পছন্দের উর্ধ্বে উঠে সশস্ত্র বাহিনীতে উপযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 6:08 pm | September 07, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে উপযুক্ত কর্মকর্তাদের সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রজ্ঞা, বিচার-বুদ্ধি ও ন্যায়পরায়ণতার ওপর নিজের পূর্ণ আস্থার কথাও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: সামরিক অভিধান থেকে ‘মার্শাল ল’ শব্দটি বাদ দিন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘আপনারা ন্যায়নীতির ভিত্তিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই প্রমোশন দেবেন। যাতে সবার ভেতরে একটা আস্থা আসে। আমি জানি অনেকে উপযুক্ত, তবে সবাইকে দেওয়া যায় না। কারণ পদটা সীমিত। তারপরও আপনারা অবশ্যই দেখবেন যারা সত্যিকার উপযুক্ত তারা যেন প্রমোশন পায়। ’

সোমবার (সেপ্টেম্বর ৭) গণভবন থেকে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাসদর, নৌবাহিনী সদর দপ্তর ও বিমান বাহিনী সদর দপ্তরের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এমডিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ সদর দপ্তর থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন এবং প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

সশস্ত্র বাহিনীর পদোন্নতি পর্ষদের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উধর্¡তন কর্মকর্তারাও ভিডিও টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অভূতপূর্ব ও যুগান্তকারী সব পদক্ষেপের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

একই সঙ্গে পদোন্নতির ক্ষেত্রে উন্নত পেশাগত মান, যোগ্যতা, শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের বিষয়টিও তিনি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মূল্যবান দিক নির্দেশনা সশস্ত্র বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও সেনাপ্রধান মন্তব্য করেন।

এ সময় সেনাবাহিনীর আর্টডকের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হক, চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) মো.শফিকুর রহমানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সশস্ত্র বাহিনী পর্ষদের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন একটা সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্যে সবদিকে নজর রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে সব ধরনের প্রশিক্ষণ তারা পায়।’

সশস্ত্র বাহিনীর পদোন্নতিতে ব্যবহৃত আধুনিক পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে যেমন সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ ট্রেস ট্যাবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারেটিভ ইভালুয়েশনের মাধ্যমে কারা প্রমোশন পাওয়ার উপযুক্ত, সেই দক্ষতা কার কতটুকু আছে তার তুলনামূলক মূল্যায়ন করে আপনারা সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে এটুকু দেখতে হবে শুধু খাতা-কলমে বেশি নম্বর পাওয়া না, যারা ফিল্ডে ভালো কাজ করতে পারে, কমান্ড করতে পারে বা নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে কিনা বা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ক্ষমতা আছে কিনা সেগুলো আপনাদের বিচারে আনতে হবে। ’

সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী নিশ্চয়ই তাদের আদর্শ নিয়েই চলতে হবে।

দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী হবে তারাই যেন দায়িত্ব পায়। যাতে সঠিক পথে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সশস্ত্র বাহিনী যারা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক তাদের সম্মানটা বজায় রেখেই আমাদের সেই চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে সেটা আপনারা দেখবেন।’

যেসব অফিসার সামরিক জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছেন পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের আপনারা অবশ্যই বিবেচনা করবেন, এমন আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেটা আমি চাই। আর যে কোনো একজন অফিসার বা কর্মকর্তা তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের পেশাগত মান, যোগ্যতা ও দক্ষতা- এটা বিবেচ্য বিষয় হবে সেটা অগ্রাধিকার আপনারা দেবেন।

দক্ষতার সঙ্গে শৃঙ্খলা-সততা-বিশ্বস্ততার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেহেতু একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী, এই সুশৃঙ্খল বাহিনীতে যারা পদোন্নতি পাবে তারা সব সময় একটা শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে পারে। কারণ শৃঙ্খলাটাই হচ্ছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে।’

‘কাজেই শৃঙ্খলা সম্পর্কে যারা যথেষ্ট সচেতন, অনুগত, তারা যেমন উপরে যারা থাকবে তাদের প্রতি অনুগত থাকবে আবার অধনস্তনদের ব্যাপারে দায়িত্ববান হবে। এই বিষয়টাও দেখতে হবে, তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বসম্পন্ন হতে হবে ’ যোগ করেন বঙ্গকন্যা।

সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য যদি না থাকে তাহলে কখনো ভালো লিডার হতে পারে না এমনটিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য না থাকলে ভালো দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে না। কাজেই সেটা অত্যন্ত জরুরি। সেদিকে আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন যারা সৎ, ভালো গুণাবলীসম্পন্ন তাদের।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বোর্ডে বসে আপনাদের উপযুক্ত যারা তাদের নিয়ে আসবেন। যাতে আগামী দিনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আরও সুদক্ষ হয়। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় এবং আমরা যেন সব সময় গর্ববোধ করতে পারি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে সেভাবে গড়ে তুলবেন সেটাই আমরা চাই।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনা বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ ১১ সেপ্টেম্বর এবং বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। এ নির্বাচনী পর্ষদের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন থেকে কমডোর, কমান্ডার থেকে ক্যাপ্টেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার থেকে কমান্ডার পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত হবে। পাশাপাশি এ পর্ষদের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন থেকে এয়ার কমডোর, উইং কমান্ডার থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লীডার থেকে উইং কমান্ডার পদে যোগ্য প্রার্থীদের পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দের সমন¡য়ে গঠিত এ পর্ষদের মাধ্যমে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ অফিসাররা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পদোন্নতি পাবেন।

কালের আলো/এমকে/এমএএএমকে