গুরুত্বপূর্ণ চার কারণে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিশ্বস্ততা-আদর্শে অবিচল থাকার পুরস্কার

প্রকাশিতঃ 12:42 pm | September 21, 2023

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে প্রতিবারই উচ্চারিত হয়েছিল তাঁর নাম। এবার এই পদে তাঁর অভিষিক্ত হওয়া ছিল কেবলই সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) ৩৬ তম ডিএমপি কমিশনার হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান, অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমানের নাম ঘোষণার পর থেকেই নিজ বাহিনীর সহকর্মী, সুহৃদ আর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, অভিনন্দন বার্তা আর ফুলেল ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হয়েছেন। দুপুর গড়াতেই রাজধানীর পুরনো পল্টনের ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তর যেন ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। বৈচিত্র্যময় ফুলের তোড়ায় অন্ত:স্থল থেকে নি:স্বার্থ ভালোবাসার রূপায়নে সম্ভবত তখন প্লাবিত নির্মল আনন্দধারার রূপকার সমৃদ্ধ, গতিশীল ও জনসেবামুখী আধুনিক নেতৃত্বের কারিগর হাবিবুর রহমানের হৃদয়ও।

শুভ্র সুন্দর প্রীতি উজ্জ্বল ২০ সেপ্টেম্বর তারিখটি তাঁর বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের একটি দিন। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে শুধু অপরাধ দমন-নির্মূলই নয়, সমাজ পরিবর্তনেও নানামুখী অবদানেও তিনি ছড়িয়েছেন আলো। নতুন প্রত্যয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্যুতিময় প্রত্যাশার আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন নিজেকে। পৌঁছে গেছেন নতুন এক উচ্চতায়। এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তাই ডিএমপির কমিশনার হিসেবে কাঙ্ক্ষিত ছিল রাজধানীর নাগরিকদের। আরও নিরাপদ রাজধানী উপহার দেওয়ার পাশাপাশি নগরবাসীকে আগলে রাখার মানসিকতা, জনমনে পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে কাজ করা এই চৌকস, দক্ষ নেতৃত্বগুণাবলী সম্পন্ন ব্যতিক্রমী পুলিশ কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ চারটি কারণে রাজধানীর পুলিশপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তাঁরা বলছেন, পুলিশে আভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, ক্রাইসিসে কার্যকর ভূমিকা পালনের সক্ষমতাসহ নানাবিধ বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান স্বকীয় যোগ্যতায় পদ-প্রত্যাশী অন্যদের ছাপিয়ে যান। দীর্ঘ চাকরি জীবনে অনিয়ম-দুর্নীতি ও বদনামমুক্ত থেকে শিরদাঁড়া সোজা করে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও তিনি অনন্য এক উদাহরণ। ফলে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল শেষ পর্যন্ত তাঁর ওপরেই ‘আস্থা’ রাখেন। মানবিক পুলিশিং’র ‘রোল মডেল’ হিসেবে খ্যাত ১৭ তম বিসিএস ব্যাচের মেধাবী এই কর্মকর্তা নতুন ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মধ্যে দিয়ে আনুগত্য, বিশ্বস্ততা ও আদর্শের প্রশ্নে অবিচল থাকার পুরস্কারও পেয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিয়মানুবর্তীতা আর শৃঙ্খলাবদ্ধ এই পেশায় নিজের মেধার সাক্ষর রাখা অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান লেখালেখির মতো সৃষ্টিশীল কর্মেও সমানভাবে সক্রিয় থেকেছেন। গত ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চিঠিপত্র: শেখ মুজিবুর রহমান’ ও একই বইয়ের ইংরেজি সংস্করন ‘লেটারস অব শেখ মুজিবুর রহমান’ এর মোড়কও উম্মোচন করেন। ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বই দুটির মোড়ক উম্মোচন করেন। এর আগে হাবিবুর রহমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ সম্পাদনা করেন।

‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে তার গ্রন্থিত আরেকটি বইয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত উঠে আসে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি সম্পাদনায় মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন হাবিবুর রহমান। এছাড়াও হাবিবুর রহমানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ঠার’ আলোচিত। এই বইয়ে তিনি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন। কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। মানবিক এই উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বদলে দিয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে। কাজ করছেন যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীকে উত্তপ্ত করে তুলতে নানা রকম ছক কষছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু পুলিশ। এমন অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে রাজধানীকে সুরক্ষিত রাখতে ডিএমপির কমিশনার হিসেবে হাবিবুর রহমানের মতো একজন সৎ, দক্ষ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তাকেই এই পদে মনোনীত করেন সরকারপ্রধান। নিজ বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের সদস্যদেরও ‘ফাস্ট চয়েজ’ ছিলেন তিনিই। পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও যিনি জনপ্রিয় সমানতালেই।

একই সূত্র মতে, সরকারের সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামালেরও ‘গুড বুকে’ ছিলেন প্রথাগত পুলিশিং’র গণ্ডি পেরিয়ে সৃষ্টিশীল ও মননশীলতায় উদ্ভাসিত, পিতৃভূমি মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়ায় জন্ম নেওয়া এই পুলিশ কর্মকর্তা। সরকার এবার গণমুখী চরিত্রের এই মানুষটিকেই ডিএমপি কমিশনার হিসেবে বেছে নেওয়ায় খুশি কাছের থেকে দূরের সবাই। অভিনন্দন নতুন ডিএমপি কমিশনার।

কালের আলো/এমএএএমকে

 

Print Friendly, PDF & Email