এখনও পলাতক ৯০০ বন্দি, স্থবির পদোন্নতিতে গতিশীলতা আনতে চান কারা মহাপরিদর্শক
প্রকাশিতঃ 8:43 pm | September 17, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের কারাগারগুলোতে শুরু হয় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। অনেক কারাগারে বন্দি আসামিরা বিদ্রোহ করে। অরাজক পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে পালিয়ে যান ২ হাজারের অধিক বন্দি। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া বন্দিসহ বিচারাধীন মামলার আসামিরা ছিলেন। এখন পর্যন্ত ৯০০ বন্দি পলাতক রয়েছে। হামলায় কারাগার থেকে লুট হয়েছিল ৯৪টি অস্ত্র। অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যেই ৬৫টি অস্ত্র উদ্ধার হলেও উদ্ধারের বাকী রয়েছে আরও ২৯টি অস্ত্র। হামলা ও ভাঙচুরের মুখে পড়ে মোট ১৭টি কারাগার। তবে সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক সহায়তায় কারা বিভাগ অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে দেশের অন্যান্য কারাগারগুলো সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়।
কঠিন বাস্তবতায় কারাগারে শৃঙ্খলা ফেরাতে কারা মহাপরিদর্শক পদে পরিবর্তন আনার পর এবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের কারাগারসমূহ। কারা নিরাপত্তার হালহকিকত ও নানাবিধ গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সামগ্রিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বকশিবাজারের কারা অধিদপ্তওে প্রায় ঘন্টাব্যাপী এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
- কারাগারকে সেবাগ্রহণকারীদের আস্থাভাজন হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়
- যারা রেয়াত পাওয়ার যোগ্য, তাদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে
- এখন পর্যন্ত মোট ৭০ জন জঙ্গি পলাতক
- কারাগারে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা চিহ্নিত
- মাদকাসক্ত কেউ কারা বিভাগে চাকরি করতে পারবে না
- ৩৭ জন এমপি-মন্ত্রী কারাগারে, ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন ৯ জন
এর আগে গত রবিবার (১১ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তা সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। প্রথমেই তিনি দেশের কারাগারগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে মনোনিবেশ করেন। বিপুল প্রত্যাশাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন এবং কারাগারগুলোকে প্রকৃত অর্থেই সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে জোর দেন। প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা প্রণয়নসহ দক্ষতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়নে গ্রহণ করেন নানামুখী পদক্ষেপ। গণমাধ্যমের সঙ্গে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আলাপে তিনি উপস্থাপন করেন যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত। সোজা-সাপ্টা জবাব দিয়েছেন নানা প্রশ্নেরও।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত মোট ৩৭ জন এমপি-মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জনকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে সাধারণ মানুষসহ কতজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বের হয়ে এসেছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এ রকম আলোচিত মোট ৪৩ জন বন্দি এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান, কারা উপ মহাপরিদর্শক মনির আহমেদসহ উর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৯০০ বন্দি এখনও পলাতক
ব্রিফিংয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পরে দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খলা-বিদ্রোহ করে বন্দিরা। বিভিন্ন কারাগারসহ কোনো কোনোটিতে হামলা চালানো হয় বাইরে থেকে। এ পরিস্থিতিতে ২ হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া বন্দিসহ বিচারাধীন মামলার আসামিরা রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৯০০ বন্দি পলাতক রয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের পট পরিবর্তনের সময়কালে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বাংলাদেশের কারা অধিদপ্তর এর ব্যতিক্রম ছিল না। বেশ কয়েকটি কারাগারে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এবং প্রায় দুই হাজারের অধিক বন্দি কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত অনেক বন্দিদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি দুই একজন আসামি ফিরেও এসেছে। ৯০০ বন্দি এখনও পলাতক রয়েছে।
