্তা সচেতনতাকে আরও জোরদার করে উড্ডয়ন কার্যক্রমের পরিবেশকে আরও নিরাপদ করবে বলেও মনে করেন তিনি।

সূত্র জানায়, ২০২৪ সাল বিমান বাহিনীর অপারেশনাল কার্যক্রমে পরিপূর্ণ ছিল। ওই সময় তারা জাতিসংঘ মিশন রোটেশন ফ্লাইট, যুক্তরাজ্য এবং চেক রিপাবলিকের জন্য ফেরি ফ্লাইট, র‌্যাপেলিং ও ফাস্ট রোপিং, প্যারা ট্রুপিং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য মেডিকেল ইভাকুয়েশন, বিভিন্ন ভিভিআইপি ফ্লাইট, পুনরুদ্ধার এবং ফেনীর বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ব্যাপক সাড়া ফেলে। দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়ায় বাহিনীটির বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রধান অতিথি হিসেবে ফ্লাইট সেফটি ট্রফি বিতরণকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এই সেমিনারটি বিমান বাহিনী অভিজ্ঞ সদস্যদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি মূল্যবান প্লাটফর্ম, যা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং উড্ডয়ন নিরাপত্তা উন্নয়নে সহায়তা করে।’ বিমান বাহিনী প্রধান উপস্থিত সকল এয়ারক্রু, টেকনিশিয়ান, কন্ট্রোলারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিবিড় তত্ত্বাবধান বাড়ানোর পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতালব্ধ ব্যবহারিক জ্ঞানের সফল প্রয়োগ ও উড্ডয়ন নিরাপত্তা প্রক্রিয়াসমূহ কঠোরভাবে অনুসরণেরও আহবান জানান।

পরে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারকে ‘আন্তঃঘাঁটি ফ্লাইট সেফটি ট্রফি’ ও ৫ নম্বর বহরকে ২০২৪ সালের সর্বোচ্চ নিরাপদ উড্ডয়ন ঘন্টা অর্জনের জন্য ‘আন্তঃবহর খাদেমুল বাশার ফ্লাইট সেফটি ট্রফি’ প্রদান করেন। এছাড়া এই বছর সেরা বিমান প্রকৌশল বহর হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক বিমান প্রকৌশল বহরকে ‘বেষ্ট এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারিং স্কোয়াড্রন ট্রফি’ প্রদান করা হয়।

এ সময় সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খান, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) শরীফ উদ্দিন সরকার, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (রক্ষণাবেক্ষণ) এয়ার ভাইস মার্শাল জাহিদুল সাঈদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে