আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছাড় দেওয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 3:38 pm | October 21, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি মাঠে নামতে চায়, জামায়াত এবং আরও অনেকেই। তারা আন্দোলন করুক, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু তারা যদি আবার কোনো রকম অগ্নিসন্ত্রাস বা ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি তারা কোনোরকম দুর্বৃত্তপনা করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না।
শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘আইনজীবী মহাসমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে। যেটা আগে করেছিল, আগামীতে যেন করতে না পারে।
অগ্নিসন্ত্রাসসহ বিভিন্ন ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ করে শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত, জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, আইনজীবীদের কাছে, আমাদের যারা সরকারি কর্মকর্তা তাদের কাছে এটাই আমার অনুরোধ। এদের যদি সাজা না দেওয়া যায়, কারণ এরা এত অন্যায় করেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই তো সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, তাহলে তাদের শান্তি হবে না কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এই বিচার কাজ কেন দ্রুত হবে না? সে ব্যাপারে আপনাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তাদের মামলাগুলো শুধু চালালে হবে না, তারা যেন যথাযথ সাজা পায় সেই ব্যবস্থাটা আপনাদের করতে হবে। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমানের সহায়তায় খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু টিকতে পারেনি। যারা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ায়, তারা বেইমানদের ব্যবহার করে, কিন্তু রাখে না। এটাই হলো বাস্তবতা। মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের। একাধারে সেনাপ্রধান এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়।
তিনি বলেন, আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, এদেশের নাগরিক হিসেবে বিচার পাওয়া আমাদের অধিকার ছিল না। কিন্তু সে অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ইনডেমনিটি আইন জারি করে। শুধু ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়নি, জিয়াউর রহমান জনগণের ভোট চুরি করে নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছে। তার হ্যাঁ/না ভোট। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংবিধান এবং মিলিটারি আইন ভঙ্গ করে নিজে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এরপর দল গঠনের মধ্য দিয়ে জনগণের সঙ্গে কারচুপি করে।
তিনি আরও বলেন, ’৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করে তখন থেকে আমাদের লক্ষ্য যেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ছয় দফা দিয়েছিল। ছয় দফা যখন দিয়েছিল তখনও তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থান চালিয়ে জাতির পিতাকে উদ্ধার করেছিল। তিনি বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেক সময় তাকে সাজাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি থেমে যান নাই। সত্তরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সত্ত্বেও পাকিস্তানিরা বাঙ্গালিদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না। জাতির পিতা জানতেন এবং তার প্রস্তুতিও ছিল। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা করে, সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা শেখ মুজিব যুদ্ধের ঘোষণা দেন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। জাতির পিতা নির্দেশ ও আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রু মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার দশ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান তিনি উপহার দেন। সারা বিশ্বের কোন দেশ এত দ্রুত সংবিধান দিতে পারেন নাই। জাতির পিতার হাত ধরেই বাংলাদেশের বিচার কার্যক্রমের গোড়াপত্তন।
প্রধানমন্ত্রী বার কাউন্সিলের বেনেভোলেন্ট ফান্ডে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ফান্ড থেকে ৩০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
আইনজীবী মহাসমাবেশে সভাপতিত্বে করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ সারা দেশ থেকে আগত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসারী আইনজীবীরা এই মহাসমাবেশে অংশ নেন।
কালের আলো/ডিএস/এমএইচএ