আইজি প্রিজন্স বলেন, কয়েকটি কারাগার থেকে গোলা-বারুদ লুটের ঘটনাও ঘটে এবং কয়েকটি কারাগারে পালানোর সময় কয়েকজন বন্দির মৃত্যুসহ অনেক কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী গুরুতর আহত হন। অগ্নিসংযোগ এবং ব্যাপক ভাঙচুরের ফলে দুটি কারাগারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। অনেক কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসস্থলও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক সহায়তায় কারা বিভাগ অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে অন্যান্য কারাগারগুলো সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, পরবর্তী দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া অধিকাংশ বন্দিকেই কারাগারে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হয়। এর মধ্যে কিছু বন্দি নিজ ইচ্ছায় এবং বাকিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে কারাগারের লুট হওয়ায় অস্ত্র ও গোলাবারুদের উল্লেখযোগ্য অংশও উদ্ধার করা হয়েছে, অবশিষ্টগুলো উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
কারাগারকে সেবাগ্রহণকারীদের আস্থাভাজন হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়
কারাগারকে সেবাগ্রহণকারীদের আস্থাভাজন হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, কারাগারকে প্রকৃত সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা প্রণয়নসহ দক্ষতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পদায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন পূর্বক স্থবির পদোন্নতির ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনায়নসহ জনবল বৃদ্ধির ন্যায় ন্যায্য দাবিগুলোর বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে যথাযথ তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এক্ষেত্রে কারা বিভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করছে যে, এখন থেকে কারা বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুততার সঙ্গে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কারাগারে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আমরাও আমাদের মতো করে তদন্ত করছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
যারা রেয়াত পাওয়ার যোগ্য, তাদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে
ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যেসব বন্দিরা সাজাভোগ করেছেন, তারা রেয়াত পেতে পেতে মুক্তি পেতে পারেন। যখন তারা মুক্তির আওতায় চলে আসেন, তখন তারা মুক্তি পেতে পারেন। যারা মুক্তির আওতায় চলে আসেন, তাদের বিষয়ে প্রস্তাবনা আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঠাই। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেটিংয়ের পর চূড়ান্তভাবে যদি মাফ করতে হয় সেটি রাষ্ট্রপতি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে মাফ করার অধিকার রাষ্ট্রপতির। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান উপদেষ্টাও পারেন। এ রকম অনেক বন্দিদের বিষয়ে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আছে। এই বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করছি। এই বিষয়ে অতি শিগগিরই একটি বৈঠকের প্রস্তাবনা আছে। যারা অক্ষম চলাফেরা করতে পারে না, অথবা যারা রেয়াত পাওয়ার যোগ্য, তাদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
এখন পর্যন্ত মোট ৭০ জন জঙ্গি পলাতক রয়েছে
পলাতক বন্দিদের মধ্যে জঙ্গি কতজন রয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত নয়জন জঙ্গি পালিয়েছে। এছাড়া, বিচারাধীন মামলার অনেক জঙ্গি পালিয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৭০ জন জঙ্গি পলাতক রয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে কারা মহাপরিদর্শক আরও বলেন, সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি পালিয়ে ছিল মোট ৯৮ জন। এদের মধ্যে অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার, বন্দি ৫০ হাজারেরও বেশি
বর্তমানে দেশের সব কারাগারের ধারণক্ষমতা কত ও বর্তমানে কতজন বন্দি রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের সব কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজারেরও কিছু বেশি। এই মুহূর্তে আমাদের কারাগারে আছে ৫০ হাজারেরও বেশি বন্দি।
কারাগারে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা চিহ্নিত, চলছে অভ্যন্তরীণ তদন্ত
কারাগারে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলমান রয়েছে বলেও জানান কারা মহাপরিদর্শক। তিনি এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘যেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোটা দাগে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে আমি অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিচ্ছি। এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা শিগগিরই দেখা যাবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে সৎ কর্মকর্তাদের আমরা পদায়ন করছি। লম্বা সময় ধরে কিছু লোক একই জায়গায় কাজ করছিল, তাদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
