সঙ্কট নিরসনে জাতীয় ঐক্য চায় বিএনপি 

প্রকাশিতঃ 12:17 am | November 28, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের ঘটনায় তার অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীর মৃত্যুতে ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠছে দেশ। গভীর এক সঙ্কট তৈরির পাঁয়তারা চলছে। চলমান এই সঙ্কট নিরসনে জাতীয় ঐক্য গঠনে জোর দিয়েছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বুধবার (২৭ নভেম্বর) বৈঠকে দেশের শান্তি বিনষ্টকারী শক্তিকে প্রতিহত করতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিন রাত সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

অন্যদিকে, জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য সবার মধ্যে ঐক্যের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় স্টাবিলিটির জন্য সবার মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। হিন্দু, মুসলমান, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা সবাইকে নিয়ে জাতীশ ঐক্যের কথা বলেছেন তিনি। তিনি সবাইকে শান্ত হতে বলেছেন।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে যৌক্তিক-অযৌক্তিক নানা দাবি আর তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে আন্দোলনের নামে কথায় কথায় অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের কোথাও-না কোথাও কিছু-না কিছু একটা ঘটেই চলেছে। শান্ত পরিবেশ হঠাৎ করে চরম অশান্ত হয়ে উঠছে। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত, ক্রোধ, আক্রোশ, প্রতিহিংসা সব যেন একযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনের চিত্র একেবারেই করুণ। যেকোনো ইস্যু নিয়েই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন রাস্তায় নেমে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন রাজধানীকে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে রাখেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। এরকম আরও নানা ঘটনায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। চট্টগ্রামে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়ে ওঠেছে। গত দু’দিন এই দাবিতে উত্তাল বন্দর নগরী চট্টগ্রাম।কারও কারও মতে, একটি বিশেষ মহল এই সরকারকে বিপাকে ফেলতে প্রতিনিয়ত উস্কানি দিচ্ছে। নেপথ্য থেকে কলকাঠি নেড়ে এবং ছদ্মবেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে একটি মহল। সরকারের পক্ষ থেকেও বক্তব্য এসেছে, দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা এসব সংঘাতের পেছনে কারও ইন্ধন আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে কী বলেছে বিএনপি?

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত কয়েকদিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগ— সেই উদ্বেগের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে এসেছি। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে দ্রুত ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। দেশে যেন এমন কোনও ধরনের অবস্থা সৃষ্টি না হয়, যাতে বিভাজন সৃষ্টি হয়।

জাতীয় ঐক্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, অথবা স্টেবেলিটি  বিনষ্ট করতে চায়— তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই কথাগুলো আমরা বলে এসেছি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা সেই সঙ্গে জনগণের যে দুর্ভোগ হচ্ছে, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি হয়েছে— এ বিষয়ে তাদের সামনে তুলে ধরেছি। টিসিবির ট্রাকগুলো বাড়ানোর কথা বলেছি, এলাকাভিত্তিক বাড়ানোর কথা বলেছি।

তিনি বলেন, আমরা ট্রাক চলাচল, যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করে সেটা বলেছি। সেই সঙ্গে কৃষিতে বিশেষ করে সার বিতরণের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো আছে— সেই সমস্যাগুলো এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসররা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা এক্ষেত্রে যারা জনগণের পক্ষে আছে, তাদের এখানে নিয়ে আসার কথা বলেছি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, নরমাল যে অ্যাক্টিভিটিস আছে সেটা যেন চালু থাকে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বেতনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি না হয়। তারা যেন নিয়মিত বেতন পান, সেজন্য সরকারকে ঋণ দেওয়া ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আরেকটা বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি— ইউনিয়ন পরিষদ যেগুলো আছে সেগুলো বেশিরভাগ ফ্যাসিস্ট সরকারের জোরজবদস্তি নির্বাচনে তাদের মতো করে নিয়ে এসেছিল। আমরা মনে করি, যেহেতু সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এখন ইউপি পরিষদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।

ট্রেড বডি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ট্রেড বডিগুলো ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন ট্রেডবডি গঠন করতে হবে। সামগ্রিকভাবে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠন করার আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা এটা বলেছি যে, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নির্বাচন সংস্কারগুলো সম্পূর্ণ করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অত্যন্ত জরুরি।

কালের আলো/আরআই/এমকে