প্রবাসীদের ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম হ্যাক করে ব্লাকমেইলিং, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশিতঃ 6:15 pm | April 20, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল দুজন ব্যক্তি। তারা ব্লাকমেইলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এসব কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ‍দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন – শামীম আহমেদ জয় (২৩) এবং মোহাম্মদ স্বাধীন আহমেদ (১৮)। তাদের কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি সিপিইউ, দুটি মোবাইল ফোন, একটি রাউটার ও ১২টি ভুয়া এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দখলে থাকা প্রায় ৫০০ দেশি-বিদেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া যায়।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসি প্রধান জানান, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই হ্যাকারের টার্গেট। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শামীম আহমেদ জয়।

প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বনিম্ব এক হাজার ডলার নিতেন তিনি। মায়ের অসুস্থতার কথা বলে, অথবা গোপন তথ্য ও ছবি ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী তাকে টাকা দিয়েছেন। এভাবে অনেক মানুষকে তিনি সর্বস্বান্ত করেছে। শত শত মানুষকে প্রতারিত করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে তদন্ত চলমান রয়েছে।

আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারের পর শামীম আহমেদ জয়ের দখলে থাকা প্রবাসীদের প্রায় ৫০০ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া গেছে।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সম্প্রতি কানাডায় বসবাসকারী এক প্রবাসীর আট হাজার ৫০০ কানাডিয়ান ডলার আত্মসাৎ করার ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতা সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে অভিযোগ করলে সাইবার-সিটিআই টিমের একটি চৌকস দল অভিযোগ তদন্ত করে হ্যাকিং চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর বাবা উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন। মামলাটি সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে হস্তান্তরের পর ডেমরা থানাধীন টেংরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত শামীম আহমেদ জয় জানান, আগে তিনি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে হ্যাক হওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ করতেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সাল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ওই অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের মেসেঞ্জারে ‘আমার মা স্ট্রোক করেছে, জরুরি টাকা দরকার, ৩০০০ ডলার পাঠাও’- এমন বিভিন্ন বার্তা পাঠিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা শুরু করে। হ্যাক করা অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেও আদায় করা হতো অর্থ। এমনকি হ্যাক করা আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ-স্পর্শকাতর তথ্য, গোপন ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

ব্লাকমেইল ও প্রতারণার স্বীকার হয়ে ভুক্তভোগীরা অস্ট্রেলিয়া থেকে রেমিটলি (Remitly) এবং কানাডা ও ইউএসএ থেকে ট্যাপট্যাপ (Taptap) এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ভুয়া এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল ফাইনান্সিয়্যাল নাম্বারে অর্থ পাঠানো হতো। পরে দূরবর্তী স্থানে ঘুরে ঘুরে আত্মসাৎ করা অর্থ উত্তোলন করতো অপর গ্রেপ্তারকৃত মোহাম্মদ স্বাধীন আহমেদ।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, আগে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে হ্যাক হওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ করার করতো গ্রেপ্তারকৃত শামীম আহমেদ জয়। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ পায় সে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ওই বাংলাদেশির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের পর সে অ্যাকাউন্টটি ফেরত না দিয়ে এর ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের মেসেঞ্জারে ‘আমার মা স্ট্রোক করেছে। জরুরি টাকা দরকার। ৩০০০ ডলার পাঠাও।’ এমন সব বার্তা পাঠিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা শুরু করে।

এছাড়াও ওই অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে তাদের অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অথবা অ্যাকাউন্টের সমস্যা সমাধান করে দেয়ার কথা বলে একটি মোবাইল নাম্বার অথবা একটি ইমেইল অ্যাড্রেস অ্যাড করার অনুরোধ করতো। ভূক্তভোগী মোবাইল নাম্বারটি অথবা ইমেইল অ্যাড্রেসটি অ্যাড করলে শামীম আহমেদ জয় টার্গেট অ্যাকাউন্টটিতে ‘ফরগেট পাসওয়ার্ড’ অপশনটি ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত। এরপর একটি লেমিনেটিং মেশিন ব্যবহার করে ভূক্তভোগীদের নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে ফেসবুকে সাবমিট করে হ্যাককৃত অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত। এছাড়াও হ্যাককৃত অ্যাকাউন্টের গোপন তথ্য ও ছবি ছড়িয়ে দেয়ায় হুমকি দিয়েও অনেক ভুক্তভোগীকে অর্থ দিতে বাধ্য করেছে গ্রেপ্তারকৃত শামীম আহমেদ জয়।

হ্যাকারদের কাছ থেকে বাঁচতে যেসব পরামর্শ সিটিটিসি প্রধানের:
> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইমার্জেন্সির কথা কেউ বলে টাকা চাইলে সেটা যাচাই করা।
> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথাযথ সিকিউরিটি সেটিংস ব্যবহার করা।
> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো স্পর্শকাতর তথ্য, ছবি-ভিডিও শেয়ার ও সংরক্ষণ না করা।
> সাইবার স্পেসে অপরিচিত কোনো আইডি থেকে পাঠানো কোনো ওয়েবলিংকে প্রবেশ না করা।
> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কোনো ব্যবহারকারীর সঙ্গে বন্ধুত্ব না করা।

কালের আলো/ডিএস/এমএম