স্বোপার্জিত শেখ হাসিনা

প্রকাশিতঃ 10:33 am | September 28, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

একমাত্র তিনিই। তার সমতুল্য কেউ নেই দেশের রাজনীতিতে। ছাত্রজীবনেই শানিত করেছেন নেতৃত্বগুণ। এক অন্ধকার রাতে পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। বিশেষ প্রয়োজনে দলের ও দেশের হাল ধরেছেন। ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারে পিদিমের আলো নিয়ে ছুটেছেন। বারবার মৃত্যুর দূয়ার থেকে জীবনের দিকে ফিরে এসেছেন। হেঁটেছেন পাথরবিছানো পথে অবিরাম। বাংলার দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর তাঁর প্রাণপাত ধারাবাহিক সংগ্রামের বয়স ৪১ বছর। গণমুখী আদর্শিক রাজনীতির অনন্য এক উপমা।

মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে একেবারেই ক্লান্তিহীন ইতিহাসের রাজকন্যা। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বিকল্প তিনিই। ধমনীতে পিতা মুজিবের রক্ত বলেই কীনা পরাজয়, পরাভব মানতে জানেন না। ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা’ পরিচয়ই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় গৌরবের। তাঁর চিন্তা, গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই সফল রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। তিনি অসীম সাহসের কাণ্ডারি। সঙ্কটে আলোকবর্তিকা। মহাকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

চারবার নিজ দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছেন। প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের কারিশমা দেখিয়েছেন। উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি, ১৮ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার অনন্য রেকর্ডও তাঁর ঝুলিতে। সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তিনি বিশ্বে সবচেয়ে বিচক্ষণ নেতা। বিশ্ববরেণ্য নেতাদের মধ্যে নিজেকে একজন দাপুটে নেতা হিসেবে উদ্ভাসিত করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে পশ্চিমা দুনিয়াও তাঁর নেতৃত্বের তারিফ করতে ভোলেন না।

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করেছেন। আমলে নেননি বিশ্বমোড়লদের রক্তচক্ষু। বিস্ময়কর উন্নয়নের স্বর্ণযুগে প্রবেশ করিয়েছেন দেশকে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থাপন করেছেন মাইলস্টোন। চমকে দিয়েছেন পশ্চিমা দুনিয়াকেও। কৃষিতে, প্রযুক্তিতে, বিদ্যুতে বা যোগাযোগে ঘটিয়েছেন বিপ্লব। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ করেছেন দেশকে। বিশ্বসভায় বসিয়েছেন মর্যাদার আসনে।

মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার সঙ্কট থেকে রক্ষা করেছেন বিশ্বকে। অনেক আগেই এ কারণে ব্রিটিশ গণমাধ্যম তাকে দিয়েছে ‘মানবতার মা’ উপাধি। শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল সান্তোস তাকে দিয়েছিলেন ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ অভিধা। আর ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে লিখেছিলো এমন- ‘শেখ হাসিনার হৃদয় বঙ্গোপসাগরের চেয়েও বিশাল, যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই।’

নিজেদের টাকায় আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতু নির্মাণ করে গোটা বিশ্বেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন একজন শেখ হাসিনা। জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুকরণীয় ও দৃষ্টান্ত গোটা বিশ্বেই। একেবারেই অপরিহার্য এবং অনিবার্য তাঁর নাম। সরকারপ্রধান থেকে রাষ্ট্রনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক থেকে তিনি বিশ্বনেতা।

আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তাঁর ৭৬ তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা। হৃদয়ের গালিচা থেকে আনন্দ পরিপ্লুত অভিনন্দন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারায় আপনিই বাঙালি জাতির ঐক্যের প্রতীক। আপনিই বিনির্মাণ করেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কবি হাসান হাফিজুর রহমানের মতো কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে-‘শেখ হাসিনা আপনিই তো বাংলাদেশ।’

দেশ এবং জাতির স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতিটি পদক্ষেপ দায়িত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দূরদর্শীতা এবং সুগভীর দেশপ্রেমের মাধ্যমেই অর্জিত। সাধারণত ক্ষমতা ও দুর্নীতি পাশাপাশি হাঁটলেও তিনি পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত। চারপাশে কোন সিন্ডিকেট নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ সরকারপ্রধানদের তালিকায় তাঁর অবস্থান তৃতীয়।

৭৫ বছর বয়সেও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ফিট, চাঙ্গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা টানা পরিশ্রম করতে পারেন। বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর ও পরিশ্রমী সরকারপ্রধান। রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের বিষয়েও তিনি সজাগ, সম্পৃক্ত। সবই তাঁর নখদর্পণে। দলের ভেতরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন নিতেও কার্পণ্য নেই তাঁর।

নিজের পরিবারের প্রতি, বারবার তাঁর প্রতি বীভৎস প্রতিহিংসার হিংস্র আঘাত এসেছে। এই যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি বোধহীন সমাজে কারও নেই। জখম যন্ত্রণা তীব্রতর হয়েছে হৃদয়ে। কিন্তু শেখ হাসিনা মানবিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ক্ষমাশীলতার এক প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রস্ফুটিত করেছেন।

রাজনীতিতে তাঁর এক সময়কার প্রধান প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মুজিবকন্যা। করোনা সঙ্কটে গোটা বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত তখন তিনি জীবন-জীবিকা দু’টোর ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। দৃঢ়চিত্তের প্রমাণ দিয়েছেন। অর্থনীতির চাকা সচল রেখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিশ্বনেতাদের। অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করতে কৌশলগত আর্থিক প্রণোদনার বন্দোবস্ত করেছেন। চলতি বছরের আগস্ট অবধি টিকা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ মানুষকে টিকা দিয়েছেন।

তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যার জন্য চা শ্রমিকরা চার আনা আট আনা করে জমিয়ে স্বর্ণের চুড়ি উপহার হিসেবে নিয়ে যান। তাদের হৃদয়গ্রোথিত আবেগ-ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি সেই চুড়ি পড়েন। দুই হাতে পরা চুড়ি দেখিয়ে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেন। অনন্য প্রধানমন্ত্রী আপনজনের মতোই বলেন, ‘আমার কাছে এটা হচ্ছে সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ। এত বড় সম্মান, এত বড় উপহার আমি আর কখনো পাইনি।’

বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেশের জনগণই তাঁর মূল শক্তি। জনগণের মঙ্গলের জন্যই তিনি রাজনীতি করেন। স্মার্ট বাংলাদেশে ভিশন ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে গভীরভাবেই মনোনিবেশ করেছেন। দুর্দমনীয় নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন দেশকে। গড়ে তুলেছেন উন্নয়নের ম্যাজিক হিসেবে। নিশ্চিত করেছেন সুশাসন। প্রতিষ্ঠা করেছেন নীতির রাজনীতি। হয়ে উঠেছেন সতের কোটি বাংলাদেশীর স্বপ্ন আর সাহসের প্রতিভূ।

কালের আলো/পিএম/এডিএস

Print Friendly, PDF & Email