মায়ের গ্রেপ্তারের সঙ্গে ছেলের স্ট্যাটাসের সম্পর্ক নেই: আইজিপি
প্রকাশিতঃ 5:08 pm | August 22, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
খুলনার খালিশপুর থানা এলাকা থেকে এক নারীকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে তার প্রবাসী ছেলের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন হবিগঞ্জে আহত পুলিশের ওসি অজয় চন্দ্র দেবকে দেখতে আসলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এক প্রবাসীর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে খুলনায় তার মা-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, বিষয়টি আমি পরিষ্কার করতে চাই। খুলনার একজন জামায়াতের নায়েবে আমীরের বাসায় নাশকতা এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটানোর একটি ষড়যন্ত্র চলছিল। সেখানে গোপন বৈঠকে অনেকে জড়ো হয়েছিল। সে তথ্য পেয়ে আমরা সেখানে যাই এবং অভিযান পরিচালনা করি।
তিনি বলেন, আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেকে পালিয়ে যায়, পরে আমরা সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের জানা ছিল না এ তিনজন কে বা কারা। আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাদের মধ্যে একজন মহিলা ও দুইজন পুরুষ।
আইজিপি আরও বলেন, ওই নারীকে গ্রেপ্তারের পর আমরা জানতে পারি তার প্রবাসী ছেলে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তাই ওই নারীকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে তার ছেলের দেওয়া স্ট্যাটাসের সম্পর্ক নেই। ওই নারীকে গ্রেপ্তারের সময় সেখান থেকে আমরা কিছু ডিজিটাল ডিভাইস পেয়েছি, নাশকতার পরিকল্পনার আলামত পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এ সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল, অভিযানের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল না বলেও জানান তিনি।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুলিশ কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য ‘দেয় না’, বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বিধি মেনে’ দায়িত্ব পালন করে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সকল সদস্য আছেন, আমার দৃষ্টিতে কারো রাজনৈতিক বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়নি৷ আমি আইন ও বিধির অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করি। পুলিশ রাজনৈতিক বক্তব্য দেয় না।
‘আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যে দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ আসবে, সেটি মোকাবেল করতে হবে, সেটা আমার আইনি দায়িত্ব। এই দায়িত্ব অর্পিত করা হয়েছে। এই দায়িত্ব পালনে আমি বাধ্য।’
দুদিন আগে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘দলীয় বক্তব্য’ দেওয়ার ঘটনায় তিনি ‘একতরফা নির্বাচনের আলামত’ দেখছেন।
রিজভী বলেন, “শনিবার নাকি উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে একজন কর্মকর্তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের ওই কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর মনে হয়েছে ইনি কি পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা না… শাহবাগ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আমি এটার কোনো পার্থক্য করতে পারিনি।“
আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন মঙ্গলবার হবিগঞ্জ থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবকে দেখতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে গেলে সাংবাদিকরা রিজভীর বক্তব্যের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জবাবে আইজিপি বলেন, আইন প্রয়োগ করতে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, আইন পড়ানো হয়েছে এবং আইন প্রয়োগে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হয়। জনগণের জান-মাল রক্ষায় যা যা করা দরকার সেটাই করা হবে।
কয়েকদিন আগে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের ৬ নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিএনপির অভিযোগ হল, পুলিশ ‘পুরাতন ও অকেজো অস্ত্র দিয়ে’ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে পুলিশ প্রধান বলেন, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশ অভিযানে তাদের কাছে যে অস্ত্র পেয়েছে সেগুলো দিয়েই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অমূলক।
আইজিপি অজয় চন্দ্র দেবের শয্যাপাশে অবস্থান করে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। তিনি অজয় চন্দ্র দেবকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, আপনার উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এ সময় অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মুহাম্মদ তারিক, ডিআইজি (অপারেশনস) মোঃ আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক (ডিআইজি) শেখ মোঃ রেজাউল হায়দার, ডিআইজি এস এম মোস্তাক আহমেদ খান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/বিএস/এমএইচ