বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন সেই দেলোয়ার

প্রকাশিতঃ 4:57 pm | April 23, 2024

নাটোর প্রতিবেদক, কালের আলো:

নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহৃত ও মারধরের শিকার সেই দেলোয়ার হোসেন।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেলোয়ার হোসেনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কোনো পদে একক প্রার্থী থাকলে আইন অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে পারেন।

যেহেতু সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দেলোয়ার হোসেন ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী নেই, তাই আজ দেলোয়ার হোসেনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্ধারিত তারিখে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা লুৎফুল হাবিব রুবেল ও দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রোববার (২১ এপ্রিল) সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম হয় অপহরণ ও মারধরের শিকার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের।

এদিকে দেলোয়ার হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তার বড় ভাই মজিবর রহমানসহ স্বজনরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তারা সাংবাদিকদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নির্বাচিত চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে এবং নির্বাচিত হওয়ার খবরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার হোসেন ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এ সময় জরুরি প্রয়োজনে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে সেখান থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে দেলোয়ার হোসেন নির্বাচন অফিস থেকে নেমে এলে তাকেও একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে গাড়ির ভেতর বেদম মারধর করে।

পরে বিকেলে দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে (সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে দিয়ে চলে যায়। চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়। দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করে যে গাড়িতে তোলা হয় সেটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফুল হাবীব রুবেলের। পরে আহত দেলোয়ার হোসেনের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা এ ঘটনার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলের স্বপক্ষে সংশ্লিষ্টতার কথা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেন।

এছাড়া ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত সেই কালো রঙের মাইক্রোবাসসহ মো. আতাউর রহমান (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। একই সঙ্গে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে দুটি চায়না চাপাতি, একটি চায়না টিপ চাকু, একটি বার্মিজ কাটার, দুটি দেশীয় রামদা, দুটি স্টিলের পাইপ, দুটি স্ট্যাম্প/লাঠি, একটি চাপাতি, নির্বাচনের পোস্টার, হ্যান্ডবিল, ক্যালেন্ডার জব্দ করা হয়।

পাশাপাশি ওই মাইক্রোবাসটি থেকে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিব রুবেলের অসংখ্য লিফলেট, স্টিকার, ক্যালেন্ডার সম্বলিত পোস্টার ছবিও জব্দ করা হয়।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিংড়া উপজেলার চকপুর গ্রামের নিজ বাড়ির গ্যারেজ থেকে ওই মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়।

এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় আরও তুঙ্গে ওঠে। এছাড়া চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ারকে দেখতে যান এবং চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।

এ ঘটনায় শ্যালক রুবেলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন পলক। একই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোনো মন্ত্রী, এমপি বা আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয়-স্বজন কেউ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না।

কালের আলো/এমএইচ/এসবি