শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল; আরও একটি স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষা

প্রকাশিতঃ 10:09 am | July 02, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

করোনার কোন ঢেউয়ের ভেতরেও একদিনের জন্যও থমকে থাকেনি কাজ। সব বাধা সরিয়ে চলেছে মহাকর্মযজ্ঞ। দিন-রাত দুই শিফটে কাজ করছেন সাত হাজার শ্রমিক। আরও একটি স্বপ্ন ছুঁয়ে দিতে পার করছেন নিদারুণ ব্যস্ত সময়। 

তৈরি করেছেন দেয়াল আর পিলার। এগুলোর ওপর গড়ছেন টার্মিনালের অবকাঠামো। নকশা করা কালো স্টিলের পাত বসে গেছে পিলারের ওপরে। ক্রমশ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। 

চোখ ধাঁধানো অনন্য স্থাপত্যশৈলীতে ভরপুর এই থার্ড টার্মিনালের কাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এগিয়েছে ৩ শতাংশ। মোট শেষ হয়েছে ৪২ শতাংশ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেগা এই প্রকল্পের আশা জাগানিয়া অগ্রগতিতে নির্ভার আনন্দধারায় এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘টিম বেবিচক’। 

আগামী বছরের অক্টোবরেই এই থার্ড টার্মিনাল  উদ্বোধনের জোর প্রস্তুতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। মূলত এই মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে নব উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছবে বাংলাদেশ। ঘনিয়ে আসা একাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেও ভোটের মাঠে করে তুলবে ‘অপ্রতিরোধ্য’। 

সূত্র জানায়, স্বপ্নছোঁয়া এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। মোট খরচের সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি আর ঋণ হিসেবে জাপানের সংস্থা জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। 

পর্যাপ্তসংখ্যক এক্সেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট, রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কার পার্ক- থাকছে সব। সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে তৈরি হওয়া এই থার্ড টার্মিনালের মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। 

৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এই নতুন টার্মিনালে থাকবে ৬৩ হাজার স্কয়ার মিটার আয়তনের সর্বাধুনিক কার্গো ভিলেজ। ৩৭টি অ্যাপ্রোন পার্কিংয়ে এক সঙ্গে পার্ক করা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। টার্মিনাল ভবনের আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটার। 

শুধু তাই নয়, পুরো অবকাঠামো হবে পরিবেশবান্ধব। থাকবে পানির অপচয় রোধ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যবস্থা। সবুজ বৃক্ষরাজির সমারোহে বিমানবন্দরজুড়ে থাকবে প্রাকৃতিক আবহ।

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে ঝাঁ-চকচকে মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি মেট্রো স্টেশন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। 

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, তৃতীয় টার্মিনালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। পয়ঃশোধনাগারের ব্যবস্থা থাকবে উন্নত প্রযুক্তির। রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহৃত পানি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দিনে পুরো টার্মিনালে ব্যবহার করা হবে সূর্যের আলো। যেন স্বর্গের দুয়ার খুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত। 

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের মাধ্যমে বিশ্ব দেখবে নতুন এক বাংলাদেশকে। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় পাল্টে যাওয়া, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে অগ্রসরমান দেশের ভাবমূর্তিকেও করবে আরও উজ্জ্বল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর দিকনির্দেশনায় সম্মুখে থেকেই এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়ে মহাকাব্যিক অর্জনে আবেগ উদ্দীপ্ত ও দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে প্রকাশ করেছেন সেই উচ্ছ্বাস। 

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘বিমানবন্দর যে কোনো দেশের আয়না। একজন পর্যটক কোনো দেশে এলে বিমানবন্দর দেখে সে দেশকে প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন করে।  বিমানবন্দর আধুনিক হলে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন হলে দেশের অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক যোগ হবে।’ 

তাঁর চোখে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অহংকার। থার্ড টার্মিনাল মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবে দেশের। আশাবাদী উচ্চারণে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই প্রকল্পের কাজ ৪২ শতাংশ শেষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে কাজ। চলতি বছর আরও দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে যাবে। টার্মিনাল ভবনের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে এবং ভিতরের বিভিন্ন সংযোজনের কাজ চলছে। 

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ শেষ করে আগামী বছর অক্টোবরে থার্ড টার্মিনাল স্ট্রাকচারালি (কাঠামো) উদ্বোধন করা হবে। সব যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সবকিছু সংযুক্ত করে পুরো বিমানবন্দর ফাংশনিং করতে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। একটা বিমানবন্দর ফাংশনিং করতে অনেক কাজ থাকে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, আমরা তা পূরণে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

কালের আলো/এসবি/এএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email