বাংলাদেশ ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয় তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 5:46 pm | July 24, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জঙ্গিবাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) গঠন করা হয়। বাংলাদেশ যে ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়, তা সারা পৃথিবীতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। আর সে কারণে বাংলাদেশ সিরিয়া, ইরাক বা আফগানিস্তানে পরিণত হয়নি। যদিও উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।

রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখলাম অগ্নি সন্ত্রাস, গাড়ি ও বাসাবাড়িতে আগুন। সেখান থেকে যখনই আমরা কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করলাম, তখনই শুরু হলো নতুন অধ্যায় জঙ্গিবাদের। আমরা দেখলাম, ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজারকে হত্যা করা হলো। রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যা, পঞ্চগড়ে ইস্কন মন্দির ও বান্দরবানের বৌদ্ধ মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যা করা হলো। শিয়া মসজিদে হামলা হলো। মসজিদে বোমা ফাটানোর চক্রান্ত হলো।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, এসব ঘটনার পেছনে ছিল বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা। আইএস (ইসলামিক স্টেট) নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হলো। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলা হলো। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকলো। এর মধ্যেই হলি আর্টিসানে হামলা হলো। সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল, বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলাও করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নেই। সন্ত্রাস-জঙ্গিদের উদ্দেশ্য পালন করার একটা অপপ্রয়াস এখানে চলেছে। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ইমাম ও শিক্ষকদের সহযোগিতা এবং সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সাধারণ মাদ্রাসা এবং কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বুকে ‘আমরা জঙ্গিবাদ চাই না’ লেখা ব্যানার লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন পার্শ্ববর্তী দেশের (ভারত) মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীরাও আমাদের প্রশংসা করেন। আমরা কীভাবে পারলাম জঙ্গিদের নির্মুল করতে? আমাদের পুলিশ বাহিনী জীবন বাজি রেখে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন।

‘কোনো সময়ই ইসলাম জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামে বিনা কারণে গাছের ডাল ভাঙ্গারও বিধান নেই। সেখানে মানুষ হত্যার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে, তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।’

‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থটি শুধু বাংলা নয়, সব ভাষাতেই সম্পাদিত করা হোক। তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বুঝতে পারবে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই, যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।

এন্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজি মোঃ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার), শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গ্রান্ড ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। ধন্যবাদ জানান এটিইউ’র ডিআইজি মোঃ মনিরুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/বিএস/এমএন

Print Friendly, PDF & Email