শিল্পাঞ্চলে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলকারীরা বহিরাগত: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 4:03 pm | September 04, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেছেন, ‘শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে যারা বিশৃঙ্খলা করছেন, তারা শ্রমিক নন, বহিরাগত।’ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিসকক্ষে এক বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

বুধবার সকাল থেকে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন পোশাকশ্রমিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণার খবর পাওয়া গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈঠকে বসেন কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের বৈঠকটা হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে। আমাদের কথা হচ্ছে প্রকৃত শ্রমিক যারা, তারা অন্তত নিজের বাড়ি (কর্মস্থল) পোড়াবে না। শ্রমিকরাই বলেছেন, প্রকৃত শ্রমিকরা এ ধরনের কোনও বিশৃঙ্খলা করছেন না। কারণ এটা তাদের জীবিকা।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন যেগুলো আমাদের ভাইব্রেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, যেমন প্রাণ কোম্পানিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। সেখানে তো কখনও শ্রমিক বিশৃঙ্খলা ছিল না। এটা যদি নষ্ট হয়, তাহলে ফরেন কারেন্সি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। লোকাল ইন্ডাস্ট্রি নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে কার লাভ হবে? এসব বিষয় চিন্তা করেই আমাদের এগোতে হচ্ছে। শ্রমিকরা এখানে কোনও ডিস্টার্ব করছে না। যারা করছে, তাদের অধিকাংশই বহিরাগত। এসব বহিরাগতকে কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, সেজন্য হয়তো আমাদের একটু কঠোর হতে হবে, শক্ত হতে হবে।’

বর্তমান সরকার এ কয়েকদিনে নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ফোর্স ব্যবহার করেনি, করবেও না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, আমার ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে গেলে, শ্রমিককে বাঁচাতে গেলে, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে গেলে, কিছু সংখ্যক এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সে ব্যাপারেই আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সে পদক্ষেপগুলো কী, সেটা আপনারা আগামীতে দেখতে পাবেন।’

পুলিশ যাতে সাধারণ মানুষের হাতে নিবৃত্ত না হয়, সেই পদক্ষেপ পুলিশকেই নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে অপকর্মের পর অপকর্মের কারণে পুলিশের যে মনোবল নষ্ট হয়েছে, সেটা তো একটা ট্যাবলেট খাওয়ালেই ঠিক হবে না। এখানে সবার সহযোগিতা দরকার। এটা তাদের হারানো জিনিস, তাদেরই ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা তাদের আশ্বাস দিতে পারবো, কিন্তু মূল কাজটা নির্ভর করছে তাদের নিজেদের ওপর। তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর।’

আজ রাত ১২টা থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান শুরু হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। এরপর যাদের এই অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

পুলিশের ইমেজ ফেরাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে এমন কিছু নেই যে, আমি একদিনেই তাদের ইমেজ ফিরিয়ে আনবো। তবে ধীরে ধীরে পুলিশের ইমেজ ফিরে আসছে। আমাকে সময় দিতে হবে, একদিনে তো আর কিছু করা যাবে না।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলনে শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে না, তবে টাকা দিয়ে যাদের এসব আন্দোলনে নিয়ে আসা হয়; সেসব টোকাইদের দেখা যাচ্ছে। শ্রমিকদের কিছু দাবি আছে, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদি। যেমন বেতন বাড়ানো, শ্রম আইন সংশোধন। এগুলো তো একদিনে করা যাবে না। তারপরও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, তারা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যারা বহিরাগত তাদের আলাদা করেন। শ্রমিকদের আলাদা করেন। যারা ছোট ব্যবসা নিয়ে সন্ত্রাস করছে, আওয়ামী লীগের লোকেরা যেসব সিন্ডিকেট চালাতো, তারা সেগুলো ছেড়ে চলে গেছে। এখন যারা দখলের চেষ্টা করছে এবং বহিরাগত যারা শৃঙ্খলার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ

Print Friendly, PDF & Email