রাজস্ব ফাঁকি বন্ধের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 3:54 pm | February 05, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশকে এগিয়ে নিতে, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, দেশের সার্বিক অর্থনীতি যত উন্নত হবে এবং মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে, দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে। কাজেই রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করে ব্যবসা-বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুদিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য যা দাঁড়ায়, সেটা দিতে সবাই রাজি থাকলে সরবরাহে কোনও ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে, যদি ক্রয়মূল্য যা হয়; সেটা সবাই দিতে রাজি থাকে। তাছাড়া কত ভর্তুকি দেওয়া যায়? আর এক্ষেত্রে কেন আমরা ভর্তুকি দেবো? ভর্তুকি দিচ্ছি আমরা কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে এবং সাধারণ মানুষকে।

প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি, তবে এখানে একটা কথা আছে। আমরা যে বিদ্যুৎটা দেই, সেটা উৎপাদনে আমাদের প্রতি কিলোওয়াট খরচ পরে ১২ টাকা। সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ছয় টাকা। আর তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। ইংল্যান্ডে কিন্তু বিদ্যুতের দাম দেড়শ শতাংশ বাড়িয়েছে। এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু সেই পর্যায়ে যাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে গিয়েছিলাম ২০০১ সালে, পরেরবার ২০০৯ সালে (ক্ষমতায়) এসে দেখলাম সেটা কমে গেছে, তিন হাজারে নেমে গেছে।’ বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়া বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, এ রকম পেছনের দিকে কোনও দেশ যায় কি না!’

শুধু বিদ্যুতে নয়, সেসময় খাদ্য উৎপাদনেও দেশ পিছিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আমরা খাদ্য উৎপাদন করে, স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে ২০০১ এ যখন ক্ষমতা থেকে যাই, তখন ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে গিয়েছিলাম। ২০০৯ এ এসে দেখি আবার আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাই হোক, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে আজকে সে সমস্যা নেই। আজকে শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল যে, বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো। আমরা পৌঁছে দিতে পেরেছি।’

এ সময় সবাইকে দেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবাই বিনিয়োগ করলে নিজেরাও লাভবান হবেন, আবার দেশটাও লাভবান হবে।’

উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ করে সারা দেশে গড়ে ওঠা ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৪ বছরে আপনাদের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ব্যবসা করেন। এখন আর ওই হাওয়া ভবনে পা-ও দিতে হয় না, কোনও কিছুই করতে হয় না; সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিয়েছি। আর আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য একদম তৃণমূলের মানুষ। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে আমাদের নিজস্ব বাজার হচ্ছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমাদের আশেপাশের যে দেশগুলো রয়েছে, তাদের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ স্থাপন করছি।’

তিনি বলেন, ‘ভুটান, নেপাল, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার সর্বক্ষেত্রেই চমৎকার একটি যোগাযোগের জায়গা। তাছাড়া এই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৩শ’ কোটি মানুষের বাজার, এই সুবিধাটা যে কেউ নিতে পারেন। তাছাড়া আমরা কক্সবাজারে অন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি, ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেললাইন করা হয়েছে, আমরা সড়কের উন্নয়ন করেছি। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে, ইস্ট এবং ওয়েস্টের মধ্যে একটা ব্রিজ হতে পার বাংলাদেশ। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা মনেকরি আমাদের ভৌগলিক যে অবস্থান সেটাও অত্যন্ত অনুকূলে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাতারবাড়িতে ইতোমধ্যে ডিপসি পোর্ট কার্যক্রম শুরু করেছে, পায়রা পোর্টের উন্নতি হচ্ছে, মোংলা পোর্টকে আমরা উন্নত করছি, বে টার্মিনালসহ আরও অনেক সুবিধা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’

এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নিজস্ব প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। নবনির্মিত ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বিনিয়োগ ভবন’। সুইস চেপে ১২তলা বিশিষ্ট নবনির্মিত ভবনটি উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন। পরে মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। মোনাজাত পরিচালনা করেন বিডার যুগ্ম সচিব আশফাকুল আলম মুকুল।

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করেছি, আসলে এটা আগে ছিল বিনিয়োগ বোর্ড। মৎস্য ভবনের একটা ফ্লোরে এর কার্যক্রম চলতো। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাই। বিদেশিরা যখন আসবে, দেখবে বা বিনিয়োগ করবে… আসলে ভালোভাবে দেখলে ভালো বিনিয়োগ হবে, না দেখলে হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আলাদা একটি সুন্দর ভবন করে দেবো। যেখানে যারা কাজ করবেন তারা যেন শান্তিতে কাজ করতে পারেন, কাজের একটা সুন্দর পরিবেশ হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যারা আসবেন, তারাও যেন এখানে কাজ করতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email