অবৈধভাবে বাড়ি দখল করেননি সালাম মুর্শেদী, অসম্পূর্ণ ও অনুনোমোদিত তদন্ত রিপোর্ট

প্রকাশিতঃ 9:24 pm | December 02, 2022

কালের আলো রিপোর্ট :

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপির গুলশানের বাড়ি নিয়ে রীতিমতো জলঘোলা হচ্ছে। অসম্পূর্ণ ও অনুনোমোদিত তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে বারবার দাবি করা হচ্ছে অবৈধভাবে বাড়িটি দখল করেছেন তিনি। যদিও এই সংক্রান্ত নথি ও তদন্ত রিপোর্ট এখনো আদালতে দাখিল করেনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক।

এই দুই সংস্থার আইনজীবীদের আবেদনের সাড়া দিয়ে আগামী ১৬ জানুয়ারি ওই বাড়িসংক্রান্ত নথি ও তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে সরকারের দুই সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব এবং রাজউক চেয়ারম্যানকে এই সংক্রান্ত নথি ও রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এই আদেশ দেন।

এদিকে, দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনের চেয়ারম্যানকে পাঠাতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুদক কৌঁসুলির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া কোর্ট প্রসিডিংস ব্যতীত বিচারাধীন বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য প্রতিবেদন না করতেও গণমাধ্যমকে নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। আদালতে গণপূর্তের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, রাজউকের পক্ষের জাকির হোসেন মাসুদ, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান, সালাম মুর্শেদীর পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা, রিটকারীর পক্ষে অনীক আর হক ও সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন উপস্থিত ছিলেন।

যদিও আব্দুস সালাম মুর্শেদীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি বৈধভাবেই ওই বাড়িটি দখলে রেখেছেন। আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এতে বলা হয়, বাড়িটি বর্তমানে যেই প্লটে অবস্থিত সেই প্লটটি সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটি ঢাকা রি-রোলিং মিলসের অনুকূল বরাদ্দ করে। পরবর্তীকালে ১৯৬৩ সালে ডিআইটি প্লটটি উক্ত ঢাকা রি-রোলিং মিলস নামে লিজ প্রদান করে। এর পর ১৯৭৫ সালে প্লটটি মালেকা রহমান কিনেন। কেনার আগে ১৯৭২ সালে মালেকা রহমানকে বাংলাদেশ সরকারের সদর সাব-ডিভিশনাল অফিস (সদর দক্ষিণ) এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি সেল থেকে অবহিত করা হয় যে, প্লটটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে মালেকা রহমান সম্পত্তিটির নামজারি সম্পন্ন করেন। এর পরে মালেকা রহমান এই প্লটটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ‘খ’ তালিকা থেকে অবমুক্তির বিষয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটেলমেন্ট কোর্ট-১ দোতরফা সূত্রে আবেদনকারী মালেকা রহমানের মালিকানার পক্ষে এবং প্লটটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি আওতা বহির্ভূত হিসেবে ১৯৯৪ সালের ২৪ জানুয়ারি রায় প্রদান করে। পরবর্তীকালে মালেকা রহমান তার দুই ছেলে মীর মোহাম্মদ হাসান ও মীর মোহাম্মদ নূরুল আফসারের নামে প্লটটি ১৯৯৫ সালের ১২ মার্চ একটি নোটারি দলিলের মাধ্যমে মৌখিকভাবে দান করেন। এরপর মীর মোহাম্মদ হাসান ও মীর মোহাম্মদ নূরুল আফসার প্লটটি তাদের নিজেদের নামে নামজারি করে নেন।

এখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি দাপ্তরিক চিঠি মারফত ওই মালেকা রহমানকে এই মর্মে অবহিত করেন যে উল্লিখিত প্লটটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় নাই বিধায় উহা অবমুক্তির কোনো অবকাশ নেই। এরপর বিগত ১৯৯৭ সালের ১৫ মার্চ তত্কালীন মালিকগণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক কর্তৃক প্লট দুটি প্লট হিসেবে যথা: ২৭/এ এবং ২৭/বি হিসেবে বিভাজন করা হয়। পরবর্তীকালে রাজউক বরাবর উক্ত মালিকদ্বয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে ২৭/বি নং প্লটটি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নামে হস্তান্তরের অনুমতি প্রদান করা হয় এবং গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি রেজিস্ট্রি দলিল মূলে ২৭/বি, নং প্লটটি সালাম মুর্শেদীর নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। এর পর রাজউক কর্তৃক ২৭/বি প্লটটি সালাম মুর্শেদীর নামে নামজারি করা হয় এবং সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্লটটিতে সালাম মুর্শেদী বসবাস করে আসছেন। এখানে প্রসঙ্গত, বিভাজনকৃত অপর প্লটটি (২৭/এ) একই সময়ে জনৈক ইফ্ফাত হক একই পদ্ধতিতে উক্ত মালিকদ্বয় থেকে কিনেন এবং এই পর্যন্ত তিনিও সম্পত্তিটির ভোগদখলে আছেন।

অসম্পূর্ণ ও অনুনোমোদিত তদন্ত প্রতিবেদন তবুও সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ ও অনুনোমোদিত। কেননা, সেটেলমেন্ট কোর্টের রায়ে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত নয় মর্মে রায় আছে। এটি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। তাছাড়া মূল নথি পর্যালোচনা না করে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে সালাম মুর্শেদীকে তদন্ত কমিটি ডাকেনি কিংবা স্বপক্ষে কাগজপত্র প্রদানেরও সুযোগ দেয়নি।

বিক্রেতা মালেকা রহমানের যে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনে সেই অভিযোগ মালেকা রহমান তুলে নিয়েছেন। তিনি সালাম মুর্শেদী থেকে ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে মালেকা সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে বিচারের কার্যক্রম যেন কোনভাবেই প্রভাবিত না হয় এই বিষয়ে হাইকোর্ট সকল গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন করার সময় যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম

Print Friendly, PDF & Email