শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা উচিত: পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 10:06 pm | April 23, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দেশের শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়াতে হবে। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষা খাতে বাজেট কম। এজন্য এ খাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা উচিত।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর একটি অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে ‘শিক্ষার বাজেট, বাজেটের শিক্ষা: শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, কোথায় আছি আমরা?’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, আমি এক বাক্যে স্বীকার করি শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা উচিত শিক্ষাখাতে। আমি একজন পরিসংখ্যান সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করি। সারাদেশের তথ্য সংগ্রহ করি। তারপর সেসব তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করতে চেষ্টা করি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন। আমরা অনেক কিছুই ভাবী কিন্তু বাস্তবায়ন হয় কম। তবে শিক্ষা নিয়ে আমি বলবো। আমি এটা নিয়ে বারবার কথা বলি সংসদে। সামনে আরও বেশি করে বললো। যেন শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো হয়।

স্বাগত বক্তব্যে ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এ বছরের বাজেট হয়ে গেছে। আমরা আগামী বাজেট ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলবো। আমরা জানি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজেট হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা না বলেই এটা হয়। শিক্ষার বাজেট হয় অথচ প্রাইমারি শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কথা না বলেই বাজেট হয়। বাজেটে শিক্ষায় বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। বাজেটে শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে অপুষ্টি দূর হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, শিক্ষা এমন একটা বিষয় এটা নিয়ে সারা বছর আলোচনা করা যায়। শুধু আসন্ন বাজেটে শিক্ষা নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। আমাদের সব অর্জন সঠিকভাবে পেতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। করোনা সংকটে শিক্ষা অনেক ব্যাহত হয়েছে। সুতরাং এখাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।

তিনি বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি। অনেক মেয়েদেরই এসময়ে বিয়ে হয়ে গেছে। কোভিড-১৯ শিক্ষাখাতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এ ক্ষতি কাটাতে এই উদ্যোগ অনেক কাজে দেবে।

গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক বলেন, রাজধানীর ক্লাস ফাইভের বাচ্চার কথাবার্তা আর গ্রামের ক্লাস দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর কথাবার্তা অনেক আলাদা। উপবৃত্তির টাকা প্রভাবশালী আর চেয়ারম্যানদের বাচ্চারাই পায়। পৌরসভার মেয়রদের দুই কোটি টাকা দামের গাড়ি দিচ্ছি। তাহলে প্রাথমিকে ১২৫ টাকা উপবৃত্তি দিয়ে কীভাবে চলে?

সিপিডি রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, শিক্ষা সব জায়গায় একটা প্রায়োরিটি সেক্টর হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে বাজেটের খরচের দিকে তাকালে দেখা যায় তা সাংঘর্ষিক। বাজেট যদি বাড়ানো না হয় তাহলে শিক্ষায় উন্নয়ন হবে কীভাবে। আমরা গত বছরগুলো থেকে যদি দেখি তাহলে দিনদিন শিক্ষায় বাজেট বাড়ার চেয়ে কমছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হারের দিকে তাকালে আশঙ্কা থেকে যায়। দুবছর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এটা অনেকটাই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। আসছে বাজেটে শিক্ষার ঝুঁকি কাটাতে যেমন ভূমিকা রাখতে হবে তেমনি সেগুলো কাটিয়ে উঠার ওপরও বিশেষ নজর দিতে হবে।

শিক্ষা আইন প্রণয়ন ছাড়া শিক্ষানীতি অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, শিক্ষা নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। শিক্ষা নীতিতে অনেক কিছুই আছে যা বাস্তবায়ন হয়নি এখনো ও শিক্ষা আইন ছাড়া করা সম্ভবও নয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সরকার বলেছে শিক্ষা আইন করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আড়াই বছর চলে গেলেও সেই আইন আর হয়নি। কবে নাগাদ হবে তা জানতে ইচ্ছে করছে। শিক্ষা আইন ছাড়া শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ বীরা মেন্ডোরা বলেন, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত আধুনিক রাষ্ট্র। তবে এ দেশের শিক্ষার মান ও ব্যবস্থা উন্নত বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো এ দেশের গ্রামীণ পর্যায়ে শিক্ষার মান এতোটা উন্নত নয়। এর ফলে এই দেশে অনেক মেধাবী থাকা সত্ত্বেও তারা সেভাবে তৈরি হতে পারছে না। তাই শিক্ষায় বাজেট বাড়িয়ে তাদের সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া গেলে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়া সম্ভব।

সেমিনারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষাবঞ্চিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান।

এ সময় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- এডুকেশন পলিসি ২০১০ ফরমুলেশন কমিটির সদস্য প্রিন্সিপাল কাজি ফারুক আহমেদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন হান্স লেমব্রেছট, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ইনচার্জ এইচ ই জাবেদ প্যাটেল, কমিটি অন গভর্নমেন্ট অ্যাসুরেন্স বাংলাদেশ সংসদের সদস্য এরোমা দত্ত এমপিসহ আরও অনেকে।

কালের আলো/এমএইচ/জেআর

Print Friendly, PDF & Email