সাকিবের শেষটা বিবর্ণ!
প্রকাশিতঃ 7:43 pm | October 01, 2024
স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলো:
১৭ বছর আগে ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক সাকিব আল হাসানের। তার পর লম্বা সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন। বাংলাদেশের হয়ে গড়েছেন অনেক কীর্তি। যার শেষটা হয়ে থাকলো বিবর্ণ! ভারতের বিপক্ষে কানপুর শেষ ইনিংসে বিবর্ণ সাকিবকেই পাওয়া গেলো।
শেষ এজন্যই বলা হচ্ছে, সাকিব নিজের শেষ টেস্ট হোম গ্রাউন্ডে খেলতে চেয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার এই ইচ্ছের বাস্তবায়ন হওয়া বেশ কঠিনই মনে হচ্ছে। বাস্তবতার আলোকে সম্ভবত ভারতেই থামতে হচ্ছে তাকে। আর সম্ভাব্য সেই বিদায়ী ম্যাচে সাকিবের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ‘শূন্য’ ! শেষ ইনিংসে ব্যাট ও বল দুই জায়গাতেই ফিরেছেন খালি হাতে। পাকাপাকি ভাবে বিদায় বলা না গেলেও বিদেশের মাটিতে নিশ্চিত ভাবেই বিদায়ী ম্যাচ! এই ম্যাচে সাকিব হারের তিক্ত স্বাদও নিয়েছেন।
দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে বাংলাদেশকে হারাতে ভারতের আড়াই দিনও লাগেনি। কানপুর টেস্টের প্রথম দিন মাত্র ৩৫ ওভার খেলা হয়েছিল। ওই অবস্থায় সবার ভাবনাতে ছিল ম্যাচটি বুঝি নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু চতুর্থ দিন ব্যাট হাতে খেলতে নেমে ভারত টেস্ট ম্যাচটিকে বানিয়ে ফেলে টি-টেন। আগ্রাসী ঘরানার সেই কৌশলেই শেষ পর্যন্ত অনায়াস জয় তুলে নিয়েছে তারা। কানপুর টেস্টে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে। তাতে দুই ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত দল।
শেষ বেলায় সাকিবের এমন পারফরম্যান্স ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটূ। শেষ দিনে ২ বল খেলে ‘শূন্য’ রানে বিদায় নিয়েছেন। জাদেজার বলে রিটার্ন ক্যাচ হয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন তিনি। হয়তো এটাই শেষবারের মতো ফেরা। যদিও বিষয়টিতে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। সাকিব দেশে ফেরার জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। সেটি পেলেই কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলবেন তিনি। সাকিবের এই ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা সেটি সময়ই বলে দিবে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেই সম্ভবানা খুব ক্ষীণই বলা চলে। কেননা সাকিব কেবল একজন ক্রিকেটারই নন, তিনি আওয়ামী লিগ সরকারের সংসদ সদস্যও।
সম্ভাব্য শেষ টেস্ট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় ছিল সাকিবের পারফরম্যান্স। সেই আলোচনার মাঝেই ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে সাকিব দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৯ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে রানের খাতা খুলতে পারেননি। তবে বল হাতে প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে সঙ্গী হয়েছে শুধুই শূন্য। ৩ ওভার বোলিং করে ১৮ রান খরচ করেছেন। পাননি কোনও উইকেট। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে সাকিবের দেশে ফেরার ‘সমীকরণ’ না মিললে সাকিবের শেষ টেস্টের পারফরম্যান্স হয়ে থাকলো এটাই।
কানপুরে এই টেস্টের অর্ধেকটা গেছে বৃষ্টির পেটে। প্রথম দিনে বাংলাদেশ ৩৫ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে। এরপর টানা আড়াই দিন বৃষ্টিতে একটি বলও গড়ায়নি। সোমবার ম্যাচের রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়াতে মাঠে গড়ায় চতুর্থ দিন। কিন্তু প্রথম ইনিংসে দারুণ শুরুর পরও নাজমুল হোসেন শান্তর দল গুটিয়ে যায় ২৩৩ রানে। জবাবে লাঞ্চ বিরতির কিছুক্ষণ পর ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড় তোলে ভারত। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ে দ্রুততম সময়ে মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে তারা।
৫২ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে। কিন্তু ২৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই দিতে থাকে বিপদের বার্তা। মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে ম্যাচ বাঁচাতে প্রতিরোধ গড়তে হতো ব্যাটারদের। কিন্তু দিনের শুরু থেকেই ব্যাটারাদের আশা যাওয়ার মিছিলে কিছুতেই কিছু হয়নি। ৩ উইকেটে ৯১ রান থেকে ৭ উইকেটে স্কোর দাঁড়ায় ৯৪। একে একে আউট হন শান্ত, সাদমান, লিটন ও সাকিব। সাদমান ছাড়া বাকি তিনজনই ফিরেছেন রবীন্দ্র জাদেজার বলে। প্রথম ইনিংসে শান্ত কিছুটা রান করলেও বাকিরা ছিলেন ব্যর্থ। আর দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমানই যা একটু লড়াই করেছেন, বাকিরা কেউ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
অথচ সাদমান আর নাজমুলের ৫৫ রানের জুটি আশা জাগিয়েছিল। তখনই রবীন্দ্র জাদেজার বলে উদ্ভটভাবে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে তার পর বিদায় নেন সাদমানও। এরপর মুশফিক-লিটন-সাকিবের ওপর বড় প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও এই তিনজন হতাশা উপহার দিয়েছেন। রবীন্দ্র জাদেজার করা অফ স্টাম্পের বাইরে বলটি টার্ন ও বাউন্সে লিটনের গ্লাভসে লেগে চলে যায় পন্তের হাতে। ১ রান করেই বিদায় নেন লিটন।
এরপর জাদেজার বলে তার হাতেই সহজ ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। তাতে তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসের পর্দা নামলো শূন্য রানে। পরে মুশফিক যা করেছেন সেটা ছিল অবিশ্বাস্য। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে ওভারের শেষ বলে উড়িয়ে খেলতে গিয়ে বুমরার বলে বোল্ড হন তিনি। তার বিদায়েই ৪৭ ওভারে ১৪৬ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। এই ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫০ রান আসে সাদমানের ব্যাট থেকে। মুশফিক খেলেন ৩৭ রানের ইনিংস।
ভারত ৯৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসের মতো টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলে ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছেছে। আগ্রাসী খেলতে গিয়ে ৩৪ রানের মধ্যে অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৮) এবং শুবমান গিলকে (৬) হারালেও এরপরই শুরু হয় জশস্বী জয়সওয়াল আর বিরাট কোহলির তাণ্ডব। তৃতীয় উইকেটে দুজনে মিলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। ৪৫ বলে ৮ চার ১ ছক্কায় ৫১ রান করে আউট হন জয়সওয়াল। এরপর জয়ের বাকি পথটায় কোহলির সঙ্গী হন ঋশভ পান্ত। নিজের মুখোমুখি হওয়া পঞ্চম বলে তাইজুলকে বাউন্ডারি মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ভারতের উইকেটকিপার ব্যাটার। কোহলি ৩৭ বলে ২৯ এবং পান্ত ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