স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ ‘উত্তীর্ণ’ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা

প্রকাশিতঃ 8:28 pm | July 13, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন ‘পবিত্র ঈদুল আজহার দিন রাত ১০ টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে।’ অনেকেই তখন ভেবেছিলেন মন্ত্রীর কথার কথা বলেছেন। কিন্তু ঠিকই মন্ত্রী নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করে কঠিন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়েছেন দেশের ১২ টি সিটি করপোরেশনের মেয়ররাই।

বিশেষ করে বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই পশুর বর্জ্য অপসারণে চমক দেখিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর পিতা। রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মেয়ররাও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ম্যাজিক দেখিয়েছেন। এতে করে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিজ নিজ নগরীর বাসিন্দারা। দক্ষ নেতৃত্বে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত কীভাবে দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে ইতিবাচক সাড়া ফেলতে পারে তাঁর একটি ধ্রুপদী উদাহরণই তৈরি করলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ১২ ঘন্টা সময় চেয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই মাত্র ৮ ঘন্টায় শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করে নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। বিভিন্ন টকশোতেও তাঁর কর্মযজ্ঞের প্রশংসা করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা।

ঈদের দিন সকাল থেকে নিজেই মাঠে ছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। ৬০০ গাড়িতে চার হাজার ২৬৭ ট্রিপে ১৯ হাজার ২২৩ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয় ছয় লাখ ১৫ হাজার পলি ব্যাগ। ৬০ টন ব্লিসিং পাউডার ও সেভলন বিতরণ করা হয়। ডিএনসিসির তিনটি ওয়ার্ডের ৯টি নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি হওয়ায় সর্বপ্রথম ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুপুরের মধ্যেই শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়। কঠিন এক অসাধ্য সাধন করে প্রশংসায় ভাসছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে তিনি পুরো কৃতিত্বই দিয়েছেন প্রাণের নগরবাসীকে।

মাত্র ১১ ঘন্টায় কোরবানির পশুর শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঈদের তিন দিনে তারা প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করে। এর আগে ১২ ঘন্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। কোরবানির পশুর হাট ও কোরবানির পশুর এসব বর্জ্য স্থানীয় মাতুয়াইল কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে অপসারণ করা হয়েছে। নগরবাসীর মাঝে বিতরণ করা হয় ৫ লাখ পচনশীল পলিব্যাগ ও ৫৩ টন ব্লিচিং পাউডার।

রাজশাহীর কোরবানির বর্জ্য ঈদের দিনই পরিষ্কার করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। এবারও ঈদের রাতে পুরো শহরের কোরবানির বর্জ্য সরানো সম্ভব হয়েছে। ১ হাজার ৩৭৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ঈদুল আজহার দিন সকাল ১০টা থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেন। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে রাখা হয় সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ৫৮টি স্থানে। বিকেলের মধ্যেই নগরীর পাড়া-মহল্লার বর্জ্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় শুরু হয় এসব জমানো বর্জ্য ট্রাকে করে ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়ার কার্যক্রম।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর ঐতিহ্য চত্বর সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর থেকে নির্ধারিত স্থানগুলো থেকে বর্জ্য সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৮টি ট্রাক ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে সেলিনা হায়াত আইভীর নেতৃত্বাধীন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। নগরীর সিদ্ধিরগঞ্জ, শহর ও কদমরসুল অঞ্চলের ২৭টি ওয়ার্ড সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করতে ১ হাজার ৬০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী একযোগে কাজ শুরু করেন। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়।

কয়েক বছর ধরেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিচ্ছন্ন ময়মনসিংহের অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে এবারও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশু ও পশুহাটের বর্জ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই অপসারণ করে করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ৩৩ টি ওয়ার্ডে পশু কোরবানির জন্য ৪৫০ টি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। এসব পয়েন্টে বর্জ্য সংগ্রহের বস্তা, ব্লিচিং পাওডার ও ফিনাইল সরবারহ করা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৬০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী একযোগে ঈদের দিন সকাল থেকেই কাজ শুরু করেন। বর্জ্য অপসারণে ২৪ টি ট্রাক, ১২৬ টি ভ্যান, একটি এসকাভেটর, দু’টি লোডার ও ৫ টি জীবানুশাক পানি ছিটানো গাড়ি ব্যবহৃত হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে কোরবানি পশুর বর্জ্য ৭ ঘণ্টার মধ্যে শতভাগ অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি জানান, রোববার ( ১০ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। বর্জ্য অপসারণ করার কাজে নিয়োজিত ছিল সিটি করপোরেশনের ৫ হাজার কর্মী ও ৩৪৫টি গাড়ি।

মাত্র চার ঘন্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করেছে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বাধীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)। ১০ জুলাই পবিত্র ঈদউল আযহার প্রথমদিন দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৪০ জন করে সর্বমোট ১২শ’ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী এই বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ২০টি ময়লাবাহী ও দুইটি পানিবাহী গাড়ি এই বর্জ্য অপসারণে কাজ করে। এছাড়া দূষণমুক্তকরনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ কেজি করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণে রেকর্ড গড়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক)। দ্রুততম সময়ে বর্জ্য অপসারণে সক্ষম হয়েছে কুসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। ফলে ঈদের পরদিন সকালেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগরী পেয়েছে নগরবাসী। বর্জ্য অপসারণে সার্বিক সহযোগিতা করায় নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কুসিকের নতুন মেয়র আরফানুল হক রিফাত।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (০৭ জুলাই) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে জাইকার কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউহো হায়াকাওয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পবিত্র ঈদুল আজহার দিন রাত ১০টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি।

মন্ত্রীর কার্যকর নির্দেশনা মোতাবেক কোরবানি পরবর্তী পশুর বর্জ্য অপসারণে সাফল্য দেখিয়েছেন নগর পিতারা। বর্জ্য অপসারণে তাদের পদক্ষেপে খুশি নিজ নিজ এলাকার নাগরিকরা। ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ না থাকায় ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়ানোও উপভোগ করেছেন তাঁরা। মূলত প্রতিটি নগর পিতার কঠোর তত্ত্বাবধান, নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এবার দ্রুত বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। মোদ্দাকথা, ‘টিম ওয়ার্ক’র মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা আরও একবার প্রমাণ করলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি।

কালের আলো/বিএস/এএএ

Print Friendly, PDF & Email