নেতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ মির্জা আজম এমপি

প্রকাশিতঃ 7:36 pm | December 21, 2022

মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম:

১৯৬২ সাল। দেশজুড়ে এক উত্তাল সময় তখন। মুক্তির লড়াইয়ে থেমে থাকেননি কেউ, বাংলার কৃষক-মজুর, ছাত্র-জনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। জেল-জুলুম, ভয় কোনো কিছুতেই পরোয়া ছিল না বঙ্গবন্ধুর। বাংলার মানুষের মুক্তিই ছিল তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য। বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা তৈরির আকুণ্ঠ পিপাসা নিয়ে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে চলছেন।

এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ বর্তমান জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সুখনগরী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম হয় মির্জা আজমের। লড়াই-সংগ্রাম আর সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে পরবর্তী সময়ে যিনি হয়ে ওঠেন কোটি মানুষের প্রিয় নেতা, বাংলার যুবকণ্ঠ মির্জা আজম।

মির্জা আজমের পিতার নাম আলহাজ মির্জা আবুল কাশেম ও মাতা আলহাজ নুরুন্নাহার বেগম। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। নম্র, ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলেটি ১৯৬৮ সালে বালিজুড়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। মির্জা আজম ১৯৭৮ সালে জামালপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস করেন। পরে ১৯৮০ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও ১৯৮৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

১৯৭৭ সালে দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ ছাত্র সংসদে আমিউজমেন্ট অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৮৭ সালে জামালপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, ১৯৯১ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে মহান জাতীয় সংসদে জামালপুর-৩ ( মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অল্প বয়সে বড় দায়িত্ব নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে। প্রতিপক্ষ সরকারি দলের নেতাদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন জামালপুরের তৎকালীন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ি আসনের এমপি, বিএনপির মহাসচিব ব্যারিষ্টর আব্দুল সালাম তালুকদারের সঙ্গে। জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বারবার, তবু তিনি দমে যাননি। সাহস রেখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন। দুঃসময়ে মির্জা আজম ছিলেন অবিচল।

সর্বকনিষ্ঠ এই সাংসদ জাতীয় সংসদে বিএনপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। সেই ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। বিরোধী সরকারের একের পর এক কোপানলে পড়তে হয়েছে মির্জা আজমকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত মির্জা আজম এমপি বাংলার মানুষের কাছে সাহসী ও আপসহীন নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

ক্ষমতায় না থাকার কারণে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এলাকার উন্নয়ন করার মতো সুযোগ তাঁর ছিল না। তাই বলে তিনি নিশ্চুপ থাকেননি। সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে এলাকার সড়ক উন্নয়নসহ বেশ কিছু কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সালে দানবীর ও নারী শিক্ষার অগ্রদূত পিতার প্রতিষ্ঠা করা নারী শিক্ষার জাগরণে ‘নুরুন্নাহার মির্জা আবুল কাশেম মহিলা ডিগ্রি কলেজ’, তৎকালীন সময়ে এ কলেজটি পাল্টে দিয়েছিল ওই অঞ্চলের নারী শিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নের চিত্র। তিনিও পিতার আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে থাকেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন মির্জা আজম। তারপর আর পেছোনে ফিরে তাকাননি, তৃণমূল থেকে তিল তিল করে উঠে আসা একজন সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠ করেছেন বাংলার মানুষের কাছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও জামালপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক-এর দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন।

২০০৩-২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সফল সাধারন সম্পাদক হিসাবে রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম,মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগকে সু-সংগঠিত করেছেন। তিনি পরপর তিনবার বাংলাদেশ আওয়ামীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর ৪৫ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ৩৩ বছর যাবৎ মহান জাতীয় সংসদে জামালপুর- ৩ আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ, সরকার দলীয় হুইপ, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। তিনি পাট ও বস্ত্রকে ইউটার্ণ করিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ঢাকা বিভাগ আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি ইউনিটকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করেছেন মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে। যেমনটি করেছিলেন আওয়ামী যুবলীগে দায়িত্বে থাকা অবস্থায়।
মির্জা আজম এমপি যেখানে যে দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানেই সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

একসময়ের অবহেলিত ও অনুন্নত জেলা জামালপুরকে সমৃদ্ধ জেলা হিসাবে রূপান্তর করে তিনি প্রমাণ করেছে একজন রাজনৈতিক নেতা তথা জনপ্রতিনিধির সততা, নিষ্ঠা, মেধা, সক্ষমতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে নিজের নির্বাচনী এলাকাসহ সমস্ত জেলার উন্নয়ন করা সম্ভব। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনগণকে মনিব মনে করেন। নেতৃত্বের গুণাবলি ও সংসদ সদস্য তথা জনপ্রতিনিধি হিসাবে মির্জা আজম এমপি বাংলাদেশের রোল মডেল। তিনি কথার চেয়ে কাজ বেশি করেন, দায়িত্ব ও সংকট মোকাবিলায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশ পালনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ।

জামালপুরবাসী মির্জা আজম এর নেতৃত্বের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থাশীল। তাঁর নেতৃত্বে জামালপুর জেলায় প্রায় ৬০হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান। জেলাবাসী যা চেয়েছে তাই পেয়েছে এবং চাওয়ার বাহিরেও তাঁর উন্নয়ন ভাবনা থেকে অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন। পিছিয়ে থাকা প্রাণের জামালপুর জেলাকে আজ উন্নত,আধুনিক জেলা হিসাবে রূপান্তর করেছেন। সেই জন্য তাঁকে আধুনিক জামালপুরের জনক বা রূপকার বলা হয়।

মির্জা আজম জামালপুরে শিক্ষা আন্দোলনের রূপকার হওয়ার কারণে তাকে শিক্ষাবন্ধু বলা হয়, কোনো নেতৃত্বপ্রধান ব্যাক্তির নিকট থেকে এ ধরনের শিক্ষা বিষয়ক উন্নয়ন সত্যি বিরল। তার গড়া অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২১ সালঅব্দি পাঠ গ্রহণ করছেন ২২,৭২৫ জন শিক্ষার্থী।

এছাড়া জামালপুর জেলায় বিভিন্ন স্তরে তার গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বেরিয়েছে ৫০,৫০১ জন শিক্ষার্থী। যারা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত রয়েছে। তার এই উন্নয়ন দেশের অন্যান্য জনপ্রতিনিধি থেকে তাকে অনন্য করে তুলেছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত এই ত্যাগী দেশপ্রেমী ও শিক্ষাপ্রেমী নেতা বাংলাদেশের মানুষের নিকট নেতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী

Print Friendly, PDF & Email