এরশাদের নতুন চমক

প্রকাশিতঃ 11:00 am | February 21, 2018

পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো :

দেশের রাজনীতিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ.এম.এরশাদকে ধরা হয় তৃতীয় শক্তির প্রধান হিসেবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি’র কান্ডারী তিনি। ঘটন-অঘটন পটিয়সী আলোচিত এক চরিত্র। অস্থির প্রকৃতির, রহস্যময় ও বহুরূপী মানুষ হিসেবেও তাকে ডাকেন অনেকেই।

তবে যে যাই বলুক না কেন, দেশের প্রধান দু’রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি’র ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে, অন্তত এমনটি বিশ্বাস করে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা। সাবেক এ সেনা শাসকের কথা নিয়ে আগে হাস্যরস হলেও এখন কেউ ফেলে দিচ্ছেন না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি। হঠাৎ করেই তিনি বোমা ফাটিয়েছেন। বলেছেন, বিএনপির একটি বড় অংশ জাতীয় পার্টিতে ভিড়তে চাইছে। আর তাদের দলে নিতেও তার কোনো আপত্তি নেই।
বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তার জেলা রংপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন ইঙ্গিত দেন।

‘পল্লীবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত এরশাদের এমন মন্তব্যের পর রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বোদ্ধামহলেও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যাওয়া শীর্ষ কয়েক নেতাকে নির্বাচনের আগেভাগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ.এম.এরশাদ দলে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে নতুন ‘চমক’ দেখাবেন এটি অনেকটাই নিশ্চিত।

কারণ, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে দলটির অনেক প্রার্থীই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে পারেন। গুঞ্জণ উঠেছে, এ সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন এরশাদের এক সময়কার অনুসারী, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও মনিরুল হক চৌধুরীসহ অনেকেই।

এইচ.এম.এরশাদ এক সময়কার দলছুট নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে নিজের অবস্থানও পরিস্কার করেছেন। তাদের দলে নিতে নিজের অনাপত্তির কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘কেউ যদি ইচ্ছে করে আমার জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে চায় তাহলে তাদের নেব না কেন? তারা যদি ভালো নেতা হয়, যোগ্য প্রার্থী হয় তাদের অবশ্যই দলে নেব এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেব।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে নানা নাটকীয়তার মধ্যে ওই নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। এরপর বিরোধী দলের আসনে বসার পাশাপাশি সরকারেও রয়েছে দলটি। এ সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক ফাস্ট লেডি বেগম রওশন এরশাদ এমপি।

সূত্র মতে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে সুরাহা না হওয়ায় বিএনপির আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়া এখনো অনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, ‘কারও জন্য নির্বাচন আটকে থাকবে না। বিএনপি গতবারও নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, এবারো পারবে না।’

সূত্র মতে, দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় দলীয় অনেক নেতা-কর্মীরা হতাশ। এ অবস্থায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে গুরুত্ব দিলেও অচিরেই খালেদাকে মুক্তি না দিলে ‘এক দফা’ আন্দোলন কর্মসূচিতে নামতে চাইছেন দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ নিয়েও ভেতরে ভেতরে দলটিতে মতবিরোধ চরম পর্যায় নিয়েছে।

ফলে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত দলের অবস্থান কী হবে এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বিএনপি’র বেশিরভাগ প্রার্থী। বিশেষ করে যারা টাকার জোরে মনোনয়ন ভাগিয়ে এমপি হতে চান তারা রীতিমতো হাসফাঁস অবস্থায় রয়েছেন। খবর বেরিয়েছে, তলে তলে অনেকেই না কী এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করছেন। সুযোগ বুঝে তারা জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে চমকে দিতে পারেন।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র এমন ধোঁয়াশা পরিস্থিতির মধ্যে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ সংবিধানের আলোকে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ে সংবিধানের আলোকে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে অন্য কোনো দল অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি অংশ নেবে। সে প্রস্তুতি আমরা নিয়ে ফেলেছি। নির্বাচনের জন্য দুটি দলই যথেষ্ট।’

কালের আলো/এসএ/এএ

Print Friendly, PDF & Email