সবাই একত্রে কাজ করলে ঢাকা বসবাসযোগ্য সুন্দর শহরে পরিণত হবে : এলজিআরডি মন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 11:14 pm | October 19, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আগামীর সুন্দর নগরীর চিন্তা করে সবাই এক সঙ্গে কাজ করলে ঢাকা একটি বসবাসযোগ্য সুন্দর শহরে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে হোটেল হলিডে ইন’য়ে নাগরিক টিভি আয়োজিত ‌‘বসবাস যোগ্য ঢাকা কতদূর?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকাসহ আশেপাশের শহরের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে, পরিকল্পিত নগরী গড়ার লক্ষ্যে নিয়েই ড্যাপ করা হয়েছে। এতো বিশাল এলাকার দীর্ঘমেয়াদি এসব প্ল্যান করতে গিয়ে ভিন্ন মত, সমস্যা থাকতে পারে। এগুলো আমাদের সমাধান করতে হবে। সমালোচনার স্বার্থেই সমালোচনা করা যাবে না, যৌক্তিক উপায়ে সমাধানের পথে আমাদের হাঁটতে হবে।

তিনি বলেন, ড্যাপের সিংহভাগ যেসব ভালো দিকগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কিন্তু কেউ কথা বলছেন না। যেসব সমস্যার কথা বলছেন, সেগুলোর সংশোধন, মানোন্নয়নের প্রস্তাব আপনারা দেন, আমরা সবাই এক সঙ্গে বসে তার সমাধান করব। এগুলো তো সমাধানের সুযোগ রাখা হয়েছে। আমরা সবাই যদি এক সঙ্গে আগামীর সুন্দর নগরীর কথা চিন্তা করে এক সঙ্গে কাজ করি তাহলে ঢাকা একটি বসবাসযোগ্য সুন্দর শহরে পরিণত হবে।

নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.শামসুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি এবং রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব।

আলোচনায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ যেভাবে তাদের শহরকে নিয়ে আগামীর কথা ভেবে পরিকল্পনা করছে। আমাদেরও তেমন আগামীর প্রজন্মের কথা ভেবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে। যে দেশগুলো তাদের শহরের উন্নয়নে ফলপ্রসূ পরিকল্পনা করেছে প্রয়োজনে নলেজ শেয়ার করে নিতে হবে তাদের কাছ থেকে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, সুন্দর শহর গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে রাজউক। আমাদের থেকে ভবনের যে প্ল্যান দেওয়া হয়, সেটা পরিকল্পনা মাফিক সব কিছুর বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা যদি প্রকৌশল বিভাগ থেকে দেখভাল করা হয়, তাহলে সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে। নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার আগে প্রয়োজন ঢাকায় আসা মানুষের স্রোত কমিয়ে আনা। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য স্থানে শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নতি ঘটাতে পারলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। তখন নগর পরিকল্পনাকে আরও ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, যেকোনো সিটিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে নিতে হলে মেট্রোরেল খুবই গুরুত্ববহন করে। উচ্চগতির ট্রেনকে গুরুত্ব দিলে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ কাজে এসে নিজ বাড়িতে ফিরে যাবে। যখন এক ঘণ্টায় একটা জেলা থেকে রাজধানীতে এসে অফিস করে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকবে তখন রাজধানী কেন্দ্রিক পরিকল্পনা, ড্যাপ সব কিছুর সুন্দর বাস্তবায়ন হবে। উচ্চ গতির ট্রেন জাতীয় এমন উদ্যোগ আমাদের জন্য খুবই জরুরি। রাজধানীর পরিকল্পনায় এবং তা বাস্তবায়নে রাজউকের অনেক বড় ভূমিকা আছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানীকে সুন্দরভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়া সম্ভব হবে। এখানে নানা মহলে ফ্লোর এরিয়া রেশিও নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে কিন্তু কেন করা হয়েছে তা বুঝতে হবে আমাদের। এখানে শুধু স্থপতির বিষয় ছাড়াও সার্বিক বিষয়াদি নিয়েই একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি এবং রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করা, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে মানুষ কমানো, ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ খুবই জরুরি। ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ নিয়ে কোনো পরিকল্পনায়ই বাস্তবায়ন করা কঠিন। এজন্য গার্মেন্টস, অন্যান্য শিল্প কারখানার সুবিধা অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে দিতে হবে। আর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ভালো করতে হবে যেন ঢাকার ওপর চাপ কমে। মানুষ যেন অফিস করে নিজ জেলায় চলে যেতে পারে এবং পরের দিন সকালে যেন ফের অফিস করতে ঢাকায় আসতে পারে, এমন মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা গেলে তা সম্ভব হবে।

ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপের নতুন শহরের পরিকল্পনা যেমন রয়েছে, তেমনি পুরাতন শহরকেও যেন সুন্দরভাবে ঢেলে সাজানো যায় তার সঠিক পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছে। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে সার্বিক দিক থেকে সবাই উপকৃত হবে। ড্যাপে ট্রানজিট ওরিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। ফ্লোর এরিয়ার রেশিও যে কথা বলা হচ্ছে সেখানে প্রশস্ত রাস্তা বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজধানী উন্নয়নের সার্বিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজউকের সক্ষমতা, জনবল বাড়াতে হবে। রাজউকের প্রতি বর্তমানে মানুষের বিশ্বাস বা আস্থা নেই। রাজউকের কাজের পদ্ধতি, গঠন বদলাতে হবে। নতুন আইনে রাজউককে ঢেলে সাজানো ছাড়া কোনভাবেই বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকার উন্নয়নে যে পরিকল্পনা করা হবে সেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। ফ্লোর এরিয়া রেশিও নিয়ে ড্যাপ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের নবযুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে যেখানে ব্যাপক পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়ন করা সম্ভব সেখানে ড্যাপ ফ্লোর এরিয়া রেশিও কম দিয়েছে। অন্যদিকে বেশি করে এফএআর দেওয়া হয়েছে। এটা তারা কেন করল, কোন স্বার্থে? সকলের অংশগ্রহণ ছাড়া কিন্তু উন্নয়নের কার্যকরী করা সম্ভব নয়।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email