পোশাক রপ্তানির দৌড়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ 9:55 am | November 21, 2024

মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিট পোশাক রপ্তানিতে বৈশ্বিক জায়ান্ট চীনের আধিপত্য ঠেকিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই বাজার অনেকটাই দখল করে নিচ্ছে তাঁরা। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে এখনও মোটেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ রপ্তানি করে এই সময়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে অন্যতম রপ্তানি প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির গত দশ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য জানিয়েছে পোশাক শিল্প সম্পর্কিত সংবাদমাধ্যম অ্যাপারেল রিসোর্স। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কারণে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পোশাক রপ্তানি আরও কমতে পারে। সেই শূন্যস্থান বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পূরণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

অ্যাপারেল রিসোর্স তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন কমছে চীনের পোশাক রপ্তানি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে বাড়ছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টস বা ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত দশ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২২ সালে এই রপ্তানি উন্নীত হয় ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে। অবশ্য ২০২৩ সালে আকস্মিকভাবে এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় এক চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়ে রফতানি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে। যদিও এ সময় সামগ্রিকভাবেই কমে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক পণ্যের চাহিদা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি হ্রাস পেয়েছিল ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ, যার প্রভাবটাই মূলত পড়েছিল বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর।

দশকের পর দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে আসছে চীন। তবে এই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে গত এক দশকে। ২০১৪ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি ছিল ২৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৪৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। অ্যাপারেল রিসোর্সের প্রতিবেদনে এই রপ্তানি হ্রাসের কারণ হিসেবে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক টানাপোড়েনকেই দায়ী করা হয়েছে।

তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতির সুফল তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও ছাড়িয়ে গেছে ভিয়েতনাম। ২০১৪ সালেও যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমে যাওয়ার সুফল শুধু ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশই তোলেনি। ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোরও রপ্তানি বেড়েছে। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারত ও পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও ৩৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি ছিল ৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে এই রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে।

গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পাশাপাশি হ্রাস পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস এবং ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানিও। এরমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, মেক্সিকোর ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অ্যাপারেল রিসোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বদলাতে থাকা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সবচেয়ে বেশি সুফল তৈরি পোশাক খাতে ঘরে তুলেছে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। ওটেক্সার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বিষয় পরিষ্কার যে, পোশাকের ক্ষেত্রে দিন দিন চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা কমছে। ফলে চীনের বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে উঠে আসছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে