স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে প্রধানমন্ত্রী নিরলস পরিশ্রম করছেন : ডা. দীপু মনি

প্রকাশিতঃ 11:10 pm | March 26, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করছেন। স্বাধীনতা দিবসের শপথ হোক প্রতিটি মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোতে আনা।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন ’’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ.ফ.ম রুহুল হক এম পি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ খায়রুল আলম সেখ।

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য এবং একজন মানুষও যেন স্বাধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আমরা যারা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আছি আমাদের কাজ সে জায়গাটায়। একজনও যেন পিছিয়ে না থাকে। প্রত্যেককে আমাদের উন্নয়নের মূল ধারায় যতদূর সম্ভব নিয়ে আসতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা কাজটি করার সুযোগ পেয়েছি। সে দায়িত্বটি আমাদের ।

ডা. দীপু মনি মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর সংস্থার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যারা নতুন দায়িত্ব পেয়েছি এবং আপনারা যারা আগে তেকে কাজ করছেন , সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করবো। পিতা মুজিব যে কথাটি বলেছেন, তাঁর কন্যা যেটি মনে করেন, জনগণ মানে আমাদের সংবিধানের সাত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণ, দেশের সকল জনগণ। কোন সাম্প্রদায়গত কারনে, কোন বৃত্তির বা পেশার কারনে কিংবা ভৌগিলিক কারণে যে মনুষটি কোন ধরণের প্রন্তিকতার শিকার সে মানুষটি পর্যন্ত প্রত্যেকটি মানুষকে মূল ধারায় নিয়ে অসতে হবে। আমাদের সে কাজটি করতে গেলে সে দরদ দিয়ে, সেই ভালোবাসা দিয়ে সেই ইতিহাসবোধ দিয়ে দেশের প্রতি , মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে পিতা মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা নিয়ে আমাদের সে কাজটি করতে হবে।

তিনি বলেন, শহীদদের রক্তের প্রতি অঙ্গিকার নিয়ে আমাদের সমাজের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আজকে এ স্বাধীনতা দিবসে সে অঙ্গীকারটি করা আমাদের জন্য জরুরী। যে কাজটি করছি, আমরা সৌভাগ্যবান সমাজকে এগিয়ে নেবার, কল্যাণ করার, সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষটিকে হাত ধরে তাকে টেনে আমাদের উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসবার কাজটি করার সৌভাগ্য আমাদের । তাই সকলকেই নিষ্ঠার সাথে কাজটি করতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন। সেই জঞ্জাল আমাদের পরিষ্কার করতেই হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। তিনি আজকে দেশকে উন্নয়নের একটি জায়গায় নিয়ে এসছেন। আমরা আজকে যখন এই বিশাল বিশাল অবকাঠামো দেখি, পদ্মা সেতু , এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে , মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল , পায়রা সমুদ্র বন্দর, রুপপূর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখি, এসব কিছুই তাঁর নেতৃত্বের কারনে হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের দিকে সারা বিশ্ব অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে। পদ্মা সেতু করতে দেবেনা , সাহসী পিতার সাহসী কন্যা করে ফেললেন পদ্মা সেতু। সারা বিশ্বকে, বিশ্ব মোড়লদের চোখ রাঙানীকে উপেক্ষা করে, নিজস্বে অর্থায়নে সেতু হলো। সারা বিশ্বে মোড় ঘুরে গেল বাংলাদেশের । পৃথিবী সম্মানের সংগে সমীহ করতে শুর করলো বাংলাদেশকে । আজকে এ সমীহ ও সম্মান এসছে কারণ পিতা মুজিবের সুযোগ্য কন্যা আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমাদের এগিয়ে যেতেই হেবে। আমাদের কোন অপশন নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মের উপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস। আমরা একসময় বলতাম আামদের তরুণরা খুব আত্নকেন্দ্রিক। আামাদের তরুণরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ফেটে পড়লো। শাহবাগ থেকে সেটার ঢেউ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছিলো। আমাদের তথ্য প্রযুক্তির যে অগ্রগতি সেখানে তরুণরা এগিয়ে যাচ্ছে। যারা মিথ্যাচার দিয়ে জাতিকে বারবার বিভ্রান্ত করতে চায় । আমাদের অগ্রযাত্রাকে বারবার রুখে দিতে চায়, আবার তারা আামাদেরেকে সেই পাকিস্তান বানাতে চায় তাদেরকে রুখে দিতে হবে। আজকে তারা নতুন নতুন বিভাজন তৈরে করতে চায়।

ডা. দীপু মনি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুত্থান সম্পর্কে বিশদভাবে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা বাঙালি না মুসলমান এ প্রশ্ন ৫২ সালে মীমাংসা হয়ে গেছে। আমরা সবাই বাঙালি একই সংগে আমরা সবাই মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কিংবা কেহ যদি কোন ধর্ম বিশ্বাস না করে সেটি তার নিজস্ব বিষয়। আমরা বলেছি, ধর্ম নিয়ে কারো উপরে কেউ চাপাচাপি করতে পারবেনা। ইসলাম ধর্মের বিধানেও একই কথা আছে। যার যার ধর্ম তার তার কাছে।

তিনি বলেন, আজকে আবার হঠাৎ করে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বাঙালির যা কিছু তা নাকি মুসলমানের নয়? ‘কেন আমরা টিপ পরবো তাই নিয়ে কত প্রশ্ন। কেন আমরা ফাল্গুনের উৎসব করবো তাই নিয়ে কত প্রশ্ন। ধর্মবোধ, ধর্মের চর্চা একবারেই ব্যক্তির একান্ত বিষয়। ধর্মের রীতিনীতের মধ্যে কোথাও বলা আছে আমি আমার নিজের সংস্কৃতির কোন উৎসব পালন করতে পারবোনা? আমি বিশেষ রংয়ের কাপড় পরতে পারেবো না? আমি টিপ পরতে পারবো না? আরব কিংবা আফ্রিকার মুসলিমরাতো তাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করে ধর্ম কর্ম করছে। কেন মিমাংসিত বিষয় অমিমাংসিত করা হবে? ধর্মকে অপব্যবহারের বিরুদ্ধেও তিনি বক্তব্য রাখেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতি মানে উদ্ভট কথার জায়গা না। রাজনীতি মানুষকে নিয়ে, দেশকে নিয়ে, দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য কাজ করা, মানুষকে ভালোবাসা ,মানুষের জন্য কাজ করা । আমি করবো রাজনীতি, নামটা দেবো রাজনীতি আর আমি জঘন্য মিথ্যচার করবো , আমি ইতিহাস পাল্টাবো, ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলবো, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথচলাকে আমি বিঘ্নিত করে ফেলবো, এটা রাজনীতি নয়। অদ্ভুত ইতিহাস একেকবার শোনানো হয়। ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষনা হয়ে গেছে । এ গল্পও আমরা অনেকদিন শুনেছি।’

এর আগে মন্ত্রী সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম