হিজরতের নামে `ব্রেইনওয়াশ’ করা হচ্ছে: র‍্যাব ডিজি

প্রকাশিতঃ 10:53 pm | October 26, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

অল্পবয়সী ছেলেদের হিজরতের নামে ‘ব্রেইনওয়াশ’ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশিদ হাসান।

তিনি বলেছেন, অল্পবয়সী ছেলেদের হিজরতের নামে ‘ব্রেইনওয়াশ’ করা হচ্ছে । পাহাড়ে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আছে। কোনও একটা সংগঠনের ছত্রছায়ায় তারা বান্দরবানের রামুতে অবস্থান নিয়েছে। পরে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ মোতাবেক সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে অভিযান চালিয়েছি। আমরা কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগরে র‌্যাব-১১ এর সদরদফতরে জব্দ হওয়া বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ধ্বংসের সময় সাংবাদিকদের দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে র‍্যাব ডিজি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘আগস্ট মাসে পত্রিকায় আমরা দেখলাম, কুমিল্লা থেকে বেশকিছু তরুণ নিখোঁজ হয়েছে। এ সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে ৫৫ জনের নাম পেয়েছি। পরে ৩৫ জন হিজরতের নামে বাড়ি ছেড়েছে বলে নিশ্চিত হয় র‌্যাব। তারা কোথায় গেলো খুঁজতে গিয়ে কয়েকজন ধরা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজনকে ধরা হলো। এই কার্যক্রম আমাদের অব্যাহত আছে।’

বান্দরবানের রামুতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী যৌথ অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে র‌্যাব প্রধান আরও বলেন, ‘এক সময় নর্থবেঙ্গল থেকে জঙ্গি আসতো। এর উত্থান হয়েছিল ২০০৫ সালে জোট সরকারের আমলে। সে জঙ্গিরা সারা বাংলাদেশে বিস্তার করলো। পরে সমগ্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টায় আমরা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম। তারা এখন সমতলে সুযোগ না পেয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা নির্বাচন করেছে।’

তবে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে খুরশীদ হোসেন আরও বলেন, ‘তারা পাহাড়ের ওপারে যেসব জায়গায় তাবু করেছিল সেগুলো আমরা অলরেডি গুড়িয়ে দিয়েছি এবং আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। তারা দুইভাগ হয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সেনাবাহিনী এমন অবস্থান নিয়ে রেখেছে যে তারা বর্ডারের দিকেও যেতে পারছে না আবার নিচেও নামতে পারছে না। এর মধ্যে একজন আত্মসমর্পণ করেছে।’

তিনি বলেন, সমাজকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সমাজের সকলকে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবার, শিক্ষক, গণপ্রতিনিধিসহ সমাজের সকল স্টেক হোল্ডারগণকে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ হতে মাদক নির্মূল সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাই মাদক নির্মূলে সমাজের সকল স্টেক হোল্ডারগণের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন মহাপরিচালক।

র‍্যাব মহাপরিচালক আরও বলেন, আমি গত ৩০ সেপ্টেম্বর র‌্যাব ফোর্সেস এর মহাপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। র‌্যাব ফোর্সেসের সকল কর্মকর্তা ও সকল সদস্যদের নিয়ে আমরা এক মূলমন্ত্রে এগিয়ে যেতে চাই, আমরা র‌্যাবকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যাতে র‌্যাব হবে মানুষের নিরাপত্তার প্রতীক, আস্থার প্রতীক এবং সকল পেশার মানুষের ভালোবাসার প্রতীক। পক্ষান্তরে, বিভিন্ন অপশক্তি, মাদক কারবারি, মাদক ব্যবসায়ী এবং যারা জঙ্গিবাদে জড়িত তাদের জন্য র‌্যাব হবে আতঙ্কের প্রতীক। আমরা এটাই প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

এ সময় নারায়ণঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস, র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা, জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুলাই সোনারগাঁয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে জব্দ করা দুই কন্টেইনার ভর্তি বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করে র‌্যাব-১১। এই মাদক ধ্বংস করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে র‌্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দুই কনটেইনার মদ ভর্তি ৩৭ কোটি টাকার মাদক জব্দ করা হয়েছে। এই বিষয়ে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না

কালের আলো/এসএবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email