নীরবে নিভৃতে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস
প্রকাশিতঃ 2:52 pm | February 14, 2018
স্টাফ রিপোর্টার | কালের আলো:
১৪ ফেব্রুয়ারি মানেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের উন্মত্ততায় বুদ হয়ে থাকা। বাণিজ্যিকরণ ও মিডিয়ার কল্যাণে বেশ উৎসবমুখরভাবেই উৎযাপিত হয় দিবসটি। কিন্তু এই ভালোবাসাবাসির দিনেই যে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ তা ভোলেনি অনেকেই।
এখন প্রশ্ন হলো কেন এ দিবস পালন করা হয়? শহিদ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর সেনা শাসনের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন এরশাদ। আনন্দের ডামাডোলের মধ্যেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে সে দিনটির অবস্থা বর্ণনা করেছেন।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশে তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। সে বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত একটি কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ওই সমাবেশ ডাকে। কিন্তু সেখানে পুলিশ গুলি করলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সাবেক ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলছিলেন, “সেদিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিল বলে আমরা ধারণা করি। কিন্তু দুজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাকি মৃতদেহগুলো গুম করে ফেলে। তাদের স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে স্বজনদের কোন খোঁজ আর পাননি। সেদিন থেকে এই দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে বলা হয়।”
ছাত্রসমাজের দাবি ছিল একটি অবৈতনিক বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান যে নীতি ঘোষণা করেন, সেখানে বাণিজ্যিকীকরণ আর ধর্মীয় প্রতিফলন ঘটেছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। তাই শুরু থেকেই ওই নীতির বিরোধিতা করতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
সাবেক ছাত্রনেতা মোশতাক হোসেন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নানা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যোগ দেয়। মিছিলের সামনেই ছিলেন মেয়েরা। সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি যখন কার্জন হলের সামনে পৌঁছায়, তখন পুলিশ-বিডিআর মিলে ব্যারিকেড দেয়। তোপখানা রোডে ছিল সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। তখন শিক্ষার্থীরা সেখানে বসে বক্তৃতা দিতে শুরু করে। কিন্তু পুলিশ কোনরকম উস্কানি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। প্রথমে টিয়ারগ্যাস আর জল কামান ছোড়ে। ছাত্ররাও হাতের কাছে যা পেল, উল্টো ছুড়ে মারতে শুরু করলো। পুলিশের লাঠিচার্জের পর ছাত্ররা ব্যারিকেড ভেঙে যাবার চেষ্টা করে। এরপর পুলিশ গুলিবর্ষণ আর বেয়নেট চার্জ শুরু করে।”
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি অনেক মৃতদেহ পুলিশ ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু জয়নাল নামের একজন ছাত্রকে আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সেই মৃতদেহ বটতলায় নিয়ে এসে আমরা বিক্ষোভ করি। ওইদিন বিকেলে এবং পরের দিনও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলে।”
পুলিশ অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করে। মোশতাক হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, জয়নাল ছাড়া পরে মোজাম্মেল আইয়ুব নামের আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। জাফর, কাঞ্চন, দিপালী সাহা নামের একটি ছোট বাচ্চাসহ অনেকে নিখোঁজ হয়ে যায়, যাদের পরে আর কোন খোঁজ মেলেনি।
এর কিছুদিন পরে সরকার একটি ঘোষণা দিয়ে শিক্ষানীতিটি স্থগিত করে। বিবিসি বাংলা