প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতা

প্রকাশিতঃ 7:18 pm | October 30, 2023

কালের আলো রিপোর্ট :

পরিকল্পিতভাবেই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সরকারি বাসভবনে সন্ত্রাসী হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। গত ২৮ অক্টোবর দলটির সমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হয়। ইতোমধ্যেই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কোনও সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ ও ভাঙচুর চালানোর ঘটনা নজিরবিহীন। পুরো বিষয়টিকে বিচার বিভাগের ওপর আঘাত হানার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক অভিন্ন কন্ঠে বলেছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যে হামলা করা হয়েছে তা ছিল পরিকল্পিত। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে দিল। আমার বাসাও প্রধান বিচারপতির বাসার কাছে, আমি আমার বাসা থেকে সব দেখেছি। আমার বাসার স্টাফরাও ছিল, তারা বলেছে এটা প্রধান বিচারপতির বাসা। ওরা (বিএনপি কর্মীরা) বলতেছে, এটাই আগে ভাঙতে হবে। বিচার করে করে আমাদের লোকজনদের ফাঁসি দিয়েছে বিচারপতিরা। তারা জেনে সুপরিকল্পিতভাবে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। যারা করেছে, তারা রাজনৈতিকভাবে বিএনপির প্রথম লাইনের কর্মী এবং তারা সচেতন।’

অপরাধবিশ্লেষক ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। সবাই তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। সেখানে যারা হামলা করেছে ও হামলায় উসকানি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত। এবং এই বিচারপতি যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেহেতু এটি টার্গেট করে হামলা।

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ চলাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনাস্থল থেকে একাধিক গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের ডাল ভেঙে ও হাতের লাঠি দিয়ে নামফলক, গেটে হামলা চালায়। তারা ভেতরে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে।

এই ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত কোনও ব্যক্তি শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি সাংবিধানিক ইনস্টিটিউশন এবং তিনি বিচার বিভাগের অভিভাবক। তার সরকারি বাসভবনে আক্রমণ অর্থ— পুরো বিচার বিভাগের উপর আক্রমণ এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করার হুমকি প্রদর্শন। কোনও সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ ও ভাঙচুর চালানোর ঘটনা নজিরবিহীন।

আইনমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন, আগামীতে রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে দেশে আর কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। জনগণের জানমালের সুরক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকার কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২৯ অক্টোবর দুপুরে নিজ কার্যালয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ করার সাহস না পায়।

বর্তমান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন তার সহকর্মী বিচারকদের সাথে ১১টি মামলার রায় প্রদান করেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের বেশকিছু বড় যুদ্ধাপরাধীদের মামলার রায় দিয়েছেন। সেকারণে আক্রোশ বেশি ছিল কিনা প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, এ পর্যন্ত আমরা কখনোই প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ওপর হামলা হতে দেখিনি। সাধারণত বিএনপির সমাবেশ-আন্দোলন-মিছিল ওই এলাকাতেই হয়ে থাকে। কিন্তু সুযোগ নিয়ে হামলা করাটা একটা নতুন ঘটনা। আবার তিনি যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন সেহেতু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির টার্গেট তিনি হয়ে থাকতে পারেন। এটা তারা বুঝিয়ে দিলো। ওই ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হয়েছে তাদের পক্ষ থেকেও একটা ইঙ্গিতই দিলো।

সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করা মানে রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা। ভুলে গেলে চলবে না তিনি তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। আমাদের দণ্ডবিধি আইনে এধরনের ক্ষেত্রে বিচার করার জন্য আলাদা বিধান রয়েছে। এটা পরিষ্কার রাষ্ট্রদ্রোহিতা। আক্রমণ যারা করলো তাদের বিচার হওয়া উচিত।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) শরীয়তপুরে একটি অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কখনো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়নি। বিএনপি আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করেছে, পুলিশ হত্যা করেছে, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা করেছে। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলনের নামে আবারও মানুষ হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক সভায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ‘দেশদ্রোহিতার’ পর্যায়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়।

কালের আলো/ডিএসকে/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email