সেই শিশু জান্নাতের আনন্দময় শৈশব ফিরিয়ে দিতে চায় পুনাক

প্রকাশিতঃ 12:40 am | May 26, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাঁর শিশু কন্যা জান্নাতের শৈশবের আহ্লাদ, স্বপ্ন। দেখতে দেখতে কেটেছে চার বছর। অথচ এই বয়সে জান্নাতের কোমল হাতে শোভা পাওয়ার কথা বই-খাতা কিংবা খেলার সরঞ্জাম। কিন্তু সে বয়সে এক পা হারিয়েছেন চিরতরে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে-বসে কাটছে যন্ত্রণাদগ্ধ সময়। নিজের কন্যার দু:খগাঁথায় হাউমাউ করে কাঁদেন দিনমজুর বাবা কয়েস আহমেদ।

কিন্তু শিশু জান্নাতের আনন্দময় শৈশব ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। শিশুটির কৃত্রিম পায়ের বন্দোবস্ত করা যায় কীনা এ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-পরামর্শ করেছেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা।

বুধবার (২৫ মে) রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জান্নাতকে দেখতে যান তিনি। উপহার হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যান পুতুল, চকলেট আর নতুন পোশাক। এর আরও আগেই তিনি নিভৃতে আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন জীবন যুদ্ধে বিপর্যস্ত অসহায় পরিবারটিকে।

আইজিপি পত্নীর হৃদয়গ্রোথিত এমন আবেগ-ভালোবাসায় আনন্দ যেন বাঁধ ভাঙে জান্নাতের বাবা-মা’র। নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে জান্নাতও। যেকোনভাবে অন্য দশটি শিশুর মতোই নিজের পায়ে ভর করে হাঁটতে চায়। হাসপাতালের চার দেয়ালের বন্দি জীবন থেকে খেলার মাঠে ছুটোছুটি করতে চায়। ফলত এই বয়সে কৃত্রিম পা সম্ভব হবে কীনা সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

শিশু জান্নাতের বাড়ি সিলেটের জৈয়ন্তা থানার চিকনাগুল গ্রামে। বছর চারেক আগে সিএনজিতে বাড়ি ফেরার পথে পুরো পরিবার এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। ট্রাকের ধাক্কায় তাদেরকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মুহুর্তেই ছোট্ট জান্নাতের ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। সেই থেকেই তাকে ক্র্যাচে ভর করে চলতে হয়, মাদ্রাসায় যেতে হয়।

গণমাধ্যমে নিজের পায়ে হাঁটতে জান্নাতের আকুতি দাগ কাটে পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার হৃদয়ে। মানবতার বিজয় কেতন ওড়ানো পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদ’র প্রিয়তমা স্ত্রী সব সময়ই সাধারণের জীবনঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তাদের যাপিত জীবনের সমস্যা ও সঙ্কট সমানুভূতিতে অনুভব করেন।

তাঁর আটপৌরে সত্তা ও বাস্তববোধের প্রয়োগে নিজ সংগঠনের সীমিত সাধ্যের ভেতরেই মানবিকতার অর্জনের সোপানে সতত অগ্রসরমান করেছেন পুনাককে। আবদ্ধ করেছেন মায়ার বন্ধনে। মায়ের আদরে, বোনের স্নেহে উদ্ভাসিত করেছেন নিজেকেও। এটিই যেন তাঁর জন্য বড় এক মানসিক তৃপ্তি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, একই দিনে পুনাক সভানেত্রী একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গ্যালারিতে থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে উৎসাহদানকারী টাইগার মিলনকেও দেখতে যান। টাইগার মিলনও ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। পুনাক সভানেত্রী এর আগেও টাইগার মিলনকে দেখতে গিয়েছেন, তাকে আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন।

পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পুনাক সভানেত্রী বলেন, জান্নাতের কথা পত্রিকায় পড়ার পর আমরা পুনাক থেকে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। মেয়েটি কৃত্রিম পা হলেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। চিকিৎসকরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমরা টাইগার মিলনকেও দেখে এসেছি। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

পুনাক পুলিশ কর্মকর্তাদের স্পাউজদের একটি সংগঠন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গতানুগতিকতা ও নিজস্ব গন্ডির বাইরে বেরিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পুনাক। এ প্রসঙ্গে তিনি যশোর রেলওয়ে স্টেশনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা শাহজাহান, পায়ে পচন নিয়ে ফুটপাতে দিন কাটানো খোকনের মত আরও অনেকের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করেন।

টাইগার মিলন ও জান্নাতকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতায় পুনাক ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বলে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি রখফার সুলতানা খানম, পুনাকের স্বাস্থ্য সম্পাদিকা ডা. প্রথমা রহমান এবং হাসপাতালে চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/বিএস/এমএইচ

Print Friendly, PDF & Email