অটোরিকশা চলাচলের পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র মতামত
প্রকাশিতঃ 5:44 pm | November 22, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
রাজধানীতে হঠাৎ করে রিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যানবাহন পাচ্ছিলেন না তারা। স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা এ সব যাত্রীদের মধ্যেও অটোরিকশা চলাচলের পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে মিশ্র মতামত।
রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা সজিব আহমেদের সঙ্গে। বাসা সাগুফতা হাউজিং থেকে মিরপুর-১১ নম্বরে তার যাতায়াতের বাহন অটোরিকশা, ভাড়া ৩০ টাকা। সজিব আহমেদ বলেন, রিকশাচালকদের আন্দোলনের কারণে সকাল থেকে এখানে কোনো গাড়ি নেই। আসার সময় বাসে করে এলেও ফেরার পথে হেঁটেই যেতে হচ্ছে। এভাবে হঠাৎ করে রিকশাগুলো তুলে দেওয়া উচিত হয়নি।
একই কথা বলেছেন মেট্রোরেল স্টেশনে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী আফসানা যুথী। তিনি বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, যাব কালশি মোড়। এখান থেকে রিকশা ভাড়া ২০ টাকা। অথচ কয়েকটা রিকশা এলো-গেল, ৪০ টাকার নিচে যাবে না।’
মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের কাছেও কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারাও বিকল্প ব্যবস্থা না করে এভাবে অটোরিকশা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সব স্থানে রিকশার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেকে পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরছেন।
আতিকুর রহমান নামে এক যাত্রী ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে বললেন, ‘প্যাডেলে চালিত রিকশায় চালকের যে কায়িক শ্রম, তা এই সময়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলনামূলকভাবে দ্রুতগতিতে যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। প্যাডেলে চালিত রিকশার তুলনায় ভাড়াও কম। যদি মনে হয় এটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুক।
কীভাবে এই ঝুঁকি কমানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ করুক। বিশেষজ্ঞদের অনেককেও তো দেখি অটোরিকশার ঝুঁকি কমানোর নানা সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। সেগুলো নিয়ে সরকার কাজ করুক।’
তবে অটোরিকশা তুলে দেওয়া পক্ষেও মতামত দিয়েছেন অনেকে। এর পেছনে তাদের সবারই বিবেচনা একটিই— দুর্ঘটনার ঝুঁকি। তাদেরই একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। এ রকম দুই রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন তিনি।
মতিঝিলে এলাকায় কথা হচ্ছিল শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই রিকশাগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পায়ে ব্যথা পেয়ে সাত দিন বেড রেস্টে থাকতে হয়েছে। এসব রিকশা তুলে দেওয়াই উচিত।’
সাইফুল্লাহ তামিম ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘এলাকার অলিগলিতে অটোরিকশা চলতে পারে, কিন্তু মহাসড়কে কোনোভাবেই চলতে দেওয়া উচিত হবে না। এদের গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। রাস্তা পার হওয়ার সময় এদের নিয়ে সবচেয়ে ভয়ে থাকতে হয়।’ তার এ মন্তব্যে সায় দিয়েছেন ৬৯১ জন।
তবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আকতার হোসেন নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘মানুষ দিয়ে মানুষ টানার কঠোর ও অমানবিক দৃশ্য আর দেখতে চাই না। ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে সবসময় ছিলাম, এখনো আছি।’ তার স্ট্যাটাসের পক্ষেও সায় দিয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। তবে মন্তব্যের ঘরে বেশির ভাগেরই অভিমত ব্যাটারিচালিত রিকশা অলিগলিতে চলার অনুমতির পক্ষে।
শুধু দুর্ঘটনাই নয়, ছোট ছোট যানবাহনকে যানজটেরও প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলেন, ‘নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যারাই আসুক না কেন, তারা শহরের রাস্তাগুলো ছোট ছোট গাড়ির জন্য ছেড়ে দেন। এতে গণপরিবহণ উপেক্ষিত হয়। বাসের ৫০ জন যাত্রী যখন দেখেন যে গাড়িটি ধীরগতিতে চলছে, তখন নেমে ছোট গাড়িতে চলে যান। এ রকম হলে শহর থেকে কোনোদিন যানজট যাবে না।’
কালের আলো/এমএএইচইউ