মানুষের মুক্তি আর সাম্যের জয়গানে স্বতন্ত্র নজরুল : তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 8:21 pm | May 25, 2022

কুমিল্লা প্রতিবেদক, কালের আলো:

মানুষের মুক্তি আর সাম্যের জয়গানে কাজী নজরুল ইসলামকে স্বতন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা অন্য কবিদের সাথে কাজী নজরুল ইসলামের পার্থক্য হচ্ছে, তিনি মুক্তির পক্ষে, সাম্যের পক্ষে, নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলেছেন। তার কবিতা ও গান মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। কবিতা লেখার কারণে তাকে বারংবার কারাগারে যেতে হয়েছে, তার কবিতা ও গান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেকারণে তার সাহিত্যকর্ম তাকে অনন্য করেছে, সেজন্যই কাজী নজরুল ইসলাম অন্য কবিদের থেকে স্বতন্ত্র।

বুধবার (২৫ মে) দুপুরে কুমিল্লার নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্রা জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সিমিন হোসেন রিমি, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার, সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নান, সংস্কৃতি সচিব মো: আবুল মনসুর, নজরুল গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, কবি নজরুলের পৌত্রী মিষ্টি কাজী এবং খিলখিল কাজী, কুমিল্লার ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ প্রমুখ সভায় বক্তৃতা দেন। সভাপতি ও অতিথিদের সাথে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি যে কবি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তিনি হচ্ছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। অন্য কবিদের চাইতে নজরুলের স্বাতন্ত্র হচ্ছে, অন্য কবিরা কবিতা লিখেছেন, সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু কাজী নজরুল শুধু সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেছেন তা নয়, তিনি মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে তিনি ত্বরান্বিত করেছেন। একজন কবি যে মানুষকে উদ্দীপ্ত করতে পারে, মুক্তিকামী মানুষকে সাহস জোগাতে পারে, মানুষকে যে বিদ্রোহী করতে পারে, সেটির প্রমাণ হচ্ছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।’

‘একইসাথে দ্রোহ, মুক্তি, সাম্য ও সম্প্রীতির কবি নজরুল যখন বাংলা তথা ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক হানাহানি চলছিলো, তখন সম্প্রীতির মন্ত্র উচ্চারণ করে লিখেছেন- মোরা একই বৃন্তেদু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান, মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তার প্রাণ’ স্মরণ করেন ড. হাছান।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগে বাঙালি জাতির পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির জন্য কোনো রাষ্ট্র কখনো রচিত হয়নি। বাংলা ভাষাভাষি কিছু কিছু এলাকা নিয়ে বিভিন্ন সময় স্বাধীন রাজা ছিলো কিন্তু কোনো স্বাধীন রাজ্য বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালিকে জাগ্রত করেছেন এবং এ জন্য কাজী নজরুল ইসলামের কাছ থেকেও তিনি মুক্তির পক্ষে, সাম্যের পক্ষে কথা বলার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন, অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সেই কারণে বঙ্গবন্ধু মুজিব ১৯৭২ সালে ইন্দিরা গান্ধীকে বলে কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।’

‘আজকে যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্র রচিত না হতো, তাহলে বাংলা ভাষা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো জানা নেই’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ক’দিন আগে আমি শিলিগুড়ি আর কলকাতা গিয়েছিলাম, সেই সবখানে ইংরেজি এবং হিন্দিতে সাইনবোর্ড, শতকরা পাঁচ বা বড়জোর দশ ভাগ সাইনবোর্ড দেখেছি বাংলায়। যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্র রচিত না হতো, আজকে আমরা যেভাবে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছি, এভাবে কি করতে পারতাম! এজন্য আমি জাতীয় কবির পাশাপাশি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি, গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’ অনুষ্ঠানস্থল কুমিল্লাকে কবি নজরুল ইসলামের বহু স্মৃতিবিজড়িত বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কবি নজরুল বারবার কুমিল্লায় এসেছেন, কান্দিরপাড়ের একটি বাসায় উঠতেন তিনি। নার্গিসকে নজরুলের কালজয়ী গানের পটভূমি এবং সেই নার্গিসের বাড়ি ছিলো কুমিল্লায়।’

এ সময় রাজনৈতিক প্রসঙ্গে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘আসলে বিএনপিকে নির্বাচন ভীতি পেয়ে বসেছে। সেজন্য তারা সংসদ নির্বাচনও করতে চায় না, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশনসহ কোনো নির্বাচনেই তারা অংশ নিতে চায় না। আশা করি তারা নির্বাচন ভীতি কাটিয়ে উঠবে এবং দলকে নির্বাচনমুখী করবে।’

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘কবিতার ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ এক অনন্য সাধারণ রচনা। এক রাতেই তিনি বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যের অনবদ্য এ কবিতাটি রচনা করেছেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নজরুল রচনা করেন ১৪১ পঙক্তির এই ভুবনবিজয়ী কবিতা যার প্রথম শ্রোতা ছিলেন মুজাফফর আহমদ।’

কালের আলো/ডিএস/এমএম

Print Friendly, PDF & Email