‘স্কুল পালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিটিং শোনার জন্য যেতাম’

প্রকাশিতঃ 11:28 pm | December 13, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাজনৈতিক একটি পরিবারে জন্ম। আর রাজনীতি আমাদের সাথে এমনভাবে জড়ানো ছিল যে রাজনীতি ঠিক কখন প্রবেশ করালাম তা সঠিকভাবে বলতে পারব না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। সেই সময় শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলন, তারপর আরও বিভিন্ন আন্দোলন। যখন আন্দোলন হতো, তখন স্কুল পালিয়ে চলে যেতাম সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বট তলায় মিটিং শোনার জন্য। আবার স্কুল থেকে আমাদের সংগঠন করতে হবে, ছাত্রলীগ করতে হবে বলা হলো। তাই স্কুল থেকে বিভিন্ন স্কুলে যেতাম।’

আজ বৃহস্পতিবার ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদেরকে বোঝাতাম কেন আমাদের সংগঠন করতে হবে। ‘৫২র আন্দোলন। মানে আমরা আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করলাম ঠিকই। কিন্তু প্রথমে আসল আররি হরফে বাংলা লিখতে হবে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হলো। এরপর রোমান হরফে বাংলা লিখতে হবে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হলো। তা আন্দোলন শুনলেই আমরা ওখান (স্কুল) থেকে চলে যেতাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন কলেজে ভর্তি হলাম। আমি ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে সেখানকার ছাত্রীরা খুবই উৎসাহীত। আবার আমাদের ছাত্রলীগের নেতারাও খুব উৎসাহীত। আমাকে প্রথমে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি করা হলো কলেজ ইউনিটের। আমরা বিভিন্ন কলেজে গিয়ে গিয়ে সংগঠন করতাম। তখন প্রত্যেক কলেজে বার্ষিক নির্বাচন হতো। তখন আমাকে সংগঠনের সেন্ট্রাল কমিটি থেকে জানানো হলো, “তোমাকে নির্বাচন করতে হবে।” তখন আমার মা আবার বাঁধা দিলেন। কেননা আমার বাবা তখন ছয় দফা দিয়েছেন। ছয় দফা দেওয়ার পর তিনি জেলে। আমাদের পার্টির তখন অধিকাংশ নেতাই বলতে গেলে জেল খানায় বন্দী। ওই অবস্থায় নির্বাচন করাটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি যে কলেজে পড়তাম, সেটা ছিল সরকারি কলেজ। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি কলেজে শেখ মুজিবের মেয়ে নির্বাচন করে জিতবে এটা কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছুতেই মানতে পারেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু না, তখনকার সরকারও। কারণ তখন গভর্নর ছিল মোনায়েম খান আর প্রেসিডেন্ট ছিল আইয়ুব খান। মিলিটারি ডিকটেটর আইয়ুব খান। তার বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম ছিল। তাদের কথা ছিল, আমি যেন কিছুতেই নির্বাচনে জিততে না পারি। আবার আমার মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। মা বলেন, “যদি তুমি ইলেকশনে জিততে না পারো, তাহলে মানুষ মনে করবে ৬ দফার প্রতি সমর্থন নাই। আর সরকারের কথা ছিল, যদি আমি জিতে যাই। তাহলে প্রমাণ হবে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থীদের ৬ দফার প্রতি সমর্থন রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটা বাধা। বাসায় আসলে মা বলত, এখনই যাও, উইথড্রো করো।”

তিনি বলেন, ‘কলেজে গেলে আমার বান্ধবী যারা ছিল বা সংগঠন থেকে বলত, ‘না, উইথড্রো করা যাবে না। তুমি ত জিতবে তুমি কেন প্রার্থী থাকবে না?’ এই এক টানাপোড়েনের মধ্যে। আমার মা খুব শক্ত ছিলেন। মা বললেন, “সবকিছু বন্ধ। টাকা-পয়সা সব বন্ধ। কিছু দেব না। তুমি ইলেকশন করতে পারবে না।” যাই হোক এরপর একটা পর্যায়ে ইলেকশন হলো। ইলেকশনে আমি জিতলামই না শুধু, আমার বিপক্ষে দুই প্রার্থী ছিল। তাদের দুইজনের ভোট যোগ করেও তার দ্বিগুণ ভোট আমি পেলাম। তখনকার ছবিও আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম তখন শুনলাম, গভর্নর ডেকে ভিসিকে বলছেন, গণি সাহেব ভিসি ছিলেন। তাকে বলছেন, শেখ মুজিবের মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলো কীভাবে? তিনি জানান, হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে প্রতি বছর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। আলাদাভাবে খোঁজ নেওয়ার সুযোগ কোথায়? তিনি বেশ একটু ডাটের লোকই ছিলেন। পরে একজন শিক্ষক আমাকে জানিয়েছিলেন, তুমি কি জানো, তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর গভর্নর ভিসিকে ডেকে নিয়ে ধমক দিয়েছেন, শেখ মুজিবের মেয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো কীভাবে। ত আমাদের জীবনটা এমনই ছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আব্বা যখন মন্ত্রী ছিল তখন শিক্ষকরা খুব আদর করতেন। আবার আব্বা যখন জেলে গেল তখন বলত, ‘ও, ওর বাবা ত জেলে।’ তখন যত দোষ আমাদের ওপর। মানে, যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর। এমন চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য থেকে আমাদের যেতে হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমার বাবা কাজ করছে এটা জানতাম বলে এই চরাই উৎরাইটাকে আমরা বেশ সহজভাবে নিতে পেরেছিলাম। এটা আমার মায়ের শিক্ষা, আমার দাদা-দাদির শিক্ষা।’

কালের আলো/এএ/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email