ক্ষোভের বহি:প্রকাশেই কারাগারে হামলা
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন কারাগারে হামলা হয়েছে। এ সময় সাধারণ মানুষদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। এরা আসলে কারা ছিল? কারা কর্তৃপক্ষ তাদের চিহ্নিত করেছে কিনা, এমনটি জানতে চাওয়া হয় কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন এর কাছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘তাদের শনাক্ত করার জন্য আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি। ৫ আগস্টের পরে যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে অনেক সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতেও হামলা হয়েছিল। কারাগার যেহেতু একটি ক্ষোভের জায়গা ছিল, এরই বহিঃপ্রকাশ এসব হামলা। তিনি আরও বলেন, যেসব কারাগারে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল, আমরা প্রতিটিতেই মামলা করেছি। মামলায় আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামি করতে পারিনি। কারণ পরিস্থিতি যেহেতু ভিন্ন ছিল। অজ্ঞাতনামা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে মূলত মামলা করা হয়েছে। ৮টি কারাগারে বিশৃঙ্খলার দায়ে মোট ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। আমাদের ৫টি কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়েছে, সে সংক্রান্ত ৫টি মামলা হয়েছে। সবমিলিয়ে আমাদের ১৭টি কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
মাদকাসক্ত কেউ কারা বিভাগে চাকরি করতে পারবে না
গণমাধ্যমের প্রশ্নে ওঠে আসে কারাগারের কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্টের বিষয়টিও। এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক সাফ সাফ জানিয়ে দেন, মাদকাসক্ত কেউ কারা বিভাগে চাকরিরত অবস্থায় থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আমি যোগদান করার পর মাদকের বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ পাচ্ছি। আসলে এই বিষয়ে আমরা শঙ্কিত। মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ বন্দিদের বিষয়ে যেমন পাচ্ছি, তেমনি কারারক্ষী এবং কারা কর্মকর্তাদের বিষয়েও পাচ্ছি। এই বিষয়ে আমাদের সবচেয়ে আশঙ্কার জায়গাটি হলো যে, এটিকে আমরা খুঁজে কীভাবে বের করব। কারাগারে যেন মাদক না ঢুকতে পারে, সেই বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনের ঘটনায় কোন বন্দি নেই
জুলাই ও আগস্টে আন্দোলন চলাকালে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল, তাদের মধ্যে কতজন বন্দি এখনো কারাগারে আছে, আর কতজন জামিন পেয়েছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন চলার সময় যেই ধরনের মামলা হয়েছিল এবং গ্রেপ্তার হয়েছিল এ ধরনের বন্দি এখন আমাদের কাছে নেই। সবাই জামিন প্রাপ্ত হয়ে গেছেন এবং জামিনে বের হয়েছেন। আন্দোলনের কতজন বন্দি জামিনে বের হয়ে গেছে তার সঠিক সংখ্যাটা বলা মুশকিল। তবে, সেই সময় আমাদের বন্দি সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার, এখন তা ৫৫ হাজার। তাহলে বলা যায় ওই সময় এসব মামলায় গ্রেপ্তার প্রায় ১৫ হাজার বন্দি ধীরে ধীরে জামিন পেয়ে বের হয়েছেন।’
কারাগারে মোট বিদেশি বন্দি ১৪৩
বিভিন্ন সময় দেখা যায়, বিদেশি বন্দিরা সাজা ভোগ করার পরও অনেকে কারাগারে থেকে যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স বলেন, ‘বিদেশি বন্দিদের সাজা শেষ হয়ে গেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পরে আমরা তাদের ডি-পোর্ট করি। এখন আমাদের কারাগারে মোট ১৪৩ জন বিদেশি বন্দি রয়েছে। আমরা যদি ক্লিয়ারেন্স পাই, তাহলে আমরা তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।’
২৮ মন্ত্রী-এমপি’র ডিভিশনের বিষয়ে পর্যালোচনা
গত ৫ আগস্টের পরে যেসব মন্ত্রী এবং এমপিরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তারা কারাগারে কোনো ডিভিশন পাচ্ছেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে আসলে ডিভিশন পেয়ে যান। বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা এমপি-মন্ত্রী আছেন, তারা আবেদন করবেন অথবা এ বিষয়ে আদালত বললে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর যাদের বিষয়ে আদালত বলবে না, তারা যদি আবেদন করেন, তখন সে আবেদনটি আমরা ডিসির কাছে পাঠাবো। ডিসি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা তাদের ডিভিশন দিতে পারব। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের কাছে বিশেষ বন্দি (এমপি-মন্ত্রী) মোট ৩৭ জন… তাদের মধ্যে নয়জন ডিভিশন পাচ্ছেন। আর বাকী ২৮ জনের বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
কালের আলো/এমএএএমকে