প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বৃক্ষ সাংবাদিক
প্রকাশিতঃ 3:35 pm | February 11, 2018
আলম রায়হান:
বাংলাদেশের কাণ্ডারি হিসেবে কেন শেখ হাসিনা? এমন প্রশ্ন আছে হাজারো জনের; লাখো বললেও বেশি বলা হবে না হয়তো। কিন্তু ‘ভাং গাড়ি’ মানসিকতায় অনেকেই আছেন যারা শেখ হাসিনার রাজনীতি-ক্ষমতা ভেঙে খান খান করে দিতে পারলেই যেন অন্তরে শান্তি পান। অপার শান্তি!
কেবল ভাঙার গীত যারা গাইছেন তাদের প্রশ্ন করব, চলমান জটিল বিশ্বে জটিলতম বাংলাদেশের কাণ্ডারি হিসেবে তাদের বিবেচনায় কে আছেন? এ প্রশ্নের জবাব আসলে তারা দিতে পারবেন না। কারণ সোনার পাথরবাটি যেমন হয় না, তেমনি এ প্রশ্নেরও গ্রহণযোগ্য কোনো উত্তর হয় না।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় শেখ হাসিনার অনিবার্যতা প্রসঙ্গে হাজারো উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তবে সবশেষ উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করানো যায় বরিশালের লুসি প্রসঙ্গ। লুসিকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ঘটনাচক্রে পেয়ে যান সাংবাদিক অপূর্ব অপু, সেই থেকে তিনি লেগেই ছিলেন। এ জন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে, অফিসের চাহিদা অনুসারে তথ্য সংগ্রহের জন্য ৭১ সালে মুক্তযুদ্ধকালীন লুসির খোঁজখবর নিতে অপুকে যশোরও ছুটতে হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে নানান অনুসন্ধানে অনেক অজানা তথ্যের পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন লুসির কাছে ১৯৭৩ সালে লেখা বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ রেহানার পত্রও। লুসিকে নিয়ে টেলিভিশনে রিপোর্ট করা ছাড়াও স্থানীয় দৈনিক দক্ষিণের মুখেও লিখেছেন অপূর্ব অপু। তিনি যেন সাংবাদিকতা নিয়েছেন মিশন হিসেবে।
অপূর্ব অপুর মতো অনেক সাংবাদিক এখনো আছেন বরিশালে গিজগিজ করা অসংখ্য আগাছার মধ্যেও; যে আগাছা সৃষ্টি হয়েছে বৃষবৃক্ষের ছায়াতলে থেকে প্রায় তিন দশক ধরে। তবে অক্সিজেন উৎপাদনকারী বৃক্ষেরও যে অভাব নেই তাও প্রমাণ হলো লুসির ঘটনার মধ্য দিয়ে। মূলত অপূর্ব অপুর সাংবাদিকতার কারণেই ৮ ফেব্রুয়ারি ভিসা ফি-মুক্ত পাসপোর্ট পেলেন ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট; যিনি মানবতার সেবা করার কাজ করতে করতে আবেগের বন্ধনে জড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের মাটির সঙ্গে। তিনি এই মাটিতেই নিতে চান শেষ শয্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ১৫ বছরের জন্য ভিসা ফি-মুক্ত পাসপোর্ট গ্রহণ করেন ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট। তাকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া যায় কি না তা বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সাংবাদিক অপূর্ব অপুকে প্রকৃত সাংবাদিকতার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিটিশ নাগরিক লুসি ১৯৬০ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন এবং যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। কর্মজীবন থেকে ২০০৪ সালে অবসরে যাওয়া লুসি এখনো দুঃস্থ শিশুদের মানসিক বিকাশ ও ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছেন। প্রায় ছয় দশক ধরে বাংলাদেশকে ভালোবেসে কাজ করা ব্রিটিশ নাগরিক লুসি।
প্রায় ৫৭ বছর আগে অক্সফোর্ড মিশনের একজন কর্মী হিসেবে লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন তার যৌবনে। সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের প্রতি। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহতদের সেবা করেছেন জীবনের মায়া ত্যাগ করে। স্বাধীনতার পরও তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। তিনি ভালোবেসেছেন এখানকার দুর্গত মানুষদের। তাই তো মৃত্যুর পরও যেন তাকে বরিশালের মাটিতে সমাধিস্থ করা হয়- কেবল এইটুকু চাওয়া তার।
প্রতিবছর ভিসা নবায়ন ফি দিতে সমস্যা হওয়ার কারণে এই ফি মওকুফসহ বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান লুসি। ইতোপূর্বে বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকে লুসির এ আবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান আসার পর নতুন করে আবেদন তৈরি করেন এবং তা পাঠান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লুসি হল্টের ভিসা ফি মওকুফ করে ১৫ বছরের বহুমুখী ভিসা দেওয়া হয়।
বরিশাল কেবল নয়, সারা দেশেই অন্যান্য পেশার মতো সাংবাদিকতায়ও আগাছার প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক অবস্থানে পৌঁছেছে। এ নিয়ে নানান উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় প্রায়ই; কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজটি করা হয় না প্রায় ক্ষেত্রেই। সেটি হলো, প্রকৃত সাংবাদিকদের লালন করা। বৃক্ষ লালনের বদলে আগাছা নিয়ে করা হয় বেশি হা-হুতাশ। এতে আগাছা কেবলই বাড়ে এবং হতাশার দিকে ধীরলয়ে হলেও যেতে থাকে বৃক্ষকুল। বরিশালে এ বাস্তবতা যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান। কাছেই মোনাজাত উদ্দিন-নাজিমউদ্দিন মোস্তানসহ অসংখ্য ইতিবাচক উদাহরণ বিবেচনায় রেখে সারা দেশে অপুদের মতো সাংবাদিক লালন করা প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে। হয়তো এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই উদ্যোগী হতে হবে; যেমন তিনি হয়েছেন লুসির বেলায়।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট।