বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের জন্য কাজ করেছেন : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 2:15 pm | August 01, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তার জীবনে ক্ষমতার কোনো লোভ ছিলো না। তিনি দেশের মানুষের জন্য আত্মত্যাগের নজির রেখে গেছেন।
সোমবার (১ আগস্ট) কৃষকলীগের স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমাদান কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি রক্তদানে সক্ষম ব্যক্তিদের রক্ত দেওয়া আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির আমলে মানুষ ভোট দিতে পারিনি। তাদের দলীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ব্যালট ছিনিয়ে নেয়। বিএনপির সন্ত্রাসীরা সিল মারবে, বাক্স ভরবে— এটাই ছিল নীতি। বিএনপির আমলে মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না। তাদের কাছ থেকেও কথা শুনতে হয়। নির্বাচনের কথা তারা বলে কোন মুখে?’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে দেশ কত এগিয়ে যায়, বাংলাদেশ আজ তার উদাহরণ। আওয়ামী লীগ এর বাস্তবায়ন করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে তারা ক্ষমতায় এসে মানুষের জন্য কী করেছে। বরং ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, পরে ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলে। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় দেশ। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুন-খারাবিতে ভরে যায়। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষার্থীদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে তারা।’
তিনি বলেন, ‘দেখলাম বিএনপির নেতারা হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে হবে। আর আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাস ও ইউক্রেনের যুদ্ধের পর পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে মূদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। সেখানে বাংলাদেশে মূদ্রাস্ফীতি তুলনামূলক কম। আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। কারও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে। বর্ডার গার্ড ও পুলিশ থেকে শুরু করে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি; যেখানে যতটুকু জমি আছে, যেন খাদ্য উৎপাদন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যেকটি পরিবার যেন সুখি পরিবার হয়। আমরা শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি। সাধারণ মানুষের জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবী জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এর অর্থ এই নয় যে লুটপাট হবে। লুটপাট তো বিএনপি করেছে। আমরা সেটা করিনি। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। লুটপাট করলে বাড়াতে পারতাম না।’
বিএনপির সমালোচনা করে ও দশ ট্রাক অস্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছে, একটা চালান ধরা পড়েছে, এরকম কত চালান এসেছে আর গেছে। দেশকে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল করা, দেশের মানুষের নিরাপত্তা সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করা, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, পাঁচ বার দুর্নীতিতে বাংলাদেশ এক নম্বরে ছিল, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এইতো ছিল, প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মেধাবি ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া এবং তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা, শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস করা, স্বাক্ষরতার হার আবার কমিয়ে সেই ৪৫ থেকে ৫০ ভাগে কমিয়ে আনা, এই তো দিয়েছিল বিএনপি।
জনসংখ্যা নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা এখন সাড়ে ১৬ কোটি। এই জনসংখ্যার হিসেবও কারো কারো পছন্দ হয় না। কেন? তাহলে তারা নিজেরাই সন্তান জন্ম দিক, আমরা খাবার দেবো। আমরা চাই, প্রতিটি পরিবার সুখী সমৃদ্ধ হবে। আমরা সে কাজটি করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। সকলে কাজ করবে। যেখানে যত খালি যায়গা, সেখানে উৎপানের কাজ করবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকেও এটি করতে হবে। পাশাপাশি দেশের মানুষকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর দেশের কী উন্নতি হয়েছে? চলে গেলো মার্শাল ল’তে। ক্ষমতা দখল করে কুক্ষিগত করা হলো। তারা ক্ষমতায় এসে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে। ইনডেমনিটি দেয়। জাতির পিতার খুনীদের রক্ষা করে। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় নিয়ে আসে। স্বাধীনতার চেতনা থেকে দেশকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সব আয়োজন করলো। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের চোর ডাকাত বানালো। দেশের মানুষ কী পেলো?
শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে দেশের যে উন্নতি হয়, এটা আজ প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক করে দেওয়াসহ নানা কাজ করেছি। বলতে গেলে ৯৬ থেকে ২০০১ সমৃদ্ধির সময় ছিল বাংলাদেশের। পরে তারা এসে কী করলো? ভিক্ষাবৃত্তি বা দেশকে পরনির্ভরশীল করেছে। দুর্নীতি, খুন খারাবি আর লুটপাট ছিল স্বাভাবিক চিত্র। ভোটের অধিকারই ছিল না মানুষের। বিএনপির সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়েছে। তাদের কাছ থেকেও কথা শুনতে হয়, নির্বাচনের কথা তারা বলে কোন মুখে?
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এমন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
কৃষকলীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
কালের আলো/পিএম/এনএল