রকেট-শোরাড মিসাইলে আরও অপ্রতিরোধ্য সেনাবাহিনী, আকাশ প্রতিরক্ষায় নতুন মাত্রার কথা সেনাপ্রধানের কন্ঠে

প্রকাশিতঃ 9:53 pm | November 15, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখার পাশাপাশি বহি:শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় অত্যাধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর বহরে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নানা যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম। সেনাবাহিনীর ‘হোম অফ গানার্স’ হিসেবে পরিচিত বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আর্টিলারি সেন্টারে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন সমরাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তিকরণ অনুষ্ঠান হয়েছে।

এসব আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জামে আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে সতের কোটি মানুষের আস্থা ও গর্বের ঠিকানা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ড.এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ফরমান তুলে দেওয়ার পাশাপাশি বেলুন উড়িয়ে অত্যাধুনিক শোরাড মিসাইল মিসাইল ও আকাশ প্রতিরক্ষার রকেট যুক্ত করার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি দুটি রেজিমেন্টের পতাকাও উত্তোলন করেন।

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সেনাবাহিনীতে নতুন সংযোজিত এই ওয়েপন সিস্টেম নি:সন্দেহে একটি অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র বলেও মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে এসব সমরাস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমর সক্ষমতাকে এক নতুন মাত্রা দেবে বলেও তিনি দৃঢ়কন্ঠে উচ্চারণ করেন।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘৪৪ শোরাড মিসাইল রেজিমেন্ট আর্টিলারির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। আধুনিক এফএম ৯০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইলের সমন্বয়ে গঠিত ৪৪ শোরাড মিসাইল রেজিমেন্ট আর্টিলারি নিঃসন্দেহে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহকে দুর্ভেদ্য আকাশ-প্রতিরক্ষা প্রদানের এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।’

এ সময় জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা অর্জনে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন। আধুনিক এসব সমরাস্ত্র বাহিনীতে সংযোজন এবং রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগের অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।’

সূত্র জানায়, সেনবাহিনীর বহরে যুক্ত হওয়া তুরস্ক থেকে আনা অত্যাধুনিক টাইগার এমএলআরএস মিসাইল ১২০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। একই সঙ্গে যুক্ত হওয়া চীন থেকে আনা শোরাড মিসাইল; ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন এই ক্ষেপনাস্ত্র দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, আকাশ ও সীমানা প্রতিরক্ষায় প্রতিহত করবে বহি:শত্রুর আক্রমণ।

একই সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরের নতুন সংযোজন শোরাড হলো সেনাবাহিনী বহরের অত্যাধুনিক মিসাইল। ২০২১ সালের মার্চে সফল মিসাইল ফায়ারিং সম্পন্ন হওয়ার পর ওই বছরই শোরাড মিসাইল রেজিমেন্ট পূর্নাঙ্গ ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে সাথে রেজিমেন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো আকাশ-প্রতিরক্ষার ৫১ এমএলআরএস রেজিমেন্ট।

তৃতীয় এমএলআরএস ব্যাটারীতে যুক্ত হওয়া এসব সমরাস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হতে সেনা সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘প্রিয় সেনাসদস্যগণ আমি আশা করবো সমরাস্ত্রে আধুনিকায়নের পাশাপাশি নিজেদের যথাযোগ্যভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে সমরাস্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহারের আপনারা সক্ষম হন। আমাদের মনে রাখতে হবে, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের সর্বদা প্রস্তুত রাখা প্রতিটি সেনাসদস্যের নৈতিক দায়িত্ব।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, পরে দুপুরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন সেনাপ্রধান। এখানে অংশ নেন দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৪৭টি ইউনিটের অধিনায়করা। আর্টিলারি ব্যাটারীর অন্তর্ভুক্তিকরণ ও নবগঠিত ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান তাঁর বক্তব্যে সেনাবাহিনীর নতুন ইউনিটসমূহের সকল সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সেই উন্নয়নের পথ ধরে আজকের এই ইউনিটের অন্তর্ভুক্তিকরণ ও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠিত হলো এবং একই সাথে বাস্তবায়িত হলো সামরিক বাহিনীর উন্নয়নের রূপকল্প ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আরেকটি ধাপ।’

আইএসপিআর আরও জানায়, এরপর সেনাবাহিনী প্রধান দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে উপস্থিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন এবং এই রেজিমেন্টের উন্নয়ন, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও দেশে-বিদেশে পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম বিষয়ে মতবিনিময় করেন। সেনাবপ্রধান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য, দেশমাতৃকার সেবায় সক্রিয় অবদানের কথা স্মরণ করেন। আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে এই রেজিমেন্টের সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, সেনা সদর দপ্তরের এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. মোশফেকুর রহমান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মুহাম্মদ জুবায়ের সালেহীনসহ ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা, অসামরিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পদবীর সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email